পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৬৪

 “ওহ! ওর টেলিফোনটা খারাপ। এইমাত্র ওর ওখান থেকে এলাম। সুন্দর এক কাপ চা খাওয়ালো।”

 “ইয়ার! কভি হামকো ভি লে চলো চায়ে পিনে কে লিয়ে। মেজর ইকবাল বললেন।”

 “কালকেই নিয়ে যাব।”

 এরমধ্যে চারজন সিপাই সুবেদার মোবিনকে বেধে ফেললো। বাইরের কেউ জানতেও পারলো না আমার রুমে কি ঘটছে। মেজর ইকবাল টেলিফোন রেখে দিলেন। আমি একটি বেয়োনেট চেয়ে নিয়ে সুবেদার মেজরের গলায় ধরে বললাম, আমার অধীনে এতদিন কাজ করে নিশ্চয়ই বুঝেছেন আমি কেমন। এখনই মেজর ইকবালের সাথে আপনাকে কথা বলতে হবে- আমি যেভাবে বলবো ঠিক সেভাবেই জবাব দিয়ে কথা না বললে মেরে ফেলবো। বুঝতে পারছেন?

 ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমার কথায় তিনি সম্মতি জানালেন। আমি ইকবালের নম্বরে ডায়েল করে সুবেদার মোবিনের কানের কাছে রিসিভার ধরলাম। ওপাশের কথা শোনার জন্য আমি মাথা নীচু করে রিসিভারের কাছে কান রাখলাম।

 “হ্যালো স্যার, আমি সুবেদার মোবিন বলছি।”

 “মোবিন সাহেব, আপনার কাছে আর কেউ আছে কি? মেজর ইকবাল প্রশ্ন করেন। আমি মাউথ পিসে হাত চাপা দিয়ে মোবিনকে বলতে বললাম। বুলন এখানে কেউ নেই। সুবেদার আমার নির্দেশ মত তাই বললেন।

 “কিন্তু ক্যাপ্টেন রফিক তো ওখানে ছিলেন, কোথায় গেলেন তিনি। এবারও আমি টেলিফোন চেপে ধরে তাকে যেভাবে বলতে বললাম তিনি সেভাবেই জবাব দিলেন, ক্যাপ্টেন রফিক এই মাত্র সুবেদার মেজর ইতবারকে নিয়ে কোথায় যেন বেরিয়ে গেলেন।”

 “কোই গড়বড়?”

 “না স্যার। সব কুছ ঠিকঠাক হ্যায়। সুবেদার মোবিন অত্যান্ত অনুগত জবাব দিলেন।

 “বহুত আচ্ছা! আজ রাতের জন্য আপনিই ডিউটি অফিসার। টেলিফোনের পাশেই অপেক্ষা করবেন। চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।”

 “ঠিক হ্যায় স্যার-”

 বিরাট একটা দুশ্চিন্তা কেটে গেলো। বন্দী সুবেদার মোবিনের প্রহরায় একজন বাঙ্গালী জেসিওকে রাখা হলো যাতে সে আবার টেলিফোনে কিছু উল্টাপাল্টা বলতে না পারে।

 রাত ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে সিনিয়র বাঙ্গালী জেসিও সুবেদার জয়নাল খবর দিলেন যে, কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আমরা চট্টগ্রাম শহরে ই-পি-আর এর সকল পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য আটক করতে সক্ষম হলাম। সীমান্ত ফাড়িগুলোতেও আমার সাংকেতিক বার্তা দুটি পৌঁছে গেছে বলে খবর পেলাম। বার্তা দুটি পেয়েই রাত ৮টা ৪০মিনিট থেকে ৯টা ৩০মিনিটের মধ্যে তারা সব ফাড়ির পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের পরাভুত করা হয়। ২৪শে মার্চের রাতে যখন আমি দ্বিতীয় বার্তাটি স্থগিতে রাখতে বলি, সে নির্দেশ পাওয়ার আগেই প্রথম নির্দেশ অনুযায়ী কয়েকটি ফাঁড়িতে বাঙ্গালী সেনারা কাজ সমাধা করে ফেলে। পরে অবশ্য দ্বিতীয় বার্তাটি স্থগিত হয়ে গেলে তারা আর চট্টগ্রামের দিকে রওনা হয়নি।

 ২৫শে মার্চ রাতে দ্বিতীয় বার্তায় চুড়ান্ত নির্দেশ লাভের পর অনেক সেনাদলই চট্টগ্রামের দিকে রওনা হয়ে পড়ে।