পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪২৬

 কৃষ্ণনগরের খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের পশ্চিমাংশে কুষ্টিয়া খণ্ডে ৭ই মে মুক্তিফৌজ আর পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের মধ্যে গুলি বিনিময়ে অন্তত ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে ও বাংকার বিধ্বস্ত হয়েছে। রাত ১টা থেকে এক ঘণ্টা ধরে এই গুলী বিনিময় চলে।

 আজ সকালে সীমান্তের অপর পারের এক খবরে বলা হয়েছে যে, মুক্তিফৌজ গত শক্রবার থেকে মেহেরপুর উপখণ্ডে ভৈরব নদীর পূর্বতীরে পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাটির উপর শেল বর্ষণ করছে। মুক্তিফৌজের তরফের কেউ হতাহত হননি।

 মুক্তিবাহিনীর চোরাগোপ্তা আক্রমণকারীরা গতকাল সন্ধ্যায় ভৈরব নদীর পশ্চিমতীরে মেহেরপুরের একটি গুপ্ত স্থান থেকে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে একজন সুবেদারসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানী সৈন্যকে হত্যা করেন। মুক্তিফৌজের গেরিলারা গতকাল রাত্রে দক্ষিন-পশ্চিম খণ্ডে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে জয়রামপুরের কাছে একটি রেলসেতু উড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে দর্শনার দিকে ট্রেনচলাচল বন্ধ হয়ে গেছ এবং পাকিস্তানের রসদ সরবরাহের পথ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

 বাংলাদেশের কোনো এক স্থান থেকে খবর পাওয়া গেছে যে, ২৫শে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫,০০০ পাকিস্তানী সৈন্য নিহত এবং ৩০,০০০ সৈন্য আহত হয়েছে বলে বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট নেতা জানিয়েছেন।

-যুগান্তর, ১০ মে, ১৯৭১

বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের ব্যাপক গেরিলা আক্রমণ

 কৃষ্ণনগর, ১১ মে- বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে আজ মুক্তিফৌজ ব্যাপক গেরিলা আক্রমণ চালায়। সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, মুক্তিফৌজ কমাণ্ডোরা রংপুর জেলার কোলাঘাট, মোগলহাট ও অমরখানায় পাকিস্তানী সামরিক ঘাঁটিগুলির ওপর আক্রমণ চালিয়ে যায়। মুক্তিফৌজের কমাণ্ডো দলের আচমকা থানায় মোগলহাটে বহু পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়।

 দিনাজপুর জেলায় মুক্তিফৌজ পার্বতীপুর-সান্তাহা রেল রুটে পঞ্চবিবি ও জয়পুরহাট শহরে পাক সামরিক ঘাঁটিগুলির ওপর আক্রমণ চালিয়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে ফেলে। জয়পুরহাটের সংঘর্ষে সাতজন পাকসেনা নিহত হয়। সেখানে মুক্তিফৌজ রেলওয়ে সিগন্যাল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র উড়িয়ে দেয়। নিকটবর্তী উরি রেলসেতুটিও বিধ্বস্ত। হিলির পাঁচ মাইল উত্তরে পাকিস্তানী সামরিক ঘাঁটির কাছে গেরিলারা একটি ডিজেল ইঞ্জিন ও কয়েকটি বগি উড়িয়ে দেয়।

 পটুয়াখালী, ভোলা ও বরিশালে মুক্তিফৌজ সক্রিয়, তৎপর। দক্ষিণ-পূর্ব রনাঙ্গনে মুক্তিফৌজ ফেনী এলাকায় শোভাপুরে পাকিস্তানীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে বহু পাকসৈন্য খতম হয়।

 মুক্তিফৌজ কমাণ্ডোরা কুড়িগ্রামে পাকিস্তানী ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিফৌজের ১২ জন বন্দী জওয়ানকে ছাড়িয়ে আনে। ধরলা ও কুড়িগ্রামের মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু কমাণ্ডোরা ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ময়মনসিংহ জেলার দুর্গাপুর থানার কাছে পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে কমাণ্ডো দল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ভর্তি তিনটি জীপ আটক করে।

 আখাউড়া চেকপোস্ট থেকে মুক্তিফৌজ সরে গিয়েছে; আগরতলার খবর পাঁচদিন ধরে হানাদার বাহিনীকে বাধা দেওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা আখাউড়া চেকপোস্ট থেকে আজ বিকালে সরে গিয়েছে। মুক্তিফৌজ মহল থেকে