পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
১০৬

স্থাপন করেন। তিনি একজন বড় নেতা ছিলেন। তার চিন্তাকর্ম ও ভাবধারার সাথে দলের এবং কেবিনেটের খুব কম লোকেররই মিল ছিল। কেবিনেটের মধ্যে মনসুর ভাই ও হেনা ভাই একাগ্র মন নিয়ে পরিশ্রম করেছেন। তবে তাজউদ্দিন ভাই- এর সাথে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবী কমবেশী যাই হোক না কেন, সমান থাকার কারণেই হোক, এরা খুব একাত্ম হতে পারেননি।

 ইয়াহিয়ার কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসন চলছে। এই বিচারের বিরুদ্ধে আমরা বিদেশে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে আমাদের বন্ধু ও হিতাকাঙ্ক্ষীদের কাছে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। লণ্ডনে ডোনাল্ড চেসওয়ার্থকে চিঠি লিখে তাকে জানাই সেখানে বাংলাদেশ কমিটির সাথে যোগাযোগ করে জেনেভা কনভেনশনের চার নং ধারা মতে একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি না। কোন যুদ্ধকালীন অবস্থায় সম্মুখ সমরে যারা লিপ্ত, তাদের গ্রেফতার ও বিচারের জেনেভা কনভেনশনে বিধি নিষেধ রয়েছে। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর বিচার আইন সিদ্ধ ছিল না। পাকিস্তান জেনেভা কনভেনশন মানতে বাধ্য থাকায় এই মর্মে কোন বৃটিশ নামী কৌশলীর একটি মতামত গ্রহণ করা আবশ্যক।

 তাছাড়া নোবেল পুরস্কার বিজয়ী শন ম্যাকব্রাইডের যুক্তিপূর্ণ ও জ্ঞানগর্ভ লিখিত মতানুযায়ী জেনেভাতে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আমরা আবেদন করতে পারি। ডোনাল্ড ও আবু সাঈদ চৌধুরী পৃথক পৃথক ভাবে লিখে জানান, এ ব্যাপারে আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। তাজউদ্দিন ভাই কে এ সব অবহিত করার পর তিনি আনন্দিত হন। পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী হিসেবে এ ব্যাপারে খন্দকার মোশতাকের মত নেয়া প্রয়োজন। তাজউদ্দিন ভাই আমাকে খন্দকার মোশতাকের সাথে দেখা করতে পাঠান। মোশতাক সাহেব তার পরিবার নিয়ে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। দেখা করার জন্যে সেখানে গিয়ে আমাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো। সেখানে আরো কিছু লোক তার সাথে গল্প গুজবে ব্যস্ত ছিলেন। সবাই চলে যাবার পর আমার ডাক পড়লো। মোশতাক ম্যাকব্রাইডের লেখা মতামত না পড়েই একটা মন্তব্য করেন। তার এ বক্তব্য আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না। তিনি বলেন “You must decide, whether you want Sheikh Mujib or Independence, You can't have both.“আমি এ কথা শুনে একেবারে স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। সাথে সাথে উত্তর দিলাম, “We want both, Sheikh without Independence or Independence without Sheikh both are incomplete.“আমি বুঝলাম, তার মন্তব্য আকস্মিক নয়। এর পিছনে একটা যোগ সূত্র কাজ করছে। শেখ মুজিবকে আনতে হলে স্বাধীনতার প্রশ্নে আমাদের আপোষ প্রয়োজন। এটাও এক ধরনের ব্ল্যাক মেইল বলে আমার মনে হলো। আমি যে উদ্দেশ্যে গেছি মোশতাক সুকৌশলে যে তা এড়িয়ে গেলেন, তা বুঝতে আর বাকি রইল না। খুব বিরক্ত হয়ে ভগ্ন হৃদয়ে সেখান থেকে ফিরে এসে তাজউদ্দিন ভাই কে সব জানালাম।

 প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ ব্যাপারে অগ্রসর হবার জন্যে আমি ডোনাল্ড ও আবু সাঈদ চৌধুরী কে চিঠি লিখি। ম্যাকব্রাই ও মিঃ চৌধুরী আন্তর্জাতিক রেডক্রসের মাধ্যমে পাক সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। জেনেভা কনভেনশন Article-4- এ কার্যকরী কোন ব্যবস্থা উল্লেখ না থাকায় আমাদের কোন পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে সফল না হলেও আন্তর্জাতিক বিশ্বে এর একটি বিশেষ গুরুত্ব ছিল। ইয়াহিয়া সরকার এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। ম্যাকব্রাইড পরে ইসলামাবাদে গিয়ে আমাদের পক্ষে বলেন যে, শেখ মুজিবের বিচার আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।...

 পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোশতাক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্যদের অগোচরে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় আসার চেষ্টা করেন। একই সাথে তিনি দলীয় নেতা, কর্মী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেন।

 বিভিন্ন সময় বিদেশ থেকে নানা ধরনের লোক প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে আসতেন। অনেকের সাথেই তিনি দেখা করতেন। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নিজে সাক্ষাতের পূর্বে তিনি আমাকে পাঠাতেন। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের