পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৬২

কোম্পানীর জন্য বরাদ্দ করা হতো। শাসন বিভাগের অন্যান্য কাজের জন্যও এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হতো। দখল 'আমলের নয় মাসে যে অর্থ আয় হয়েছে এবং বিভিন্ন কাজে ব্যয় হয়েছে তার প্রতিটি কর্পদকের হিসেব নিখুঁতভাবে রক্ষা করায় মুজিবনগরে তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়েছে। আনোয়ারুল আলম শহীদ মুজিবনগরের বাংলাদেশ সরকারের নিকট যখন আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব দাখিল করেন তখন তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে বলেছিলেন, তোমাদের এই কাজে আমি মুগ্ধ হয়েছি। একদিকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, অপরদিকে পাই পয়সার হিসেব রাখা অসম্ভব ব্যাপার। তোমরা এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছো।

  স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীঃ সদর দফতরে এই বাহিনীর বিভাগীয় অধিকর্তা নিযুক্ত হন প্রাক্তন ছাত্রনেতা সোহরাব আলী খান আরজু। একে সহায়তা করেন দাউদ খান, আলী হোসেন, আবদুল লতিফ ও অধ্যাপক আতোয়ার কাজী।

  খাদ্য দফতরঃ খাদ্য দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয় পাহাড়িয়া অঞ্চলের ছেলে করটিয়া সাদত কলেজের ছাত্র ওসমান গনির উপর। সদর দফতরের সকলের খাদ্য সরবরাহ করতেন ইনি। মুক্তিবাহিনীর খাদ্যসামগ্রী পূর্বাঞ্চলীয় মুক্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হতো এবং তা গনির ভাণ্ডারে জমা থাকত। গনির বড় ভাই আলী এই খাদ্য সংগ্রহের ব্যাপারে খুবই সাহায্য করেছেন।

  ইনটেলিজেন্স বিভাগঃ এই বিভাগ এক কথায় গোয়েন্দা বিভাগ বলা যায়। নুরুন্নবী ও হামিদুল হকের উপর এই অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কাজ দেওয়া হয়। এই বিভাগের কাজ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (১) দুশমনের সম্পর্কে তথ্য, পাকবাহিনীর গতিবিধি ও তাদের শক্তি, অবস্থান এবং বাঙ্গালী রাজাকার প্রভৃতি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সংবাদ সংগ্রহ। (২) মুক্তিবাহিনীর কেউ কোন অন্যায় কাজ করে কিনা, দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এমন কোন কাজ করে কিনা, অধিনায়কের নির্দেশ অমান্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিনা, সে সবেরর বিস্তারিত ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ সংগ্রহ করা।

  নুরুন্নবী ও হামিদুল হক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই বিভাগে বাছাই করে লোক ভর্তি করেন। অচিরে এটি একটি শক্তিশালী বিভাগরূপে গড়ে ওঠে। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে প্রত্যেক কোম্পানীতে একজন করে গোয়েন্দা নিয়োগ করা হয়। যেমন ৪ নং কোম্পানীতে গোয়েন্দা অফিসার হিসেবে ঢুকে পড়লেন জনাব নজরুল ইসলাম। তিনি পূর্বে একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।

  শত্রুকবলিত এলাকায় একটু বেশি বয়সের লোকদের গোয়েন্দা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কারণ বেশী বয়সের লোকদের হানাদার বাহিনী একটু কম সন্দেহ করতো। প্রায় তিন গ্রামে একজন করে গোয়েন্দা মোতায়েন করা হয় এবং তারা নিয়মিতভাবে দুশমনের সব সংবাদ যথাস্থানে পৌঁছে দিতো। শুনলে অনেকে আশ্চর্য হবেন যে, শান্তি কমিটির কয়েকজন সদস্য মুক্তিবাহিনীর গোয়েন্দার কর্তব্য সম্পাদক করেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, ভুয়াপুর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল বারী তালুকদার মুক্তিবাহিনীর গোয়েন্দার কাজ করেছেন। গোয়েন্দা বিভাগের আর একজন নামকরা অফিসার ছিলেন ছাত্রনেতা সোহরাওয়ার্দী। তিনি পাকবাহিনীর হাতে বন্দী হন। মুক্তিবাহিনী থেকে তার উপর আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের সব সংবাদ মুক্তিবাহিনীর কাছে পাচার করতে থাকেন।

  বেতার ও টেলিফোন বিভাগ: এই বিভাগের দায়িত্ব নিযুক্ত হন আবদুল আজিজ বাঙ্গাল। ভুয়াপুর কলেজের ছাত্র ও একজন ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি সুপরিচিত। বেসামরিক দফতর থেকে এক মাইল দূরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে ইংরেজ নামক এক কাঠুরিয়ার বাড়ীতে আজিজের টেলিফোন ও বেতার দফতর খোলা হয়। এখান থেকেই সদর দফতরের সকল বিভগে টেলিফোন যোগাযোগ সাধিত হয়। ফোনের রিসিভার, তার, বেতার ট্রান্সমিটার ও রিসিভার সেটগুলো বিভিন্ন থানা লুট করে সংগ্রহ করা হয়। এই দফতরের সঙ্গে আরো দুটি অঞ্চলের বেতার যোগাযোগ স্থাপিত হয়- একটি পশ্চিমাঞ্চলে ভুয়াপুরের গ্রাম এলাকায় এবং অপরটি ধলাপাড়ায়। এই দফতরে