পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৪

 ৩৫ জন। ওদের সংখ্যা ছিল ১০০-এরও উপর। আমাদের একজন সিপাহী এই যুদ্ধে মারা যায়। মেজর হারুন ব্রীজের উপর আহত হন। আহত হবার পর অতিকষ্টে তাকে পুলের ওপর দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটতে নির্দেশ দিলাম। আমাকে একজন সৈন্য চলে যেতে বলল। আমি বললাম যে তোমরা যাও আমি আসছি। আমি রয়ে গেলাম। হঠাৎ আমি নিজেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ঘেরাও অবস্থায় দেখলাম। অন্য সবাই পুলের অপর পারে চলে যেতে সক্ষম হয়। আমি ট্রেঞ্চ থেকে বের হয়ে চারদিকে চাইনিজ স্টেনগান দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখলাম। তারপর একটা গুলি এসে আমার কোমরে লাগে এবং আমি গুরুতররুপে আহত হয়ে পুলের উপর পড়ে গেলাম। আমি ভাবতে লাগলাম যে শত্রুরা আমাকে ধরে ফেলবে। আমি ওদের হাতে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মহত্যা করে মৃত্যুকে শ্রেয় বলে স্থির করলাম। কিন্তু স্টেনগানটা দুরে ছিল। তাই এটা সম্ভব হল না। আমি ভাবছিলাম ওরা আমাকে ধরে মেরে ফেলবে কিন্তু শত্রুরা আমাকে ধরে নিয়ে যায় এবং বন্দী করে রাখে। তারপর আমাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেয়।

স্বাক্ষরঃ শমসের
বাংলাদেশ আর্মি

চট্টগ্রামে সশস্ত্র প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ ব্রিগেডিয়ার হারুন আহমেদ চৌধুরী[১]

১৭-১-১৯৭৫

 ২২শে মার্চ আমি চট্টগ্রামে আসলে ক্যাপ্টেন রফিক আমাকে বললেন, ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট অনেক বাঙ্গালী অফিসার আছেন, তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেশের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর এবং বিদ্রোহ সম্পর্কে কথাবর্তা চালাও। আমি ক্যাপ্টেন রফিকের কথামত ২৩শে মার্চ ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের মেসে যাই এবং আমার কোর্স মেট ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী (বর্তমানে লেঃ কঃ) ক্যাপ্টেন অলি আহমদ (বর্তমানে মেজর) লেঃ মাহফুজুর রহমান (বর্তমানে মেজর), লেঃ শমসের মুবিন চৌধুরী (বর্তমানে মেজর) এর সঙ্গে দেখা করে কথাবার্তা বলি। মেজর শওকত তখন মেসে ছিলেন। কিন্তু যেহেতু তিনি সিনিয়র, সেহেতু তার সঙ্গে কথা বলতে সাহস পাইনি।

 উপরে বর্ণিত তরুণ অফিসারবৃন্দকে নিয়ে আমি ক্যাপ্টেন রফিকের বাসায় সন্ধায় আসি এবং সেখান থেকে ক্যাপ্টেন রফিকসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এর অধ্যাপকের বাসায় পৌঁছাই তখন রাত অনুমান সাড়ে ন'টা। আমার নিজের একটি ভক্সওয়াগান গাড়ি ছিল। ঐ গাড়িতে করে আমরা গিয়েছিলাম। ঐ সভাতে এমপিএ আতাউর রহমান কায়সার, ডাঃ মান্নানসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সভায় দেশের সর্বশেষ অবস্থা, আমাদের ক্ষমতা, পাকিস্তান থেকে সৈন্য নিয়ে আসা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। সামরিক বাহিনী গতিবিধি দেখে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, পাকিস্তানী সেনারা সত্তুর বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে একটা কিছু করতে যাচ্ছে। সভায় ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের তরুন অফিসারবৃন্দের সঙ্গে আমাদের ই-পি-আর বাহিনীর অফিসারবৃন্দের (২জন) মাঝে সমঝোতা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যদি পাক বাহিনী আক্রমণ করে আমরা বাঙ্গালীরা একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়বো এবং সমুচিত জবাব দেব।

 ২৪শে মার্চ সকালে আমি কাপ্তাই চলে যাই। যাবার পূর্বে আমি এবং ক্যাপ্টেন রফিক আর একবার মিলিত হই। কথা হয় যে, পাকিস্তানীরা যদি আক্রমণ করে অথবা ইঙ্গিত দেয় তাহলে আমরা বিদ্রোহ করবো এবং ক্যাপ্টেন রফিক আগে বিদ্রোহ করলে সে আমাকে খবর দেবে। রফিক আরও বললো যে, আমি ইন্সপেকশনের


  1. ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন