পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪০৪

পাকিস্তানী সেনা ঢাকা জেলার পশ্চিমাংশে পদ্মা তীরবর্তী আরিচাঘাট, শিবালয় প্রভৃতি স্থানে জমায়েত হয়। এ খবর বাংলাদেশের। দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের কমাণ্ডের মুক্তিফৌজ সদস্যরা ফরিদপুরের কাছে পদ্মার তীরে বাঙ্কার তৈরী করে সারারাত ধরে পাহারা দেয়। পাকিস্তানী সৈন্যদের জলপথে সেনা জমায়েত এই প্রথম হওয়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে আরো একটি নতুন যুদ্ধফ্রণ্ট পদ্মা নদীর উত্তর দিক বরাবর এবং দক্ষিণ তীরের কিছু অংশে গড়ে উঠলো।

 আজ সকালে পাকিস্তানী সৈন্যরা ঢাকা জেলার আরিচাঘাট ও শিবালয় থেকে গোয়ালন্দ ও নগরবাড়ীর দিকে নদী অতিক্রম করে বারবার যাবার চেষ্টা করে। নদী পারাপার কালে পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে মুক্তিফৌজের দীর্ঘ লড়াই হয়। সারাদিন লড়াইয়ের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী যমুনা নদী পার হয়ে নগরবাড়ীতে নামতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কমাণ্ডের সদর দপ্তর চুয়াডাঙ্গায় রাতের দিকে খবর আসে গোয়ালন্দের তীর বরাবর ফরিদপুরের দিকে পাকিস্তানী সেনারা এগুতে থাকলে বাংকারের ভেতর থেকে মুক্তিফৌজ আপ্রাণ চেষ্টায় তাদের অগ্রগতিকে প্রতিহত করেন। নদী পারাপারের সময়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা মর্টার ও বিমানের সাহায্য নেয়। কিন্তু এত চেষ্টা সত্ত্বেও তারা গোয়ালন্দের দিকে নামতে সক্ষম হয়নি।

যুগান্তর, ১০ এপ্রিল, ১৯৭১

হৃত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে মরিয়া পাক-বিমান

শহরে শহরে মুক্তিসেনার প্রতিরোধ

 অদম্য মুক্তিফৌজের প্রবল প্রতিরোধের ফলে পাক সেনাবাহিনী দিশেহারা। এখন বর্ষার আগে শেষ ভরসা শুধু আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ। স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিফৌজ যে সমস্ত এলাকা দখল করে নিয়েছিল, তার কিছু কিছু অংশ পুনদর্খলের মরীয়া চেষ্টায় এদিন পাকস্থলবাহিনীকে অবিরাম মদত দিয়েছে বিমানবাহিনী।

 মুক্ত শহর রাজশাহীতে শুক্রবার পর্যন্ত মোট গোলাবর্ষণ হয়েছে ১৫ বার। লক্ষ্যস্থল ঠিক না রেখে হানাদার বিমান এলোপাতাড়ি বোমা ফেলেছে রংপুর, শ্রীহট্ট, দিনাজপুর, ফেনী, হরিপুর, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া এবং আরও কয়েকটি জায়গায়। তৎপর মুক্তিফৌজের তাঁরা বিশেষ ক্ষতি করতে পারেনি, তবে অসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে নিহতদের সংখ্যা অনেক।

 ঢাকা থেকে শুরু হয়েছে দ্বিমুখী আক্রমণ। শহর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে মানিকগঞ্জের দিকে একটি সেনাদলকে অগ্রসর হতে দেখা গেছে। আর একটি সেনাদল ময়মনসিংহের দিকে। উদ্দেশ্য, নদীপথে পুরো দখল রাখা। টাঙ্গাইলের উত্তরে একটি সেনাদলকে আক্রমণ করেছে মুক্তিফৌজ। শেষ খবরে জানা যায়, সেখানে লড়াই চলছে তুমুল।

 পাবনায় আরেকটি বড় রকমের সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। যমুনা পেরিয়ে পাবনা অভিমুখী একটি পাকসেনাদলের গতি আটকে দিয়েছে মুক্তিবাহিনী। স্বাধীন বাংলা বাহিনীর দক্ষিণে-পশ্চিমে এলাকার পরামর্শদাতা ডঃ আশাবুল হক জানিয়েছেন যে, ঐ অঞ্চলে পাক স্থলবাহিনীকে সাহায্য করছে নৌজাহাজ ও বিমান-গোলাবর্ষণে, বোমাবর্ষণে। কিন্তু মুক্তিফৌজ অস্ত্রশক্তিতে হীনবল হয়েও হানাদারদের গতি রুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।

 দিনাজপুরে প্রবল সংগ্রামের খবর আছে, এই শহরটি পুনর্দখল করার জন্য পাকফৌজ ট্যাংক আমদানি করেছে। রংপুরে অবশিষ্ট সৈন্যবাহিনীকে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করার জন্য চতুর্দিক থেকে আক্রমণ চালিয়েছে মুক্তিফৌজ। আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা যায়, এই এলাকার সবটাই এখন মুক্তিফৌজের দখলে। কুষ্টিয়ার জঙ্গলগাছিতে পাকফৌজ নতুন করে আক্রমন চালিয়েছে।

 কুমিল্লাঃ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব খণ্ডে কুমিল্লা শহর ও ক্যাণ্টনমেণ্ট প্রচণ্ড লড়াই চলছে। বিমান বন্দরটি এখন হানাদারদের দখলে। ঢাকা থেকে তাই রোজ সৈন্য আসছে। আসছে খাবার-দাবার। কুমিল্লা থেকে