পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৩৪

জেলার শমসেরনগরে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে পাকফৌজের কাছ থেকে বহু অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নিয়েছে। সাতক্ষীরা মহকুমার ভোমরায় মুক্তিবাহিনীর হামলায় পাকফৌজ দিশেহারা ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। ঐখানে বেশকিছু সংখ্যক সৈন্য নিহত হয়েছে। গত ১৯শে মে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকসেনাদের গেরিলারা আকস্মিক হমলা চালিয়ে রংপুর ও সৈয়দপুরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কসেতু উড়িয়ে দেয়। বগুড়া জেলার জয়পুরহাটের কাছে মুক্তিবাহিণী ৩৪ জন পাকসেনাকে খতম করে। এছাড়া তারা অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই ৩টি ট্রাক দখল করে।

-জয়বাংলা, ১মবর্ষ, ৩য় সংখ্যা, ২৬ মে, ১৯৭১

তামাবিল ঘাঁটি আবার মুক্তিফৌজের দখলে

 ডাউকি (মেঘালয়), ২৬মে (ইউএনআই ও পি টি আই)- আজ ৬ঘণ্টা তুমুল লড়াই-এর পর মুক্তিফৌজ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে ভরতীয় সীমান্ত সংলগ্ন তামাবিল ঘাটি থেকে হটিয়ে দেয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা হটে যাবার পর মুক্তিফৌজের সেনানীরা তামাবিল ঘাঁটির উপর বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন। এখান থেকে ঐ পতাকা দেখা যায়। প্রকাশ ঐ ঘাটি থেকে মুক্তিফৌজের সেনারা প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র পেয়েছেন। মুক্তিফৌজ মহলের খবরে জানা যায় তামাবিলের লড়াইয়ে পাকিস্তানে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 গতকাল মাঝরাত্রি থেকে লড়াই শুরু করে এবং আজ সকাল ৬টায় লড়াই শেষ হয়। গত ১৪মে পাকিস্তানী সেনার ঐ ঘাঁটিটি দখল করে নিয়েছিল। তামাবিল ঘাঁটি ছেড়ে পালাবার আগে পাকিস্তানী সেনারা তাদের পক্ষের নিহতদের মৃতদেহগুলি নিয় চলে যায়। প্রকাশ, পাকিস্তানী সেনারা পিছু হটে শ্রীপুর চা বাগানের দিকে চলে গেছে।

 গত রাতে দিনাজপুরে মুক্তিফৌজের আক্রমণে ৩০ জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকিস্তানী সেনারা যখন দুটি মিলিটারী ট্রাকে করে ফুলবাড়ি এলাকা যাচ্ছিল তখন মুক্তিফৌজ অতর্কিত তাদের ওপর আক্রমণ চালায়।

 মুক্তিফৌজের সেনানীরা দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও এলাকায় সেতাবগঞ্জ ও পীরগঞ্জের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু উড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে অন্যান্য এলাকায় মুক্তিফৌজ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম এলাকার কুলাঘাটের কাছে গত রাত্রি থেকে মুক্তিফৌজ ও পাকিস্তানী বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই চলছে।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৭শে মে, ১৯৭১

বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের সফল সংঘর্ষ

 কলকাতা, ২৭শে মে (ইউ, এন, আই)- বাংলাদেশের বিভিন্ন রণক্ষেত্রে মুক্তিফৌজ তিনদিন ধরে পাক হনাদার বাহিনীর সঙ্গে সফল সংঘর্ষ চালাচ্ছে। সীমান্তের ওপার থেকে জানা গেছে, রাজশাহী খণ্ডে আহত পাকসেনা বোঝাই দুটি নৌকা আক্রমণ করে চারজন শত্রুসেনাকে খতম করেছে। মহেরপুর, বগুড়া, মোগলহাট এবং বরিশালেও সংঘর্ষ বাধে। পাকসেনা খতমের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। খুলনা জেলায় পাকবাহিনীর তাঁবেদার লাগিয়ে ফসল কাটাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে পাকসেনাদের অত্যাচার ও হত্যালীলা বৃদ্ধির পথে। সম্প্রতি ত্রিশ হাজার সাঁওতাল বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

 বাংলাধেশের মুক্তিফৌজ আজ বিকালে শ্রীহট্টের শ্রীপুর চা-বাগান থেকে পশ্চিমা পাক হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করছে। এই সংঘর্ষে বেশকিছু সংখ্যক পাক সেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী দুই ট্রাক ভর্তি অস্ত্রশস্ত্র দখল করেছে বলে বাংলাদেশের সূত্র জানা গেছে। শ্রীপুর চা বাগান বাংলাদেশের তামাবিলের চার কিলোমিটার দক্ষিণে। গতকাল মুক্তিফৌজ তামাবিল সীমান্ত ফাঁড়িটি দখল করার সময় বিপুল সংখ্যক পাক ফৌজ নিহত হয়।