পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৪৩

 ঐ সফরের সময় তিনি মুক্তিফৌজ নিয়ন্ত্রিত কতিপয় শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ঐ শিবিরসমূহে তিনি “তরুণ মুক্তিযোদ্ধেদের মধ্যে অদম্য মনোবল ও। নমনীয় দৃঢ়তা” পরিলক্ষিত করেছেন। এই খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রচার করেছে।

 পাক স্বাগত কেন্দ্র গুলি বন্দী শিবিরের সঙ্গে তুলনীয়ঃ আকাশবাণী’র খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র বাংলাদেশের পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক (শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য) প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত ‘স্বাগত কেন্দ্র’গুলিকে বন্দী শিবিরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

 তিনি জানান, সম্প্রতি ভারতের পথে আসার সময় বহুসংখ্যক শরণার্থীকে পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ জোর করে ঐ স্বাগত কেন্দ্র গুলিতে নিয়ে গেছে।

 ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিকের অধিকাংশ বাঙালী কর্মচারী ছাঁটাইঃ ঢাকা থেকে পাকসামরিক কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে প্রকাশিত ইংরাজী দৈনিক মর্নিং নিউজ’ পত্রিকার অধিকাংশ বাঙালী কর্মচারীকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে বলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ প্রচার করেছে। পাক অধিকৃত বাংলাদেশে সামরিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ঐ সকল পত্রিকার কোন গ্রাহক নেই। সামরিক কর্তারা পত্রিকার ২০০০ কপি কিনে নেন, মাঝে মাঝে সেনাদের মধ্যে বিমান থেকে ওগুলো ফেলে দিওয়া হয়। কিন্তু সাধারণ নিরপেক্ষ কোন বেসামরিক পাঠক নেই।

 পাক নৃশংসতার বিরুদ্ধে ডন পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদকের কণ্ঠস্বর করাচীর ডন পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক জনাব আলী জাফরী আজ লণ্ডনে বাংলাদেশে সংঘটিত পাক নৃশংসতার বিরুদ্ধে দৃপ্ত প্রতিবাদ জানিয়ে জনসাধারণের কাছে এই মর্মে আবেদন জানিয়েছেন যে, তাঁরা যেন ইংল্যাগু ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী টেষ্ট ম্যাচগুলি বয়কট করেন।

 জনাব আলী জাফরী ইতিপুর্বে পাকিস্তানে ব্যক্তি স্বাধীনতা অপহরণের প্রতিবাদে পাক নাগরিত্ব বর্জন করেছিলেন।

 চুয়াডাঙ্গায় পাকসেনাদের মধ্যে”সেম সাইড” কলকাতা, ১০ জুন বাংলাদেশের গেরিলাবাহিনীর তৎপরতা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। গেরিলাদের হাতে মার খেয়ে পাক হানাদাররা নিজেদের মধ্যে সেম সাইড করে বসছে। চুয়াডাঙ্গার কাছে দুই দল পা সৈন্যের পরস্পর সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আজ সন্ধ্যায় ঐ সংবাদের কথা উল্লেখ করে চুয়াডাঙ্গার শেয়ালমারীতে গেরিলা বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সংবাদ দিয়েছে।

 প্রকাশ, গত ৫ জুন শেয়ালমারীতে মাইন বিস্ফোরণে ২ টি সামরিক ট্রাক ধ্বংস হয়ে ২৯ জন পাকহানাদার নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। হানাদাররা জীবননগরের দিকে যাচ্ছিল। ঐ মাইন বিস্ফোরণের শব্দে ভীত পাক হানাদাররা জীবননগর দর্শনা থেকে ঘটনাস্থলে দিক আসে। দুই পক্ষেই পরস্পর মুক্তিসেনা বলে ভুল করে এবং পরস্পরের উপর গুলি চালাতে থাকে। ফলে ১৩ জন পাকহানাদার নিজেদের গুলিতেই আহত হয়।

-কালান্তর, ১১ জুন, ১৯৭১

পাক হানাদারদের উপর মুক্তিফৌজের আক্রমণ

 কলকাতা, ১১ জুন- মুক্তিফৌজের গেরিলা তৎপরতায় চট্টগ্রাম শহর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাক সেনারা প্রতিদিনই নাজেহাল হচ্ছে। আজ সন্ধায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রচারিত সংবাদে বলা হয়েছে যে সম্প্রতি গেরিলা বাহিনী চট্টগ্রাম শহরের নিউ সার্কেট, খাতুনগঞ্জ, চট্টেশ্বরী রোড, চকবাজার, লারদেঘীর মাঠে প্রভৃতি স্থানে গ্রনেডে ও হাতবোমা সহ আক্রমণ চালায়। চকবাজারে ২ জন পাক হানাদার নিহত হয়েছে।