পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৮

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ চট্টগ্রাম

শিরোনাম সূত্র তারিখ
২। চট্টগ্রামের সশস্ত্র প্রতিরোধের বিবরণ ………………………… ………………১৯৭১

সেদিন চট্টগ্রামে যেমন করে

স্বাধীনতা লড়াই শুরু হয়েছিল

সাক্ষাৎকারঃ লেঃ কর্নেল জিয়াউর রহমান[১]

 ৩রা মার্চ, ১৯৭১ সাল। সময় সকাল সাড়ে নয়টা। এই প্রথম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ব্যাপারে প্রথম প্রকাশ্য আলোচনা। এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটছিল। সামরিক বাহিনীর অন্যান্য বাঙ্গালী অফিসাররা অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের সবার মনেই একটি চিন্তাই পাক খেয়ে ফিরছিল- কি করা যায়? কি করবো? বিভিন্ন খবরাখবর নিয়ে তাঁরা বার বার ছুটে আসছিলেন মেজর জিয়ার কাছে। মেজর জিয়া তখন ছিলেন ৮ম ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের বাঙ্গালী অফিসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত।

 এরপর এলো ৭ই মার্চ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলেন। বল্লেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হও। ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল।

 ৮ম ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের অফিসাররা একে অস্ত্র তুলে নেবার অহ্বান বলেই মনে করলেন।

 পরদিন ৮ই মার্চ। আবার সেই সকাল। ওরা দুজন সবার অলক্ষ্যে আবার উঠে এলেন ছাদে। মেজর জিয়াউর রহমান আর ক্যাপ্টেন অলি আহমদ। বিদ্রোহ ঘোষণা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে দুজনে আলোচনা করলেন। ঠিক হলো বিদ্রোহ ঘোষণার জন্যে উপযুক্ত মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

 কিন্তু কখন আসবে সেই উপযুক্ত মুহুর্ত? কখন? কবে? এঁরা জানতেন এই বিশেষ মুহুর্তটি আসবে তখনই যখন তাদের বিদ্রোহের সমর্থনে পূর্ন আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসবে জনসাধারণ। এই মুহুর্তটি আসবে তখনই যখন শত্রুও বর্বরতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রমান সবার সামনে তুলে ধরা যাবে। এদিকে ইয়াহিয়া বসলো মুজিবের আলোচনায়। ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের বাংঙ্গালী অফিসাররা রুদ্ধশাসে অপেক্ষা করতে লাগলেন আলোচনার ফল কি হয়? আলোচনার অন্তরালে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের এক জঘন্যতম চক্রান্ত। সে চক্রান্ত বাঙ্গালীদের উপর হামলার। সে চক্রান্ত বাংলাদেশের উপর বর্বর অভিযানের।

 আলোচনা চলছিল। আর এদিকে আসছিল জাহাজ বোঝাই সৈন্য। বিপুল পরিমান অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ। জাহাজ বোঝাই যে সব সৈন্য আসছিল তাদেরকে দ্রুত বিভিন্ন স্থানে নিয়োগ করে পাঠানো হচ্ছিল।

 এমনি সময় ডাক এলো লেঃ কর্নেল এম, আর, চৌধুরীর কাছ থেকে ১৭ই মার্চ রাত সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে সামরিক আইন সদর দপ্তরে তার ডাকে প্রথম গুপ্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হইল- চারজন সামরিক বাহিনীর


  1. ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ৮ বেঙ্গলের সেকেণ্ড-ইন-কমাণ্ড হিসাবে মেজর পদে কর্মরত ছিলেন, পরবর্তীকালে লেঃ জেনারেল এবং রাষ্ট্রপতি। লেখাটি ২৬শে মার্চ, ১৯৭২ সংখ্যার ‘দৈনিক বাংলা থেকে সংকলিত।