পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৩

 হেলিকপ্টার যখন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবতরণ করে তখন আশ্চর্যের সাথে দেখতে পাই লেফট্যানেণ্ট জেনারেল আবদুল হামিদ খান (সি-ও-এস, পাকিস্তান আর্মি), জেনারেল নওয়াজেশ, জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা (জি-ও-সি, ১৪-ডিভিশন, ঢাকা) এবং ব্রিগেডিয়ার আনসারী এরা সবাই হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে এসেছেন। কিন্তু ব্রিগেডিয়ার আনসার সেই হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম বন্দরে চলে যান। তাদেরকে দেখার সাথে সাথে আমরা সবাই আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলাম কারণ তাদের আগমন অপ্রত্যাশিত ছিল।

 জেনারেলদের আগমনের সাথে সাথে ২০-বালুচের সি-ও লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল ফাতমী ই-বি-আর-সি ‘তে আসেন। চা পানের পর জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা ২০-বেলুচের সি-ওর সাথে ২০- বালুচ অফিসে চলে যান। কিন্তু আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই যে, স্টার-প্লেট ছাড়াই তিনি গাড়িতে করে ছদ্মবেশে ২০ বালুচের অফিসে চলে যান। ই-বি-আর-সি অফিসার মেস-এ আমরা লাঞ্চ পার্টির ব্যাবস্থা করি। সেখানে প্রায় ৩০/৪০ জন অফিসার উপস্থিত ছিলেন। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ও ব্রিগেডিয়ার আনসারির জন্য আমরা প্রায় ১ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার তিনটার সময় পোর্ট থেকে আমাকে টেলিফোনে পার্টি শুরু করার নির্দেশ দিলেন।

 পার্টি হৈ-হুল্লোড় এবং আনন্দের সাথে শুরু হয়ে যায়। কথা প্রসংগে জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা মেজর মং কেও (এস-এস-ও) কে জিজ্ঞেস করেন যে অবসর জীবনে তিনি কি করবেন। তিনি বললেন, দেশের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বাইরের কিছু চিন্তা করা সম্ভব নয়। খাদেম হোসেন রাজা বললেন, থিংস আর গোইং টু বি নরমালাইজড ভেরী সুন। ডু-নট অরি। প্লান ফর ইওর ফিউচার।

 খাদেম হোসেন রাজা আমাদেরকে বললেন। দিস আনসারটেইনটি ইজ গোইং টু বি ওভার ভেরী সুন। ওয়ার্ক হার্ড। ডিভোট ইওর টাইম ফর ট্রেনিং।

 ব্রিগেডিয়ার মজুমদারও বেলা পৌনে চারটার দিকে হেলিকপ্টার যোগে ব্রিগেডিয়ার আনসারী, ক্যাপ্টেন মোহসিনসহ ই-বি-আর-সিতে আসেন। খাওয়া শেষ করার পর ব্রিগেডিয়ার মজুমদার আমাকে বলেন যে বিশেষ কারণে তিনি ঢাকা চলে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, “লুক আফটার ইওরসেল্ফ”

 তার সাথে ক্যাপ্টেন আমিন আহমদ চৌধুরী (এ-আর-ও-পি) মেডিক্যাল চেক আপ-এর জন্য ঢাকা আসেন। সব জেনারেল একই হেলিকপ্টারে ঢাকা রওনা হয়ে যান।

 ২৪শে মার্চ বিকেলে ই-বি-আর-সি তে থমথমে ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিলো। আমাদের পেরিমিটার গার্ড এর সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়।

 ২৫শে মার্চ সকালে কর্নেল এম, আর, চৌধুরী (চীফ ইন্সট্রাক্টর, ই-বি-আর-সি) আমাকে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র জোয়ানদেরকে দিয়ে দিতে বললেন। সমস্ত জোয়ানদের বিভিন্নভাবে অরগানাইজ করা হয়।

 এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, ষোলশহরে অবস্থিত অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেণ্টের বিশেষ কোন অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। ই-বি-সি থেকে দেড়শত রাইফেল তারা ধার চেয়েছিল। আমরা ঢাকা থেকে স্যাংশন পেয়ে তাদেরকে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেই। অষ্টম বেঙ্গলের কোয়ার্টার মাষ্টার ক্যাপ্টেন অলি আহমদ আজ নেবেন কাল নেবেন বলে আর নেন নাই। অষ্টম বেঙ্গলের কিছু সৈন্য এ্যাডভান্স পার্টি হিসেবে পাকিস্তানে চলে যায়। যাবার প্রস্তুতি হিসেবে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র, গাড়ী জমা দিতে হয়েছিল। খুব কম অস্ত্রশস্ত্র, গাড়ি বাকি সৈন্যদের কাছে ছিল।

 ২৫শে মার্চ সকাল থেকেই চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় জনসাধারণ ব্যারিকেড সৃষ্টি করতে শুরু করে। বায়েজীদ বোস্তাম থেকে ব্যারিকেড পরিস্কার করার জন্য ই-বিআর-সিকে নির্দেশ দেয়া হয়। সাথে বেলুচ রেজিমেণ্টের একটি কোম্পানীও ছিল।