পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪১৩

সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গার পাক বাহিনীর হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে। ময়মনসিংহ-কুমিল্লার ৯০০ কিলোমিটার পথে তুমুল যুদ্ধ চলেছে।

-বাংলাদেশ, ১মবর্ষ, ১ম সংখ্যা, ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১

আখাউড়া দখল নিয়ে জোর লড়াই

 লামাকামুরা, ১৭ এপ্রিল-আখাউড়া রেল স্টেশন দখল নিয়ে পাকফৌজের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের জোর লড়াই চলেছে। প্রতিরোধের মুখে পাক-বাহিনী এখন মরিয়া। কুমিল্লা এবং ভৈরববাজার অঞ্চলে তাদের প্রচণ্ড আক্রমণে বহু লোক মারা যায়। উজানীশাতে গত তিনদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধারা যে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে তা ব্যর্থ করে দিতে না পেরে এখন তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তর-পশ্চিম দিকে হেলিকপ্টার ও স্টীমারে সৈন্য নিয়ে যাচ্ছে।

 আজ বিকালে মগরাতেও তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে। লড়াই চলছে গঙ্গা সাগরেও। পাকসেনারা সর্বত্রই পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করেছে। তারা ধানক্ষেতে একরকম রাসায়নিক বোমা ফেলছে, ফলে চাষ আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

 ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে বহু উদ্ধাস্তু চলে এসেছে। আজ পর্যন্ত এদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার। এর মধ্যে আগরতলার শরণার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার।

পশ্চিম রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ গেরিলা কায়দায় লড়ছে।

 মেহেরপুর, ১৭ এপ্রিল-পাকফৌজের কামান ও বোমাবর্ষণের মোকাবিলার করার জন্য পশ্চিম রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ সম্পূর্ণ গেরিলা কায়দা অবলম্বন করছে। রণকৌশল হিসাব তারা শহরগুলি থেকে অসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থেকে সমস্ত অসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 মুক্তিফৌজ শহরের গোপন জায়গাগুলিতে লুকিয়ে থেকে শত্রুর উপর অতর্কিতে হানা নীতে অবলম্বন করেছে। ইতিমধ্যের মুক্তিযোদ্ধাদের সমরকৌশল ফলপ্রসূ হতে শুরু করেছে। আজ সন্ধ্যার কুষ্টিয়া শহরে পাকফৌজ ঢুকলে গড়াই নদীর পূর্ব দিক দিক থেকে মুক্তিফৌজ অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। ফলে হানাদাররা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাত্রিতে উভয়পক্ষের জোর লড়াই চলেছে।

 মুক্তিফৌজের জনৈক মুখাপত্র বলেন, কটি বিমান বিধ্বংসী কামান এবং কয়েকটি ফাইটার ও বোমারু বিমান পেলে তাঁরা শত্রুকে সহজেই হটিয়ে দিতে পারেন। নচেৎ তাঁদের গেরিলা যুদ্ধ নীতি অব্যাহত রাখতে হবে।

পাকফৌজের কুড়িগ্রামের দখলের চেষ্টা প্রতিহত

 কুড়িগ্রাম (বাংলাদেশ)- কুড়িগ্রাম থেকে ২৩ মাইল মত দূরে তোগরিহাটে গতকাল মুক্তিফৌজ ও পাকফৌজের মধ্যে জোর লড়াই হয়। পাঁচজন পাক সেনা নিহত ও আটজন আহত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধাও আহত হন। মুক্তিফৌজ কিছু অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নিয়েছে। এই লড়াইয়ে উভয় পক্ষই মর্টার, মেশিনগান এবং রাইফেল ব্যবহার করে। পরে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। রেল লাইনের ধারে বেশ কয়েকটি বাড়িতে পাকসেনারা লুটপাট চালায় ও আগুন লাগিয়ে দেয়। মুক্তিফৌজের নেতৃত্ব দেন শ্রীবোরহানুদ্দিন ও শ্রীমেহের আলী মণ্ডল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতি থাকার পর পাকসেনারা কুড়িগ্রাম দখলের যে দ্বিতীয় চেষ্টা চালায়, মুক্তিফৌজ তা ব্যর্থ করে দিয়েছেন।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১