আলী স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেন এই স্থানের নাম মুজিবনগর নামকরণ করেন। ১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত মুজিবনগর ছিল অস্থায়ী সরকারের রাজধানী।
সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রধান প্রশ্ন ছিল সরকারের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোথায়? জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। তার সাথে আমাদের চিন্তার (বিস্তার) যোগাযোগ রয়েছে। আমরা জানতাম বঙ্গবন্ধু শত্রুশিবিরে বন্দী। কিন্তু আমরা তা বলতে চাইনি। পাক বাহিনী বলুক এটাই আমরা চাচ্ছিলাম। কারণ আমরা যদি বলি বঙ্গবন্ধু পাক শিবিরে, আর তারা যদি তা অস্বীকার করে তাহলে সমূহ বিপদের আশংকা রয়েছে। আর আমরা যদি বলি তিনি দেশের ভেতরে থেকে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তখন হানাদারর বলে বসবে তিনি বন্দী আছেন।
আম বাগানের অনুষ্ঠানে ভর দুপুরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার লোক জমায়েত হয়। হাজারো কণ্ঠে তখন উচ্ছারিত হচ্ছিল জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বীর বাঙ্গালী অস্ত্রধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর, ইত্যাদি শ্লোগান।
আমার কাজ ছিল দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করে সাংবাদিকদের ফেরত পাঠানো। দুপুরের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলো। সাংবাদিকদের গাড়ীযোগে ফেরত পাঠানো হল। মন্ত্রিসভার সদস্যরা ফিরেন সন্ধ্যায়। অনুষ্ঠানের পর কলকাতা গিয়ে সাংবাদিকরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংবাদ পরিবেশন করেন।
কলকাতার বাসায় ফিরে তাজউদ্দিন ভাইকে জিজ্ঞাসা করি কলকাতায় পাকিস্তান মিশনের হোসেন আলীকে আমাদের পক্ষে আনা যায় কিনা। ফরিদপুরের আত্মীয় শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে হোসেন আলীর সাথে যোগাযোগ করা হল। হোসেন আলী প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে রাজী হলেন।
গংগার ধারে একটি হোটেলে দু’জনের সাক্ষাৎ হল। হোসেন আলী আমাদের পক্ষে আসতে রাজী হলেন।
ইতিমধ্যে বিশ্বে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্যে লণ্ডনে ফোন করি। লণ্ডনের গেনজেজ হোটেলের মালিক তসদ্দুক আহমদ আমার পুরাতন বন্ধু। এক কালে তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার সাথে যোগাযোগ করে বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর ফোন নাম্বার পেলাম। বিচারপতি চৌধুরী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব থেকেই লণ্ডনে ছিলেন। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য।
বিচারপতি চৌধুরীর মাধ্যমে লণ্ডনের তৎকালীন কাউণ্টি কাউন্সিলের সদস্য এলভারস্যান, শ্রমিক নেতা ডোনাল্ড চেসয়ার্থ-এর সাথে যোগাযোগ করি। ডোনাল্ড আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। লণ্ডনে ব্যারিষ্টারী পড়ার সময় তার সাথে আমার পরিচয়। পরিচয় সূত্রেই বন্ধুত্ব। ডোনাল্ড ও অন্যান্যদের আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য সহযোগিতা করার আবেদন জানাই।
লণ্ডনে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ডোনাল্ডের যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছিলাম। তার সাথে টেলিফোনে কথা হল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সার্বিক সাহয্যের আশ্বাস দিলেন। সে সময় রকিব সাহেব সিলেট থেকে কলকাতা আসেন। তিনি লণ্ডনে যাবেন। তার কাছে আবু সাঈদ চৌধুরীকে একটা চিঠি দিলাম।
চিঠিতে স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে মত গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে আহ্বান জানাই। চৌধুরীর সাথে আমার ফোনেও যোগাযোগ হল।
১৮/১৯ তারিখের দিকে ওয়াশিংটন থেকে হারুনুর রশীদ এলেন। তিনি বিশ্ব ব্যাংকে চাকুরী করেন। তার কাছে বিদেশে অবস্থানরত বাঙ্গালীদের মনোভাব জানতে পারলাম। ওয়াশিংটনে এ এম মুহিত ও অন্যান্যদের