পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৯

বাঙালী অফিসারের মধ্যে। এরা চারজন হচ্ছেন লেঃ কর্নেল এম, আর, চৌধুরী, মেজর জিয়াউর রহমান, নোয়াখালীর মেজর আমীন আহমদ চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ।

 ঃ কি মনে করছো? বৈঠকের শুরুতেই কর্নেল চৌধুরী পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন মেজর

 জিয়াকে।

 ঃ ওদের ভাবগতি দেখে পরিস্কার মনে হচ্ছে ওরা হামলা চালাবে।

 কর্নেল বললেন তাঁরও তাই ধারনা। কিন্তু কি করা যায়? সবারই মনে এই প্রশ্ন। এক- বিদ্রোহ। কর্নেল চৌধুরী সুস্পষ্ট ভাবে বল্লেন, সশস্ত্র অভ্যুত্থানই একমাত্র পথ। তিনি প্রথম বাঙ্গালী সামরিক অফিসার যিনি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের আহ্বান জানালেন।

 সশস্ত্র অভ্যূত্থান। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম ‘সিপাহী বিদ্রহের’ পর আর এক নতুনতর সিপাহী বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহ অবশ্যম্ভাবী। সশস্ত্র অভ্যুত্থান ছাড়া বিকল্প কিছু আর নেই।

 ওরা চারজন বাঙালী অফিসার বসলেন বিদ্রোহের পরিকল্পনা প্রণয়নে। ঠিক হলো ক্যাণ্টনমেণ্টের স্টেশন কমাণ্ডার একমাত্র বাঙ্গালী ব্রিগ্রেডিয়ার এম, আর, মজুমদারকে এ পরিকল্পনা থেকে বাইরে রাখতে হবে। ঠিক হলো। লেঃ কর্নেল এম, আর, চৌধুরীর নেতৃত্বেই তারা বিদ্রোহের প্রস্তুতি চালিয়ে যাবেন।

 এদিকে পাকিস্তানি হামলার প্রস্তুতি চলছিল পুরোদমে। বাঙালী অফিসারদের উপর তাদের সজাগ দৃষ্টি হয়ে উঠছিল আরও প্রখর। আর এরাও পাল্টা গোয়েন্দা বৃত্তি চালিয়ে সংগ্রহ করছিলেন পাক সেনাদের তৎপরতা। এরই মধ্যে কুমিল্লা থেকে বিস্তারিত খবর আসতে লাগল।

 কমাণ্ড ব্যাটালিয়ানকে আনা হল চট্টগ্রামে। তাদেরকে রাখা হতে লাগল শহরের অবাঙ্গালীদের বাড়ি বাড়ি। চট্টগ্রামের ২০তম বালুচ রেজিমেণ্টের সৈন্যরাও প্রতি রাতে সাদা পোষাকে অসামরিক ট্রাকে করে বেরিয়ে যেত শহরে। তাদের কাজ ছিল অবাঙালীদের সাথে মিলে লুটপাট করা।

 বাংলাদেশের উপর বর্বর হামলার প্রস্তুতি দেখতে এলেন পাক সেনাবাহিনীর জেনারেল হামিদ খান ২১শে মার্চ চট্টগ্রাম ক্যাণ্টনমেণ্টে তাকে আপ্যায়িত করা হলো মধ্যাহ্ন ভোজের। এই মধ্যাহ্ন ভোজেই পশ্চিমা সামরিক অফিসারদের কানাঘুষা আর জেনারেল হামিদের একটি ছোট্ট উক্তিতে বাঙালী অফিসাররা স্পষ্ট বুঝতে পারলেন দিন ঘনিয়ে এসেছে। হামলা অত্যাসন্ন।

 মধ্যাহ্ন ভোজে জেনারেল হামিদ বাঙালী অফিসারদের যেন চিনতেই পারেননি। তার যত কানাঘুষা আর কথাবার্তা চলছিল পশ্চিমা অফিসারদের সাথে।

 কি এত কানাঘুষা? কিসের এত ফিসফাস? সন্দিগ্ধ হয়ে উঠেছিল মেজর জিয়ার মন। কৌশলে একজনের সাথে কথা বলতে বলতে গিয়ে দাঁড়ালেন জেনারেল হামিদের ঠিক পিছনে। দাঁড়ালেন পেছন ফিরে। কথা বলতে লাগলেন সংগীটির সাথে আর দু’কান সজাগ রাখলেন জেনারেল হামিদের কথার দিকে।

 জেনারেল হামিদ তখন কথা বলছিলেন ২০তম বালুচ রেজিমেণ্টের কমাণ্ডিং অফিসার লেঃ কর্নেল ফাতমীর সাথে। অনেক কথার মধ্যে অকেটা যেন সামরিক নির্দেশের মতই কর্নেল ফাতমীকে বলে উঠলেন জেনারেল হামিদ- দেখ ফাতমী, অভিযান (এ্যাকশন) খুব দ্রুত ও কম সময়ের মধ্যে হতে হবে। আমাদের পক্ষে কেউ যেন হতাহত না হয়।