পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪১৫

 পাবনা-কুষ্টিয়া সংযোগ পথ বিচ্ছিন্নঃ গৌহাটি থেকে পাওয়া পিটিআই’র খবরে প্রকাশ, আজ মুক্তিফৌজ এক ত্বরিত আক্রমণে পাবনা ও কুষ্টিয়ার মধ্যবর্তী পাকফৌজের সংযোগ রক্ষার ও সরবরাহের পথ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সীমান্তের ওপার থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখানে এই সংবাদ পৌঁছে। মুক্তিফৌজের এই সাফল্যের বিস্তারিত সংবাদ এখনও পাওয়া যায়নি।

 ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়া থেকে আগত শরণার্থীদের মুখে সেখানে পাকফৌজের নিষ্ঠুর অত্যাচারের নানা কাহিনী শোনা যাচ্ছে। তারা কুষ্টিয়া শহরের নিকটবর্তী গ্রামগুলির তিন হাজারেরও বেশী ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। পাকফৌজ পৌঁছানোর আগেই গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ফরিদপুর অঞ্চলে মুক্তিফৌজের প্রচণ্ড বাধার ফলে পাকফৌজের অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।

 দিনাজপুর অঞ্চলে মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণাধীন হিলি থেকে পাঁচশ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ীতে এক গ্যারিসন পাকফৌজ দেখা গেছে।

 ভারত সীমান্ত থেকে সাত মাইল দূরে লড়াইঃ আজ রাত্রে ভারতের সীমান্তবর্তী শহর কৃষ্ণনগরে খবর পৌঁছায় যে, ষাটটি সামরিক গাড়ীতে চেপে পাকফৌজ মেহেরপুর প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে দু’দিকে বেপরোয়াভাবে অসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা করে ও গ্রামগুলিতে আগুন জ্বালায়।

 এখন মুক্তিফৌজ ও পাকফৌজের মধ্যে লড়াই চলছে ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র সাত মাইল দূরে এবং কৃষ্ণনগর-করিমপুর সড়ক থেকে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

-যুগান্তর,১৯ এপ্রিল, ১৯৭১

মেহেরপুর আবার মুক্ত, শালুটিকরও বাংলাফৌজ নিয়ে নিল-

সোমবার সাফল্যের পর সাফল্য

 মুক্তিফৌজের পক্ষে সোমবার সাফল্যের পর সাফল্য। আধুনিকতম মারণাস্ত্রে বলীয়ান পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড সংঘবদ্ধ সংগ্রাম চালিয়ে মুক্তিফৌজ এদিন বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে নিয়েছে। রবিবার দিন যুদ্ধের অবস্থা অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকায় আজ মুক্তিবাহিনী নতুনভাবে শক্তি সঞ্চয় করে তীব্র আক্রমণে নাজেহাল করেছেন হানাদার সৈন্যদের। শ্রীহট্ট শহরের অদূরে শালুটিকর বিমানবন্দরে গত কয়েকদিন ধরে দুই পক্ষের মরীয়া আক্রমণ চলছিল। পাকফৌজ সেখান থেকে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতা শ্রী ধ্রুব মজুমদার জানাচ্ছেন, প্রায় ১৫০ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করেছে মুক্তিফৌজের কাছে, ওদিকে হতাহতের সংখ্যা অনেক। শালটিকর থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে খাদিমনগরে উপস্থিত হয়ে তিনি যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফলাফল পেয়েছেন। পাকবাহিনী এখন বিমানবন্দর থেকে হটে গিয়ে শেষ লড়াই চালাচ্ছে। এখানে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে বৃটিশরাই একটি বিমানবন্দর বানিয়েছিল এবং পাকিস্তানী সরকার সেটিকে আধুনিক রূপ দিয়েছিল।

 এদিন দুপুরের দিকে খবর আসে যে, ভারতের সীমান্তবর্তী মেহেরপুর পাকফৌজ দখল করে নিয়েছে। সন্ধ্যার পর আবার আনন্দ সংবাদ। মুক্তিবাহিনী এখান থেকে হটিয়ে দিয়েছে হানাদারদের। মেহেরপুর ট্রেজারির একজন কর্মী ভারত সীমান্তে আশ্রয় নেবার পর জানান যে, পাকফৌজ মুসলিম লীগের সহায়তায় শহরটি লুটপাট করে অনেক বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। পরে তারা মুক্তিবাহিনীর তাড়া খেয়ে বাধ্য হয়। চুয়াডাঙ্গা শহরটি এখন মুক্তিসেনার দখলে। শহরের বাইরে যুদ্ধে চলছে।

 আর একটি বড় জয় পূর্ব খণ্ডে কসবায়। আমাদের সাংবাদিক তুষার পণ্ডিত জানাচ্ছেন, আগরতলা থেকে ২০ মাইল দূরে ভারত সীমান্তের কমলাসাগরের ওপাশে কসবায় পাকবাহিনী ক’দিন ধরে ছাউনি গেড়েছিল। এই