পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৩

বললেন, “আজ থেকে আমি অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেণ্টের অফিসার আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সংকল্প ঘোষণা করলাম। এবং আমার নির্দেশেই সবকিছু চলবে। আপনারা সবাই আমার সাথে থাকবেন। এখন এখানে থাকা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। আমরা সবাই কালুরঘাটের দিকে যাব, সেখানে গিয়ে আমরা সবকিছু রিঅর্গানাইজ করব এবং আমাদের পরবর্তী কর্মস্থল নির্ধারণ করব।”

 ২৬শে মার্চ ভোরে আমরা কালুরঘাটের আর একটু দুরে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে আমরা বিশ্রাম নিলাম এবং রিঅর্গানাইজেশন করলাম। ২৬শে মার্চ এভাবে কেটে গেল।

 ২৭শে মার্চ সন্ধার সময় মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে গেলেন এবং ভাষণ দিলেন। ভাষণে তিনি বললেন যে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত আছি। আপনারা যে যেখানে আছেন, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে বললেন। তিনি বিশ্বের শান্তিকামী দেশগুলোর সাহায্য এবং সহযোগিতা কামনা করলেন। দেশবাসীকে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করতে বললেন।

 ২৮শে মার্চ সারা দিন আমি ঐ ভাষণ বেতার কেন্দ্র থেকে পড়ি।

 চট্টেশ্বরী রোডে অপারেশনঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের এ্যমবুশ করেছিল। আমরা ১০ জন ছিলাম। আমরা ওদের এ্যামবুশ কাউণ্টার করেছিলাম।

 ২৯শে মার্চ আসকের দীঘি অপারেশনঃ প্রায় ১২ ঘণ্টা এখানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে আমাদের গোলাগুলি বিনিময় হয়।

 ৩০শে মার্চ বাকুলিয়া গ্রাম অপারেশনঃ এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুটো গেরিলা কমাণ্ডোকে হত্যা করা হয়।

 এপ্রিল মাসের ১১ তারিখে কালুরঘাট ব্রীজ অপারেশন চালানো হয়। এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে আমি গুরতররুপে আহত হই। আমি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ি। তারপর আমাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। বন্দী শিবিরে রাখা হয়। এবং অশেষ নির্যাতন করা হয়। প্রত্যহ আমাকে মারধর করা হত। ঢাকা ক্যাণ্টনমেণ্টে আমাকে রাখা হয়। আমার সাথে আরো অনেক বন্দি ছিল। এদের কাউকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। জুন মাস পর্যন্ত আমার উপর অত্যাচার চলে। নভেম্বর মাসে আমার বিরুদ্ধে চার্জশীট আনা হয়। বলা হয়েছিল আমাকে কোর্ট মার্শাল করা হবে। কিন্তু ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে পাক বাহিনী আত্মসমর্পন করে। আমি মুক্ত হয়ে যাই।

 এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে কালুরঘাটে এসে গ্রামে আমরা শপথ গ্রহণ করলাম। শপথবাক্য পাঠ করেছিলেন মেজর জিয়াউর রহমানঃ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। এমন কি যদি প্রয়োজন হয় দেশের জন্য আমরা প্রাণ দেব।

 আমাদের ব্যাটালিয়নের হেডকোয়ার্টার ছিল গ্রামে। ৩০শে মার্চ বাকুলিয়া গ্রামে অপারেশন চালিয়ে আমরা দুটো কমাণ্ডোকে হত্যা করি।

 চকবাজারে আমরা প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরী করেছিলাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ট্যাঙ্ক আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমরা পিছু হটে যাই।

 চট্টগ্রাম কালুরঘাটের যুদ্ধঃ ১১ই এপ্রিল সকাল ৮টার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভীষণ আর্টিলারি ফায়ার শুরু করে। আমি এবং মেজর হারুন আমাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায়