পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪০৫

পাকসৈন্য জাঙ্গালিয়া রোড ধরে চাঁদপুরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হয়ত তারা নদী ধরে কুমিল্লা যাওয়ার পথটি আবার চালু করার জন্য নতুন করে চেষ্টা চালাবে।

 কুমিল্লা শহর থেকে কয়েক হাজার অধিবাসী পালিয়ে গিয়েছে। পাকসৈন্যরা অবাধ্য অধিবাসীদের শায়েস্তা করতে ওই অঞ্চলে আগুন জ্বালিয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজীপুর, বিবিরবাজার ও তরুণপুর।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০ এপ্রিল, ১৯৭১

কামানে বিমানে আগুয়ান হানাদার বাহিনী বনগাঁ সীমান্তের কাছাকাছি

 নাভারন (যশোর), ১০ এপ্রিল-আজ ভোরের দিকে পাকিস্তানী ফৌজ যশোর দুর্গ থেকে বেরিয়ে সাঁজোয়া বাহিনী নিয়ে এগোয়। মুক্তিফৌজ তাদের প্রবল বাধা দেয়। হানাদাররা কামান, মেশিনগান, মর্টার নিয়ে আক্রমণ চালাতে থাকে। দু’খানা জঙ্গী বিমানও ছাতার মত তাদের উপর মাথায় উপর দিয়ে পাহারা দিয়ে যায়। বোমাও ফলে মুক্তিফৌজের লক্ষ্য করে। মুক্তিসেনারাও তার পাল্টা প্রতিরোধের জোর করে। পাকসেনারা তখন গ্রামের পর গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাদের অত্যাচারে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়ের আশায় ছোটেন। দখলদার বাহিনী এরপর ঝিকরগাছা পর্যন্ত এগিয়ে কামান দাগতে থাকে। তারপর হানা দেয় সীমান্তের কাছাকাছি। আগের দিন সন্ধ্যায় পাকিস্তানী সৈন্যরা পিছু হটে যাওয়ার পর মাঝেমাঝে গুলির আওয়াজ ছাড়া রাতে দুই তরফে সামনা-সামনি লড়াই হয়নি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির পর আজ আবার রণাঙ্গন মুখর হয়ে ওঠে। তখন ভোর সারে চারটা। কামান গর্জন করতে থাকে। মর্টারের গোলার ঘন ঘন আওয়াজ এপার থেকে স্পষ্ট শুনতে পাওয়া যায়। এরপর পাকিস্তানী সৈন্যরা তিনটি লাইনে ঝিকরগাছার দিকে এগোতে থাকে। মাঝের লাইন থাকে যশোর রোডে। আর বাঁ দিকে পাশের রেলপথ বেয়ে এবং ডানদিকে মাঠের মাঝ দিয়ে দুটি লাইনে হানাদাররা হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে থাকে। পাকিস্তানী সেনাদের সারবদ্ধ এই অগ্রগতির আকার ইংরেজি ‘ভি’-এর মত।

দিনাজপুর শহরের কাছে প্রচণ্ড লড়াই

 নগরবাড়ি (ঢাকা-পাবনা-বগুড়া রোড) সন্ধ্যার পর দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি সামরিক বাহিনী দখল করে নিয়েছে। প্রচণ্ড লড়াই চলছে। পাক সামরিক বাহিনী ট্যাংকও ব্যবহার করছে। বহু লোক হতাহত হয়েছে। পাক সামরিক বাহিনী বিহারী মুসলমানদের রাইফেলস দিয়ে কাজে লাগাচ্ছে।

 দিনাজপুর শহরের তিন মাইল দূরে রাণীগঞ্জে পাক সামরিক বাহিনী এসে গিয়েছে। মুক্তিফৌজ প্রচণ্ড বাধা দিয়ে যাচ্ছে। শহরের দক্ষিণে আত্রাই নদী পার হয়ে এখন কাঞ্চন নদীর তীরে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। পাক বাহিনী তিনটি রেজিমেণ্টই ব্যবহার করছে। গতকাল রাত্রে পাবনায় ছয় পাউণ্ড ওজনের মর্টার ব্যবহার করেছে। এখানে ঢাকা-পাবনা রোডের উপর এখনও যুদ্ধ চলছে।

 পদ্ম নদীতে জলযুদ্ধঃ গৌহাটি, ১০ এপ্রিল-খুব বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া সংবাদে প্রকাশ, পাবনা শহরকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য পদ্মা নদীতে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। দ্বিতীয় দিনের এই জলযুদ্ধে একদিকে মুক্তিফৌজের দেশী দ্রুতগামী নৌকা আন অন্যদিকে পশ্চিম পাকসৈন্যর গানবোট।

 পূর্ব রণাঙ্গনে পাক আক্রমণঃ আগরতলা, ১০ এপ্রিল-ছাউনিতে বন্দী পাক সেনাদল মুক্তিযোদ্ধাদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পূর্ব রণাঙ্গনের এক বিরাট এলাকায় নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। সর্বশেষ যে খবর পাওয়া গিয়েছে, তাতে জানা যায় যে, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং শ্রীহট্ট প্রচণ্ড লড়াই চলছে।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ১১ এপ্রিল, ১৯৭১

হারাগাছ ও তিস্তা সেতু এলাকা মুক্তিফৌজের হাতে এসেছে

 উত্তরাঞ্চলের কোন স্থান, ১০ই এপ্রিল-গত রাত্রে নতুন করে আক্রমণ চালিয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী তীব্র লড়াইয়ের পর হারাগাছ এবং তিস্তা সেতু এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলে এনেছে। পাকহানাদাররা এই যুদ্ধে