পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪০৬

দু’কোম্পানী সেনা নিয়োগ করেছিল, তারা এখন মৃত ও আহত সেনাদের ফেলে রংপুর ক্যাণ্টনমেণ্টের দিকে চম্পট দিয়েছে। মুক্তিফৌজ এই যুদ্ধে কিছু অস্ত্রশস্ত্র, একটি জীপ এবং রসদও দখল করেছে।

 হারাগাছ ও তিস্তা সেতু অঞ্চল মুক্তিফৌজের দখলে আসায় রংপুর লালমনিরহাট ক্যাণ্টনমেণ্ট দুটির মধ্যে সরবরাহ পাঠাবার পথ বিছিন্ন হয়ে গেছে। পাক হানাদারদের এখন বিমানে সরবরাহের উপর নির্ভর করতে হবে।

 রংপুর ক্যাণ্টনমেণ্টকে সম্পূর্ণ বিছিন্ন করার উদ্দেশ্য মুক্তিফৌজের সেনারা ছোট দলে ভাগ হয়ে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ দুটি রেল সেতু ও একটি চলাচলের সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সেতুগুলি রংপুরের সঙ্গে কুড়িগ্রামের যোগাযোগ রক্ষা করতো।

 মুক্তিফৌজের অতর্কিত আক্রমণঃ ইয়াহিয়া বাহিনীর একটি দল কয়েকটি ট্রলিযোগে লালমনিরহাট থেকে মোগলহাটের দিকে অবস্থা পর্যক্ষেণ করতে যাচ্ছিল, পথে মুক্তিফৌজ আচমকা দলটির ওপর হানা দিয়ে কয়েকজন হানাদারকে খতম করে, বাকী হানাদাররা লালমনিরহাটের দিকে পালায়।

 আত্মবলি দল গঠিতঃ আরও আশার কথা মুক্তিফৌজ এই অঞ্চলে ছোট ছোট আত্মবলি দল সংগঠন করেছে। এই দলগুলি ইতিমধ্যেই শত্রু-অধিকৃত এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই আত্মবলি দলগুলির নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেও সক্ষম হয়েছে। মুক্তিফৌজ এসব এলাকা সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্য কুড়িগ্রামের দিকে পথে পথে পরিখা খনন করছে। মুক্তিফৌজের কাছে খবর এসেছে যে, রংপুরের দিকে আগুয়ান পাক হানাদার বাহিনী রংপুর ক্যাণ্টনমেণ্টের ওপর মুক্তিবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণ আটকে দিতে পারে।

 প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, শেখ মুজিবের মুক্তিবাহিনী গত বৃহস্পতিবার রাত্রে ভারী মর্টার চালিয়ে হারাগাছ ও তিস্তা সেতু এলাকায় আক্রমণ শুরু করে, কিন্তু শত্রু বিমানাক্রমণের আশঙ্কায় শুক্রবার ভোরের দিকে জঙ্গলে আত্মগোপন করে।

 হারাগাছ হচ্ছে তিস্তা নদীর একটি ফেরীঘাট, এটি সামরিক দিক থেকে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছুদিন আগে লালমনিরহাটের ক্যাণ্টনমেণ্টের শক্তি বৃদ্ধির জন্য এই ফেরীঘাট দিয়ে পাকসেনা রংপুর থেকে যায়।

 রংপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর দলগুলির মধ্যে এখন যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে। মুক্তিফৌজ এ অঞ্চলে প্রথম দিকে যে রকম দিশেহারা হয়ে পড়েছিল, এখন সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। মুক্তিবাহিনী সাধারণ যুদ্ধবিদ্যার সঙ্গে সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে সেনাদের সুশিক্ষিত করে তোলায় শেখ মুজিবর বাহিনীর সমরসাধ্য এখন পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 পাক বাহিনী পর্যুদস্তঃ দিনহাটা থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, তিনি রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী সফর করেন। মুজাহিদ বাহিনীর ক্যাপ্টন আবুল হোসেন তাঁকে জানান, গতকাল তুগ্রাইহাটের মুক্তিফৌজের সঙ্গে এক সংঘর্ষ পাকহানাদার ফৌজের এগারজন সেনা নিহত হয়। এ জায়গাটি কুড়িগ্রাম শহর থেকে ৪ মাইল দূরে। একজন মুক্তিসেনা আহত হয়ে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি হন। পাক সেনা দলটি জীপে করে কুড়িগ্রাম যাওয়ার পথে তুগ্রাইহাটের কাছে মুক্তিফৌজ তাদের বাধা দেয়। প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর পাকদল চম্পট দেয়।

 রংপুরের দিকে মুক্তিফৌজঃ ইপিআরের জনৈক নায়েক ভূরুঙ্গামারীতে বলেন, মুক্তিফৌজ সৈয়দপুর ক্যাণ্টনমেণ্ট দখল করার পর রংপুরের দিকে এগিয়ে চলেছে খবর পেয়ে লালমনিরহাট থেকে একদল পাকহানাদার সেনা রংপুর রওয়ানা হয়।