পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৭০

পাকসেনারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। রাজাকারগণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সেখানেই মারা যায়। মোট ৩৪ জন রাজাকার ও ১২ জন পাকসেনা খতম হয়।

 ১০ অক্টোবর মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি থেকে ৫০ জন পাকসেনা ও ৩৫০ জনের একটি রাজাকার দল চানপুর গ্রামে লুটতরাজ আরম্ভ করে। এই খরব পেয়ে মেজর আফছার মাত্র ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা স্থায়ী এই যুদ্ধে ৫ জন পাকসেনা ও ৭ জন রাজাকার নিহত হয়। পাকবাহিনীর গুলিতে মুক্তিসেনা অলিচন্দ্র সাংমা মৃত্যুররণ করেন। এছাড়া, একজন পুরুষ, একজন স্ত্রীলোক এবং একটি ছেলেকে পাকবাহিনী পালায়নের সময় গুলি করে হত্যা করে। ঐ দিন দিবাগত রাত্রে সেকশন কমাণ্ডার আবদুল হালিম তার দল নিয়ে ধলা-গফরগাঁও রেল লাইনের চারিপাড়া পুলে পাহারারত রাজাকারদের উপর আক্রমণ চালান। ফলে ১৪ জন রাজাকার আহত ও ৪ জন নিহত হয়। রাজাকারগণ ৫ শত রাউণ্ড গুলি ফেলে পালিয়ে গেলে তা মুক্তি সেনাদের হস্তগত হয়।

 ১৩-১০-৭১- ভালুকা থেকে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের একটি দল মেদুয়ারী গ্রামের সরকার বাড়িতে ক্যাম্প করে। একদল মুক্তিসেনা তাদের উপর আতর্কিত আক্রমণ চালায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর পাকবাহিনীর ৮ জন নিহত হয় এবং অন্যন্যরা পালিয়ে যায়। ১৫-১০-৭১- আফছার ব্যাটালিয়নের কোম্পানী কমাণ্ডার মোঃ চাঁন মিয়া তার দলসহ মশাখালী রেল স্টেশনের দক্ষিণে করচঙ্গীর পুলের ধারে পাকবাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর পুলের বাঙ্কারে পৌঁছতে সক্ষম হন। পর পর ৯টি গ্রেনেড চার্জ করে বাঙ্কারগুলি দখল করা হয়। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক দ্বারা পুলটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পুল ধ্বংস করার পর মশাখালী স্টেশনে আক্রমণ চালানো হয়। ফলে একজন দারোগাসহ ১৫ জন রাজাকার ও পাকসেনা নিহত হয়। ১৩ টি রাইফেলসহ ১২ জন রাজাকার চাঁন মিয়ার নিকট আত্মসমর্পণ করে। একই দিন দিবাগত রাত্রে উক্ত কোম্পানী কমাণ্ডার তার দলসহ অন্য একটি অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০০ গজ রেলপথ নষ্ট করে দেন। মাইন বিস্ফোরণে মুক্তিসেনা আঃ মান্নান শহীদ হন।

 ১৬-১০-৭১- বিকল ৪-৩০মিনিটে কোম্পানী কমাণ্ডার মোঃ চাঁন মিয়া তার দলসহ গফরগাঁও থানার শীলা নদীর পুলে পাকসেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালান। ফলে পাকসেনাদের ৪ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়। একই দিন দিবাগত রাত্রে করচঙ্গী পুলির দক্ষিণে পাচগড়িয়া পুলে পাহারারত রাজাকারদের উপর আক্রমণ করেন। রাজাকার দল পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পুলটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ৭ জন রাজাকার অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।

 ২২-১০-৭১- মশাখালী রেল স্টেশনের পশ্চিমে শীলা নদীর পাড়ে পাকসেনাদের উপর মুক্তিসেনারা আতর্কিত আক্রমণ করেন। ৫ জন রাজাকার ও একজন পাকসেনা নিহত হয়। আত্মসমর্পণকারী ৪ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে এই যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা যুদ্ধ করার পর পাকবাহিনী ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

 ২৪-১০-৭১- ভালুকা থানার বিরুনীয়া গ্রামে পাকসেনারা লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ আরম্ভ করলে অধিনায়ক আফছার সাহেব চাঁন মিয়া কোম্পানীর মুক্তিসেনাদের নিয়ে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করেন। ২ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর ৫জন পাকসেনা আহত হয়। ২৬ অক্টোবর- প্লাটুন কমাণ্ডার আবদুল হালিম কাশীগঞ্জে পাকসেনাদের ঘাঁটি আক্রমণ করেন। পাকসেনারা উপায় না দেখে অয়ারলেস মারফত তাদের অন্যান্য ঘাঁটিতে সাহয্য চায়। ভালুকা, আছিম, ত্রিশাল, এবং গফরগাঁও থেকে পাকসেনারা কাশীগঞ্জে আসতে থাকে। কোম্পানী কমাণ্ডার মনিরউদ্দিন মিলিতভাবে তাদের দলের জোয়ানদের নিয়ে স্থানে যুদ্ধ আরম্ভ করেন। কাশীগঞ্জের মাহু ভূঞাসহ মোট ৬৫ জন রাজাকার নিহত এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ ১৭ জন গ্রেপ্তার করা হয়। ঘাঁটি সম্পূর্ণরুপে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে এবং মোট ৫২ টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।