পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪১

ক্যাপ্টেন শমসের মুবিনের

দৃষ্টিতে চট্টগ্রামের প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ ক্যাপ্টেন শমসের মুবিন চৌধুরী

২০-১০-১৯৭৩

 মার্চের ২২ তারিখে ক্যাপ্টেন হারুন (এসিস্ট্যাণ্ট উইং কমাণ্ডার, ই-পি-আর) কাপ্তাই থেকে এসে আমাকে বলল যে আমাকে মেজর রফিকের (এডজুট্যাণ্ট, ই-পি-আর) বাসায় যেতে হবে। ২২শে মার্চ রাতে আমি, ক্যাপ্টেন হারুন, মেজর খালেকুজ্জামান, ক্যাপ্টেন অলি মেজর রফিকের বাসায় গেলাম।

জনাব কায়সার এম-পি এ এবং ডাক্তার মান্নান এই দুজন আওয়ামী লীগ কর্মীও সেখানে ছিলেন। আমরা স্থির করলাম যে, এখানে আলাপ-আলোচনা করা নিরাপদ নয়, তাই আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেলাম। যাবার সময় আমরা খুব সতর্ক ছিলাম যে কেউ আমাদের অনুসরণ করছে কিনা।

আমরা আওয়ামী লীগ কর্মীদের তাদের পরিকল্পনা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললেন যে, শেখ সাহেব রাজনৈতিক সমাধানের আশা করছেন। আমরা বললাম যে, আমরা আপনাদের সাথে আছি। আপনাদের পক্ষ থেকে যদি ঠিক সময়ে কোন সাড়া বা আভাস পাই তাহলে আমরা কিছু একটা করতে পারি।

আমরা বুঝতে পারলাম যে তাদের কোন প্রস্তত্ততি নেই। আমরা বললাম যে আমরা মানসিক দিক থেকে প্রস্বত্তত আছি। আপনারা ঢাকা থেকে খবরাখবর নিয়ে আগামীকাল আমাদের জানাবেন।

২৩শে মার্চ মেজর রফিক আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে বললেন। কিন্তু কিছু একটা হবে কিনা তিনি তখনও জানেন না। আমাদের আলাপ-আলোচনার কথা মেজর জিয়াউর রহমানকে জনালাম। তাকে আমরা আবার আশ্বাস দিলাম যে আমরা সবসময় তার সাথে থাকব। এর আগে লেঃ মাহফুজকে পরিস্থিতি অবগত করানোর জন্য মেজর জিয়াউর রহমান আমাকে বলেছিলেন। আমি তাকে পরিস্থিতি বুঝিয়ে বললাম যে আমাদেরকে পাকিস্তানীরা সন্দেহ ও অবিশ্বাসের চোখে দেখছে। আমরাও তাদেরকে বিশ্বাস করতে পারছি না। মেজর জিয়াউর রহমান বলেছেন যে সিটিং ডাক-এর মত না থেকে নিরস্ত্র করতে আসলে তা প্রতিহত করবেন। মাহফুজ বলল যে পরিস্থিতি এত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে কিনা? তারপর সে বলল যে আচ্ছা ঠিক আছে।

২৪শে মার্চ মেজর রফিক আমাকে বলল যে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাদের কোন সিদ্ধান্ত এখনও আমাদেরকে জানাননি। ২৪শে মার্চ রাতে খবর পেলাম যে জনগণ রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরী করছে। এম ভি সোয়াত থেকে অস্ত্রশস্ত্র খালাস করতে জনগণ বাধা দিচ্ছে। জেটি থেকে সেনানিবাস পর্যন্ত রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে সেনাবাহিনীর লোকজন চলাফেরা করতে না পারে। এখবরটা আমি জিয়াউর রহমান সাহেবকে পাঠালাম।

আমাদের সৈনিকদের মাঝে একটা আতংক দেখতে পেলাম। কি হবে? কি করতে হবে না হবে? বাইরের ঘটনাবলীতে সৈনিকরাও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিল। আমি সারারাত সজাগ ছিলাম। ২৪শে মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দুইজন মেজর জেনারেল চট্টগ্রামে ইবিআর সি-তে এসেছিলেন। ঐদিন জানতে পারলাম দুজনের সাথে করে ব্রিগেডিয়ার মুজমদারকে (ই-বি-আর-সি কমাণ্ডার মার্শাল ল এডমিনিসট্রেটর) ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ খবরটা জিয়াউর রহমানকে জানাই। আমাদের সি-ও লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল জানজুয়া বললেন যে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়নি। তিনি বার বার বলছিলেন যে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের জায়গায় ব্রিগেডিয়ার আনসারীকে সামরিক প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়।

[১]


  1. বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র থেকে সংকলিত