পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৪৭

পকিস্তানী সৈন্যরা আজকাল যতদুর সম্ভব সতর্ক হয়ে চলাফেরা করেছে। মুক্তিফৌজ যাতে চিনতে না পারে সেজন্য পাকসৈন্যরা সময় সময় অসামরিক ব্যক্তির ছদ্মবেশে চলাফেরা করে থাকে। সৈন্যবাহিনী যখন সৈন্য ও সরবরাহ নিয়ে নদী পারাপারের জন্য বোট ব্যবহার করে তখন গেরিলাদের আক্রমন রক্ষা পাওয়ার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নদী ও খালের উভয় তীরের রক্ষী মোতায়েনের ব্যবস্থা করে।

 ভেড়ামারায় ২০ জন পাকসৈন্য নিহতঃ কৃষ্ণনগর ২২ শে জুন কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানার মহিষকুণ্ডি অঞ্চলে এক কোম্পানী পাকসৈন্যর ওপর আক্রমন চালিয়ে মুক্তিফৌজ অন্ততঃ ২০ জন পাকসৈন্যকে হত্যা ও বেশ কিছুকে জখম করেছে বলে আজ সংবাদ পাওয়া গেছে। স্থানটি কৃষ্ণনগর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে ভারত মেঘনা সীমান্তের বিপরীত দিকে। সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া সংবাদ জানা যায় যে, পাকসৈন্যরা আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরভাগে পালিয়ে যায়।

 মুক্তিফৌজ গত রবিবার মেহেরপুরের কছে একটি সৈন্যবাহী ট্রাকের উপর গোলাবর্ষণ করে এবং উহার ফলে প্রায় ২৪ জন পাকসৈন্য নিহত অথবা আহত হয়। ঐ দিনই মেহেরপুরের প্রায় ১৫ মাইল উত্তরপূর্বে একটি অঞ্চলে মুক্তিফৌজ একটি সৈন্যঘাঁটির ওপর গুলিবর্ষণ করে। এই আক্রমণে ১১ জন পাকসৈন্য খতম হয়।

 রংপুরে লালমনিরহাট খণ্ডে মুক্তিফৌজ একটি সৈন্য শিবিরের ওপর আচমকা আক্রমন চালিয়ে কিছু অস্ত্রশস্ত্র গেলাবারুদসহ একটি ট্রাক দখল করে। এই আক্রমণে যে সকল পাকসৈন্য আহত হয় তাদের মধ্যে একজন আফিসারও আছেন।

-যুগান্তর, ২৩ জুন, ১৯৭১

খান সেনাদের ওপর মুক্তিবাহিনীর আক্রমন তীব্রতর হয়েছেঃ

আরও সাত শতাধিক সৈন্য খতম

 স্বাধীন বাংলাদেশ বেতারের খবরে প্রকাশ, হানাদারবাহিনী বাংলাদেশে যে বর্বরোচিত ও সুপরিকল্পিত গণহত্যা চালিয়েছে তারই অংশ হিসাবে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও তাঁদের সমর্থকদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এই নির্মম অত্যাচারের হাত থেকে আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ পিতামাতাও রেহাই পাননি। গত সাতদিন চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে প্রায় একশত ৫০ জন পাক হানাদার মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের হাতে নিহত হয়েছে এবং বহু স্থান থেকে পাকসেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র জানিয়েছে। সমগ্র পূর্ব রণাঙ্গনে গেরিলাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজারে বহু পাকসেনা হতাহত হয়েছে। এদিকে মর্টার ও মেশিনগানসহ আক্রমন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ফেনীর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ২০০ জন পাকসেনাকে হত্যা করেছেন।

 স্বাধীনতাকামী তরুণ যোদ্ধারা গত ১৯শে জুন সিলেট সেক্টরে একটি এলাকায় পাক-হানাদারদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে ১৩ জন পাকসেনাকে খতম করেন এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৩ জন পাকসেনাকে আটক করেছেন। এর আগেরদিন এক প্রচণ্ড সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী সিলেটের কয়েকটি স্থানে আক্রমণ চালিয়ে ২২তম রেজিমেণ্টের একজন সৈন্যকেও আটক করেছেন।

 মুক্তিবাহিনী রংপুরের বজরাপাড়ায় পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত গেরিলা আক্রমন চালিয়ে পাকসেনাদের নাজেহাল করে ছেড়েছেন। এই আক্রমণে অনেক খানসেনা হতাহত হয়েছে। সেই দিনই পাকসেনারা মৃত সৈন্যদের লাশ ও আহত সৈন্যদের নওগাঁয় নিয়ে যায়। এই আক্রমণে একজন অফিসারসহ দু’জন পাকসেনাকে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধার গ্রেফতার করেছেন। কয়েকদিন আগে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা ঠাকুরগাঁয়ের কাছে মর্টার ও মেশিনগান থেকে মুক্তি ছাউনির উপর আচমকা গুলি চালায়। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি পয়েছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে অধিকসংখ্যক গাড়ী ও সৈন্য নিয়ে পাকসেনাদের চলাফেরা