পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
888

 সংবাদে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম এখন পরিত্যক্ত নগরী। দোকানপাট বন্ধ। শতকরা মাত্র ১৫ জন লোক দৈনন্দিন কাজে যোগ দেওয়ার জন্য পথে বেরুচ্ছেন। বেলা ৩টার পর রাস্তায় কাউকে খুব কম দেখা যায়। বন্দর এলাকায় মাত্র ৫০ জন কাজ করছে। চট্টগ্রামের হাজী এলাকায় দ্বিতীয় ক্যাণ্টনমেণ্টে স্থাপন করা হয়েছে। বাগানাবাজার ও আঁধারমানিক অঞ্চলে ২ টি পৃথক আক্রমনে গেরিলারা ৪০ জন পাকসৈন্যকে খতম করেছে। শ্যামপুরে ৮ জন দৌলতপুর-চাঁদিরহাটে ৪০ জন কুমিল্লার হরনপুর, হৃদয়পুরে ১৩ জন এবং যশোহর রণাঙ্গনে ১৫ জন পাক হানাদার গেরিলাদের হাতে নিহত হয়েছে। রামগড় থেকে গড়েরহাটের পথে ৩ জন পাক সামরিক অফিসার নিহত হয়েছে।

 গেরিলা বাহিনী মুসলিম লীগের দালালসহ পাক দালালদেরও বিভিন্ন স্থানে খতম করে চলছেন। জাকিগঞ্জে ৪ জন দালাল নিহত এবং ১জন গ্রেফাতার হয়েছে। মুক্তিসেনারা জাকিগঞ্জের পুলিশ স্টেশন দখল করেছেন এবং জাকিগঞ্জে পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করেছেন। কালিগঞ্জের মুসলিম লীগ চেয়ারম্যান অলি মণ্ডলকে মুক্তিসেনারা খতম করে দিয়েছেন। ছাগলগঞ্জ বাজারে ১ দালালকে বন্দী করা হয়েছে এবং যুবতীকে উদ্ধার করা হয়েছে। সিলেট সেক্টরে মুক্তিফৌজের হাতে একটি রেলসেতু ধ্বংস হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।

 আগরতলা থেকে ইউ-এন আই জানাচ্ছেনঃ সম্প্রতি একদল সাংবাদিক বাংলাদেশের দক্ষিণ রনাঙ্গনে সফরে গিয়েছিলেন। মুক্তিফৌজের জনৈক মেজর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, মুক্তিফৌজে বর্তমান পাকহানাদারদের উপর পাল্টা আক্রমন শুরু করেছে এবং সর্বত্র পাকসেনাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

 উক্ত মেজর সাংবাদিকদের আরো জানিয়েছেন যে দক্ষিণ রণাঙ্গনে পাঠন ও বালুচ সেনারা নিরস্ত্র বাংলাদেশ নাগরিকদের উপর গুলি করতে অস্বীকার করায় তাঁদের অন্যত্র বদলী করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় ৪০০ জন বালুচ সেনাকে জাহাজে পশ্চিম পকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

 পাঞ্জাবী ও পাঠান সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষঃ গত ৪ জুন কুমিল্লা সেক্টরে পাক সেনাবাহিনীর পাঞ্জাবী ও পাঠানদের মধ্যে এক সংঘর্ষে ৩৫ জন নিহত হয়েছে।

-কালান্তর, ১২ জুন, ১৯৭১

কুমিল্লা শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা

 আগরতলা, ১১ই জুন (পি, টি, আই) বাংলাদেশের মুক্তিফৌজ কুমিল্লা শহরটি গতকাল দখল করে। আবার স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়েছে। এই সঙ্গে নানা অঞ্চলে গেরিলা তৎপরতা ও তীব্রতর হয়ে উঠছে। ইউএন আই জানাচ্ছেন সারা বাংলাদেশ জুড়ে শেখ মুজিবের মুক্তিফৌজ গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে বলে সীমান্তের ওপারে মুক্তিবাহিনীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে খবর এসেছে। পাক সামরিক প্রশাসন শহরে ৭১ ঘণ্টার সামরিক আইন জারী করে নির্বিচারে অধিবাসীদের বন্দী করেছে।

সীমান্তের ওপার থেকে জানা গেছে, মুক্তিফৌজ পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, হাবিব ব্যাঙ্ক লিমিটেড, মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক, জজ কোর্ট এবং টাউন হল ভবনে গ্রেডে আক্রমণ চালায়। গেরিলা বাহিনী কুমিল্লা শহরের দক্ষিণাঞ্চলে একটি রেল ইঞ্জিন উড়িয়ে দিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

 মুক্তিবাহিনীর সূত্র থেকে জানা যায় যে গত ৬ ই জুন মুক্তিফৌজ চট্টগ্রাম জেলায় সৌলাৎপুরে পাকসেনা সমাবেশের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ৩৬ জন শত্রুসেনাকে খতম করে। ৫ ই জুন শ্রীহট্টের তেলিপাড়া খণ্ডে মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাক বাহিনীর প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে পাকবাহিনী আক্রমণের চাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পশ্চাদপসারণ করে, তবে পালাবার সময় তারা জীবন ও সম্পত্তির বেশ ক্ষতি করে যায়। গত ৩রা জুন লাকসাম অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী হঠাৎ একটি আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীর অনেককে খতম করেছে। শত্রুপক্ষের বেশকিছু মিজো