পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪২৭

বলা হয়েছে, সরে আসার আগে মুক্তিযোদ্ধারা ডজনখানেক পাকসেনাকে খতম করে। মুক্তিফৌজের একজন কমাণ্ডার জানান, রণকৌশলের অঙ্গ হিসাবেই এই পশ্চাদপসারণ।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ১২ মে ১৯৭১

মুক্তিফৌজ এখনো প্রচণ্ড লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন

 মুজিবনগর, ১৩ই মে (নিজস্ব প্রতিনিধি)- দক্ষিণ-পূর্ব রনাঙ্গনে কুষ্টিয়া জেলার দামুড়হুদা থানার অন্তর্গত কুতুবপুরে মুক্তিফৌজ ও পাক-সৈন্যের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। কুতুবপুরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় মুক্তিফৌজ লক্ষ্য করেন যে, পাক-সৈন্যের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালান। মুক্তিফৌজের আক্রমণে বহু পাকসৈন্য নিহত হয়। কিছু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র ও মুক্তিফৌজের দখলে এসেছে। পাক-সৈন্যরা বহু গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে।

 ইউ-এন আই’র সংবাদে প্রকাশ, মেঘালয়ের মুক্তপুরের বিপরীত দিকে অবস্থিত জয়ন্তিপুরে পাকসৈন্য ও মুক্তিফৌজের মধ্যে আজ আবার প্রবল গোলাগুলি বিনিময় হয়েছে।

 বালকের কৃতিত্বঃ রানাঘাট, ১৩ই মে- গত রবিবার মুক্তিফৌজ ইছাখালীতে যে আটজন পাকসেনাকে মেশিনগানের গুলিতে খতম করতে সক্ষম হয় তার মূলে ছিল জনৈক গ্রামবাসী বালকের কৃতিত্ব। মেহেরপুর থেকে ওই গ্রামে এসে পাকসেনারা গ্রাম ঘুরে দেখে এক গাছতলায় ছ’জন অপেক্ষা করতে থাকে ও অপর দু’জন গাছে উঠে বাইনোকুলার দিয়ে গ্রামের চার ধার লক্ষ করছিল। সেই ঘটনা উক্ত বালকের নজরে পড়ে। সে তৎক্ষনাৎ মুক্তিফৌজের ট্রেঞ্চে গিয়ে সেই সংবাদ দিলে মুক্তিবাহিনী অতর্কিত তাদের আক্রমণ করে। এই সংবাদ জানা গেছে সদ্য আগত ই-পি-আর বাহিনীর জনৈক কর্মীর পিতার কাছ থেকে।

-যুগান্তর, ১৪ মে, ১৯৭১

গেরিলা আক্রমণে রেলপথ ও সেতু ধ্বংস, তামাবিল হাতছাড়া

 রায়গঞ্জ, ১৪ মে-বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা গত ৩ দিনে দিনাজপুর জেলায় রেলের ওপর কয়েক দফা গেরিলা আক্রমণ চালান বলে এখানে খবর পাওয়া গিয়াছে। গতকাল রাতে কমাণ্ডোরা হিলির কাছে চারখাই ও ডাঙ্গাপাড়া স্টেশনের মধ্যে রেলপথ উড়িয়ে দেন। বুধবার তাঁরা ধামাইরহাটের কাছে একদল পাকসেনার ওপর গুলি চালিয়ে ৪ জন সৈন্যকে খতম করেন। মুক্তিসংগ্রামীরা মঙ্গলবার জয়পুরহাটের কাছে ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি রেলসেতু উড়িয়ে দেন এবং একটি পাওয়ার হাউস ধ্বংস করেন। তাছাড়া পাঁচবিবি স্টেশনের কাছে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়।

 দু’শরও বেশী খানসেনা খতমঃ আগরতলা, ১৪ মে আজ গভীর রাত্রে মুক্তিফৌজের সূত্রে পাওয়া খবর, চট্টগ্রাম ও ফেনীর মধ্যে শুভপুর এলাকায় মুক্তিফৌজের সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধে গতকালণ ২০০ জনেরও বেশী খান-সেনা খতম হয়েছে।

 কৃষ্ণনগরের খবরঃ স্বল্পবিরতির পর মুক্তিফৌজের গেরিলা ও কমাণ্ডোরা বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাঁটিগুলির ওপর আবার আক্রমণ করেছেন।

 সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, মুক্তিফৌজের গেরিলারা গতকাল রাতে উত্তর পশ্চিম খণ্ডে কড়িগ্রামে পাকবাহিনীর ওপর দুবার আক্রমণ চালান। ৪ জন পাকসৈন্য নিহত এবং ৬জন আহত হয়। কিছু অস্ত্রশস্ত্রও গেরিলারা দখল করেছেন।