পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৬৩

আজিজের সহকারী হিসাবে কাজ করেন আবদুল্লাহ, শামসু রশীদ, ইমাম, আবদুল ও হাকিম। কাঠুরিয়া ইংরেজ এই দফতরে বাবুর্চির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

 অনেক দুঃসাহসিক কাণ্ডকারখানার নায়ক ছিলেন এই দফতরের কর্মীরা। তারা পাক হানাদারদের বেতার যোগাযোগ কেন্দ্রের সঙ্গে অদ্ভুত রকমে যোগাযোগ স্থাপন করে। টাঙ্গাইল অয়ারলেস কেন্দ্রের কয়েকজন অপারেটরকে এরা দলে ভিড়িয়ে ফেলে। এই অপারেটররা সুযোগ পেলেই দুশমনদের সব গোপন খবর মুক্তিবাহিনীর বেতার কেন্দ্রে জানিয়ে দিতো নিজেদের ট্রান্সমিটারের সাহায্য। বলাবহুল্য, এই সময় খান সেনাদের বেতার যোগাযোগ কেন্দ্র সর্বদা কড়া প্রহরাধীনে থাকতো। তার মধ্যেই কয়েকজন দেশপ্রেমিক অফিসার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ জানিয়ে দিতেন। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল বেতার কেন্দ্রের আবদুর রাজ্জাক অভূতপূর্ব দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি প্রায়ই গভীর রাত্রে মুক্তিবাহিনীর বেতার কেন্দ্রের আজি বাঙ্গালের সঙ্গে কথা বলতেন। এমনিভাবে মানিকগঞ্জের অপারেটর জিল্লুর রহমান, জামালপুরের মুজিবর রহমান, গোড়াই ক্যাডেট আবু বকর সিদ্দিক এবং সিরাজগঞ্জের একজন অপারেটর নিয়মিত ভাবে তাদের ট্রান্সমিটার যন্ত্রের সাহায্য মুক্তিবাহনীকে সকল সংবাদ পাচার করতেন।

 সিগন্যাল বিভাগ: বেতার যোগাযোগ ও টেলিফোন ছাড়াও বার্তা বিনিময়ের জন্য সদর দফতরে সিগন্যাল বিভাগ খোলা হয়। প্রথমদিকে মুসা ও খালেকের উপর এই বিভাগের ভার দেওয়া হয়। কিছুদিন পরে সদর দফতরে শহীদ সাহেব স্বয়ং এই বিভাগের ভার গ্রহণ করেন। মুসা ও খালেককে অন্য বিভাগের বদলি করা হয়। মুক্তিবাহিনীর মধ্যে থেকে বাছাই করা লোক নিয়ে এই বিভগে কর্মঠ লোক নিয়োগ করা হয়। এদের কাজ ছিল যে কোন উপায়ে হোক সংবাদ যথাস্থানে পৌঁছে দেয়া এবং সংগ্রহ করা। এ জন্য এরা পায়ে হেঁটে, সাইকেলে, ঘোড়ায় চড়ে, স্পিডবোটে বা নৌকায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতো। শত্রুকবলিত এলাকার মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে হলে এরা সাধারণ পায়ে হেঁটে, সাইকেল অথবা নৌকার সাহায্য নিত।

 সদর দফতর ছাড়াও প্রতি কোম্পানীতে দুইজন করে সংকেদদানকারী বা সিগন্যালম্যান থাকতো। সদর দফতরের সিগন্যালম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল (করটিয়া কলেজের ছাত্র) ও আবদুল গণি (কচুয়া হাই স্কুলের ছাত্র) ছিল দক্ষ ঘোড়সওয়ার। ঘোড়ায় চড়ে এরা সংবাদ আদান-প্রদান করতো। এদের কাজ ছিল পূর্বাঞ্চলীয় মুক্ত এলাকার চারিদিকে রক্ষা ঘাঁটির সাথে প্রাত্যহিক যোগাযোগ রক্ষা করা। অপর সিগন্যালম্যান কাসেম সপ্তাহে দুইবার ভুয়াপুর ও সদর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো।

 জেলখানা: মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ সংগ্রাম তীব্রতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাসঘাতক রাজাকার, দালাল ও ধৃত খানসেনাদের রাখার জন্য জেলখানায় প্রয়োজন হয়। এ জন্য বেসামরিক সদর দফতর থেকে এক মাইল দূরে একটি জেলখানা খোলা হয়। এ জন্য একটি বেশ বড় ধরনের বাড়ি নেওয়া হয়। এক প্লাটুন মুক্তিসেনা নিয়োগ করা হল এই জেলখানা পাহারা দেওয়ার জন্য। এই প্লাটুনের কমাণ্ডার ছিল আনসার। আর জেলার দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হয় মহু নামক এক দুর্ধর্ষ লোককে।

 হাসপাতাল: সামরিক প্রয়োজনে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য কর্তব্য। অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ প্রভৃতি সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তাকে যেমন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাকেও তেমনি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কাজের পরিকল্পনা দিলে তা কার্যকারী করতে মানুষের অভাব হয় না। মুক্তিযুদ্ধে এটা প্রমাণিত হয়েছে। বাঘা সিদ্দিকী হাসপাতাল খোলার নির্দেশ দিলেন আর তা কার্যকারী করতে এগিয়ে এলে কাউলজানির একজন মেজিক্যাল ছাত্র শাহজাদা চৌধুরী। ইনি ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহবিদ্যালয়ের শেষ বর্ষ এমবিবিএস-এর ছাত্র। সিদ্দিকী এই তরুণের উপর হাসপাতাল খোলার গুরুদায়িত্ব দিলেন। সদর দফতরের শিক্ষা শিবিরের কাছে আন্দি নামক স্থানে বড় বড় তিনটি টিনের ছাপড়া ঘর তৈরি হল। রোগীদের জন্য বিছানাপত্র ও খাটিয়া এলো। ডাঃ শাহজাদার সঙ্গে যোগ দিলেন সখীপুর সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার এবং কম্পাউণ্ডার রতন। সব রকমের সক্রিয়