পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
১১০

 সীমান্তের ওপার থেকে মানুষ আসা শুরু হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ আসছে কে কার আগে স্বাধীন বাংলাদেশ দেখবে। শিল্পী মুস্তফা আজিজ বলেন, তিনি আমার একটি স্কেচ করবেন। তার ভাই মুস্তফা মনোয়ার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছিলেন।

 স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী আসলো। হাজার হাজার মানুষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নতুন উদ্দীপনা নিয়ে দেশ গড়ার আহ্বান জানান। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাম্প্রদায়িক দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। রাতে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ীতে কলকাতা ফিরে আসি।

ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম
জুন, ১৯৮৩।


মৌলভী আসাবুল হক

 বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর আমরা গ্রামে গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা করি। চট্টগ্রামের এম এ হান্নান ও এম এ মান্নান সাহেব এবং পটিয়া জেলার আওয়ামী লীগের কর্মীদের সাথে একযোগে কাজ করে যেতে থাকি। এদিকে আনুমানিক ২১/২২ শে মার্চ তারিখের রাতে পাক বাহিনী হঠাৎ করে চট্টগ্রাম নেভাল বেইস -এর শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায়। আমরা এর প্রতিবাদ মিছিল বের করলে পাক বাহিনী আমাদের বাধা দেয়। ফলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মূলতঃ এই ঘটনার পর থেকেই পাক বাহিনীর সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আমাদের প্রধান কেন্দ্র ছিল স্থানীয় রেষ্ট হাউজ। আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে এম, এ, হান্নান, এম এ মান্নান, জহুর আহমদ চৌধুরী, ছাত্র নেতা ইউসুফ সহ আমরা অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করি।

 ২৬শে মার্চ সকাল ৮টায় আমরা ঢাকার সংবাদ জানতে পারি। পটিয়ায় এসে দেখি সেখানে লোকে লোকারণ্য। ডাঃ ফারুক কয়েকজন ইপিআর নিয়ে কাপ্তাই চলে যান এবং কয়েকজন পাঞ্জাবী সৈন্য হত্যা করে পুনরায় পটিয়া চলে আসেন। পাঞ্জাবী সৈন্যরা যাতে আমাদের এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য প্রতি রাস্তার মোড়ে চেকপোষ্ট বানানোর ব্যবস্থা করে আমি ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরে চলে যাই। রেষ্ট হাউসে বিভিন্ন নেতা ও কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করে সমগ্র শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা করি এবং ক্যাণ্টনমেণ্ট অবরোধ করি। কয়েকজন পলায়নপর পাঞ্জাবীকে ধরে হত্যা করা হয়। ঢাকা হতে বিপুল সংখ্যক সৈন্য চট্টগ্রাম আসে এবং কুমিরাতে আমরা তাদের প্রতিরোধ করি। কিন্তু তারা টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয়। অবশ্য দুইদিন পরই শহর পাক বাহিনীর আয়ত্তাধীনে চলে যায়।

 এরপর আমরা পটিয়াতে চলে আসি। তখন পটিয়াই ছিল আমাদের প্রধান কেন্দ্র। ডাঃ মান্নান, প্রফেসর নূরুল ইসলাম চৌধুরী, মেজর জিয়া ও আমি বেতারের ট্রান্সমিটার এনে পটিয়া মাদ্রাসায় স্থাপন করি। এখান হতে মেজর হারুনের নেতৃত্বে আমরা হানাদারদের মোকাবেলা করি এবং ১২/১৪ দিন যুদ্ধ চলে। এই সংঘর্ষ চলাকালে আমি প্রধান রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অসংখ্য লাশ দেখতে পাই। পাক বাহিনী আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং সন্তোষজনক উত্তর পেয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ফেরার পথে একটা পাক বাহিনীর গাড়ী আমাকে উঠিয়ে মিউনিসিপ্যাল অফিসে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। কিন্তু জনৈক মেজর আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আমাকে ছেড়ে দেয়। দু’দিন শহরে থাকার পর আমি পটিয়া চলে আসি। এর মধ্যে ক্যাপ্টেন হারুন আহত হলে তাকে চিকিৎসার জন্যে চিরিঙ্গা পাঠানো হয়। এরপর আমি পটিয়া ক্যাম্পে কাজ করতে থাকি। ১৬ই এপ্রিল শুক্রবার সকাল আটটায় নিজ বাড়ীতে যাই। এদিন দুপুর পর্যন্ত বিমান থেকে গুলি চালানো হয়। এর ফলে পশ্চিম মোড়ে কতগুলো দোকান ধ্বংস ও বেশ কিছুসংখ্যক লোক নিহত হয়। স্থানীয় মসজিদে গিয়ে দেখি মসজিদ রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। মাদ্রাসার দু’জন মৌলবী ও কিছুসংখ্যক ছাত্র মারা গিয়েছে। কলেজেরও যথেষ্ট ক্ষতি সাধিত হয়।