রফিককে প্রদান করি। যেসব ছেলে ট্রেনিং নেয়ার জন্যে এসেছিল তাদের প্রতি সাতজনের একটি গ্রুপ করে মোট ৩৬ টি গ্রুপ তৈরী করি। প্রত্যেক গ্রুপে একজন কমাণ্ডার ছিল। তারপর মেজর রফিকসহ চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে তিনটি চ্যানেল খোলা হয় এবং কয়েকজন গাইড নিযুক্ত করা হয়। ফটিকছড়ির দায়িত্ব দেয়া হলো জহুরুল হককে এবং মিরেরসরাই-এর দায়িত্ব দেয়া হল নূর মোহাম্মদকে। তিনজন গাইড নিযুক্ত করা হলো এবং প্রত্যেকটি গ্রুপ হতে একজন করে কুরিয়ার নিযুক্ত করা হলো। প্রত্যেক গ্রুপকে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র দেয়া হয় এবং সমস্ত গ্রুপের প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হলো সার্জেণ্ট এ, এইচ, এম, মাহি আলম চৌধুরীকে। তারপর সবাইকে শপথ গ্রহণ করানো হলো। মেজর রফিকুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এনাম, ফ্লাইট লেফটেনেণ্ট সুলতান, হান্নান, অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ, রফি সাহেব, সাবের সাহেব, আজগরী, জালালউদ্দিন প্রমুখ নেতৃবর্গ এখানে উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস বানচালের প্রতিজ্ঞা নিয়ে ৩রা আগষ্ট আমরা বাংলাদেশে প্রবেশ করি। প্রথমে পাগলাছড়িতে মিজোদের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন মিজো মারা যায় এবং বাকী মিজোরা পালিয়ে যায়। রাজবাড়িতে পাক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১৩ জন পাঞ্জাবী ও ২ জন মিজো মারা যায় এবং একটা জীপ ধ্বংস হয়। ৩য় সংঘর্ষ হয় ফটিকছড়ির বিবিরহাটে। উক্ত সংঘর্ষে ৭ জন পাঞ্জাবী ও ১৪ জন মুজাহিদ মারা যায়। পাঞ্জাবীরা তখন পিছু হটতে বাধ্য হয়। রাউজান কলেজের সামনে ৪র্থ সংঘর্ষে ৫ জন পাক সেনা নিহত হয়। দুটি চাইনিজ ষ্টেন, তিনটি চাইনিজ রাইফেল, ৫ টি বয়নেট এবং এক পেটি গুলি আমরা পাই। ৫ম সংঘর্ষ হয় গোমদণ্ডী স্টেশনে। এই সংঘর্ষে ৪০/৪৫ জন রাজাকার নিহত হয়। হাবিলদার ফজলুও নিহত হন। মুন্সিরহাটের ষষ্ঠ সংঘর্ষে ৮ জন রাজাকার ও দু’জন দালাল নিহত হন। কয়েকজন রাজাকারের বাড়ীও পুরিয়ে দেয়া হয়। সারোয়াতলীতে সপ্তম সংঘর্ষে ৩৫ জন রাজাকার নিহত হয়। ২০ টি রাইফেল, ১টি এল, এম, জি, ৩ পেটি গুলি আমরা উদ্ধার করি।
১৪ই আগষ্টকে বানচাল করার জন্যে আমরা ১৩ই আগষ্ট পতেঙ্গা থেকে মধুনাঘাট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়ার ষ্টেশনের টাওয়ারগুলো নষ্ট করে ফেলি। ঐদিন রাতে আমরা বিভিন্ন স্থানে ৩৬টি মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শত্রুর ওপর আঘাত হানি। একই রাত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেমন—পাহাড়তলী পাঞ্জাবী ক্যাম্প, দেওয়ানহাটের ক্যাম্প, চকবাজার ক্যাম্প, লালদীঘির পশ্চিমের স্থান, চাকতাই ক্যাম্প, কালুরঘাট ক্যাম্প, দোহাজারী ও পটিয়া ক্যাম্প, বিবিরহাট ক্যাম্প, রাউজান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ক্যাম্পে গেরিলা পদ্ধতিতে অপারেশন চালাই। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ঐ রাত্রে বিভিন্ন অপারেশনে ১২৫ জন পাঞ্জাবী, ২৩০ জন রাজাকার মারা যায়। ফলে পাঞ্জাবী, রাজাকার ও দালালরা গ্রাম ছেড়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও থানাগুলোতে আশ্রয় নেয়। দিনের বেলা তারা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দিতো এবং মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করতো। এই পরিস্থিতিতে আমরা পাক বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণের পরিকল্পনা করি। একদিন ভোর সাড়ে চারটায় আমরা থানা আক্রমণ করি। এই অতর্কিত আক্রমণের জন্যে পাক সৈন্যরা প্রস্তুত ছিল না। ফলে প্রায় ২০০ জন পাঞ্জাবী ও রাজাকার মারা যায় এবং থানার বহু পুলিশ ও রাজাকার কে আমরা আটক করি। বেশীর ভাগকে হত্যা করি। থানা থেকে ২০ পেটি বুলেট, ২৫০টি রাইফেল, তিনটি এল, এম, জি উদ্ধার করি। এখান থেকে আমরা খরনা রেলওয়ে ষ্টেশনে রাজাকার ঘাঁটি আক্রমণ করি। কিছু সংখ্যক রাজাকার নিহত হয়। ৩টি চাইনিজ ষ্টেন, ৫টি চাইনিজ রাইফেল, ৫টি রাইফেল, ৩ হাজার বুলেট, ২টি রিভলবার উদ্ধার করি। কদুরখিল (?) গ্রামের রাস্তায় আমরা বেশ কয়েকটি রাইফেল উদ্ধার করি। সার্জেণ্ট আলমের পায়ে গুলি লাগলে আমরা কমলাছড়ি পাহাড়ে আশ্রয় নেই। তখন গ্রুপ কমাণ্ডার মহসীন, শাহজাহান ইসলামাবাদীও আমার সঙ্গে ছিলেন।
কমলাছড়িতে মোস্তাক আহমদ ও পটিয়া থানার আনসার কমাণ্ডার আবদুল আলীমের সংগে দেখা হয় এবং তাদের সংগে আমি একটি বৌদ্ধমন্দিরে অবস্থান করি। সেখানে ই পি আর বাহিনীর সুবেদার মেজর টি এম আলী এবং তার অধীনে ১৫০-২০০ জন ই পি আর ও বেঙ্গল রেজিমেণ্টের জোয়ান ছিলেন। কিন্তু সুবেদার আলী আমাকে বন্দী করে রাখেন। অবশ্য তিনদিন বন্দী রাখার পর মেজর রফিকের সুপারিশপত্র পেয়ে টি এম আলী