পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪১৪

মুক্তিফৌজের চুয়াডাঙ্গা দখল, আখাউড়ায় পাল্টা আক্রমণ

 আগরতলা, ৮ই এপ্রিল (ইউএনআই)-মুক্তিফৌজ আজ অপরাহ্নে পাকসৈন্যদের দ্বারা অধিকৃত রেল জংশনের ওপর প্রচণ্ড রকমের পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিবের সৈন্যরা জংশনের ওপর অবিশ্রান্ত মর্টারের গোলাবর্ষণ করেছে।

 কৃষ্ণনগর থেকে পাওয়া এক খবরে প্রকাশ, মুক্তিফৌজ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে চুয়াডাঙ্গা খণ্ডের ওপরও আজও প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। গত রাত্রে পাকবাহিনী মুক্তিফৌজের আক্রমণের মুখে পিছু হটতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। ইউএনআই-র খবর, বাংলাদেশের মুক্তিফৌজ তীব্র সংঘর্ষের পর কুষ্টিয়া জেলার সদর শহর চুয়াডাঙ্গা আবার দখল করে নিয়েছে। আজ রাত্রে সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে তাঁরা এটা জানিয়েছেন। মুক্তিফৌজ চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রান্তে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ মাথাভাঙ্গা সেতুটিও দখল করেছে।

 কৃষ্ণনগর থেকে পিটিআই’র খবরে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানী সৈন্যরা মেহেরপুর দখলের জন্য অভিযান শুরু করেছে এবং পরবর্তী সৈন্যরা মেহেরপুর থেকে চার মাইল দূরে আমজুফিতে পৌঁছেছে। আমজুফি থেকে ভারত সীমান্ত সাত মাইল দূরে। আমজুফি থেকে তারা মেহেরপুরের ওপর গোলাবর্ষণ করছে।

 এর আগের এক খবরে বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তানীরা কাল আখাউড়া রেল জংশন দখল করার পর আজ সকাল দশটার সময় হাওরী নদী পার হয়ে শহরে পৌঁছায়। শহরে ঢুকেই তারা ঘরবাড়ী এবং বাজারে আগুন লাগাতে থাকে। ভারত সীমান্ত থেকে আগুনের শিখা দেখা যেতে থাকে। ভারতীয় সীমান্ত এখান থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে।

 আগরতলা থেকে খবর পাওয়া গেছে যে, পাকিস্তানীরা এখন আখাউড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যে রেলপথ মেরামত করতে শুরু করেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বন্দুক দেখিয়ে কাজ করতে বাধ্য করছে। পাকিস্তানী আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত মুজিবের অনুবর্তীরা আখাউড়া পর্যন্ত ট্রেন চালু রেখেছিলেন। কাল রাত্রে পাকিস্তানীরা আখাউড়া স্টেশনে ঢোকার আগে স্টেশনের সমস্ত কর্মচারীরা আগরতলায় চলে গেছে।

 বরকল জলাধার ধ্বংস করার চেষ্টাঃ শিলং থেকে নীলকমল দত্ত জানাচ্ছেন যে, মুক্তিফৌজের তৎপরতা রোধে পাকিস্তানীরা ক্রমাগত নোয়াখালী জেলার ফেনী ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর বরকল জলাধারের ওপর বিমান আক্রমণ চালাচ্ছে। চট্টগ্রামের পাবর্ত্য অঞ্চলের কাপতাইর ওপরও তারা বিমান থেকে রকেট ও মেশিনগানের গুলিবর্ষণ করে। এখানে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখলের জন্য কাপ্তাই ও কুমিরা অঞ্চলের ওপর তারা ছত্রীসৈন্যও নামিয়েছে।

 লাকসাম অঞ্চলে মেজর জিয়ার অধীন মুক্তিফৌজের একদল পাক-সৈন্যের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়।

 সারা সেতুর কাছে প্রচণ্ড লড়াইঃ ভেড়ামারা থেকে আগত পুনর্গঠিত মুক্তিফৌজের আরেকটি দল পাক-বাহিনীর সরবরাহ ব্যবস্থা বিকল করে দিয়েছে। এই পাকবাহিনী পাবনা থেকে পাকসি-কুষ্টিয়া সড়কের দু’ধারে আক্রমণ চালাতে চালাতে কুষ্টিয়ার দিকে এগিয়ে আসছিল।

 হার্ডিঞ্জ সেতুর কাছে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। মুক্তিফৌজ কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত পাক বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে এবং গড়াই নদীর পূর্ব ধার থেকে ফরিদপুরের দিকে অগ্রসরমান শত্রুসৈন্যদের গতিও প্রতিহত করেছে। সংবাদে আরো জানা গেছে যে, হাজার হাজার যুবক বাংলাদেশ সরকারের পুনর্গঠিত সেনাবাহিনীতে যোগদান করছেন।