পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
১২৯

 রেষ্ট হাউস থেকে আমরা ই,পি, আর হেড কোয়ার্টার টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তৎকালীন ই, পি আর অফিসের হেড ক্লার্কের সাথে আমাদের টেলিফোনে আলাপ হয়। তোকে জরুরী সংবাদ ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ধারণা দেই। তার মাধ্যমে ক্যাপ্টেন রফিককেও সংবাদ ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য বলা হয়।

 কাপ্তাই ই, পি আর শাখাতেও টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয়। ক্যাপ্টেন হারুন তার পরদিন সকালেই সমস্ত শাখার জোয়ানদিগকে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে ক্যাপ্টেন রফিকের সাথে মিলিত হবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি সকালে এসে কালুরঘাটে পৌঁছেন।

 ২৫শে মার্চ গভীর রাত্রে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেণ্ট হতে টেলিফোনে আওয়ামী লীগ অফিসে বলা হয় সেনানিবাসের চারপাশে বেশ কিছু ছাত্র-যুবক ও উৎসাহী জনতাকে পাঠানোর জন্য। সংবাদ পাওয়া মাত্র মাইকযোগে সকলকে অবহিত করা হয়।

 ২৬শে মার্চ খুব সকালে আমি আতাউর রহমান কায়ছার ও এম, এ, মান্নানসহ সেনানিবাসের দিকে যাই। পথিমধ্যে পাঁচলাইশ থানার সম্মুখে বেঙ্গল রেজিমেণ্টের জোয়ানদিগকে দেখতে পাই। উক্ত রেজিমেণ্টের অধিনায়ক মেজর জিয়উর রহমান তার কোম্পানী নিয়ে কালুরঘাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। এখানে আমরা জানতে পারি যে সেনানিবাসের E.B.R. সেণ্টারে প্রশিক্ষনরত বাঙ্গালী জোয়ানদিগকে রাতে পাক-বাহিনী হত্যা করেছে। আমরা কালুরঘাটে যেয়ে জানতে পারলাম যে, জিয়াউর রহমান বোয়ালখালী থানার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। আমরা মেজর জিয়াউর রহমানকে বোয়ালখালী থানার কুসুমডাঙ্গা পাহাড়ের নিকট তাঁর জোয়ানদের সহ দেখতে পাই; তাঁকে শহরের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাই এবং শহর সংলগ্ন এলাকায় শিবির স্থাপন করার জন্য অনুরোধ জানাই। তবে ২৭শে মার্চ তিনি কালুরঘাট আসবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কাপ্তাই হতে আগত ক্যাপ্টেন হারুন ও ১৫০ জন ই, পি, আর মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে একত্রিত হন।

 কালুরঘাট হতে চলে আসার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে রেডিও মারফতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কথা প্রচার করতে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬শে মার্চ কালুরঘাট ট্রান্সমিটার সেণ্টার হতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করি। প্রচারে আমাকে সহযোগিতা করেন রেডিও অফিসের রাখাল চন্দ্র বণিক, মীর্জা আবু মনসুর, আতাউর রহমান কায়সার ও মোশাররফ হোসেন প্রমুখ এম, পি, এ ও এম, এন, এ গণ।

 ২৭শে মার্চ বিকালে মেজর জিয়াউর রহমান রেডিও মারফত স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর ঘোষণার বক্তব্য নিয়ে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। তাই সেদিন রাত্রে আমি মীর্জা আবু মনসুর ও মোশারফ হোসেন ফটিকছড়িতে অবস্থানরত প্রাক্তন মন্ত্রী এ, কে, খান সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করি। পুনঃ ঘোষণার জন্য তিনি একটি খসড়া করে দেন। আমরা ফটিকছড়ি হতে কালুরঘাট ট্রান্সমিটার সেণ্টারে উপস্থিত হই। সেখানে মেজর জিয়াউর রহমানের নিকট আমি এ, কে, খান কর্তৃক লিখিত খসড়াটি দেই। পুনরায় ২৮শে মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান সর্বাধিনায়ক হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

 ২৮শে মার্চ বিকালে মেজর জিয়া তৎকালীন মেজর মীর শওকত ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্মুখযুদ্ধ পরিচালনার ব্যাপারে আলোচনা করেন। সেদিন রাত্রে চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি ১০ খানা ট্রাক ও বাস যোগাড় করি এবং সন্ধ্যার দিকে সেগুলি হস্তান্তর করি। পরিকল্পনা মোতাবেক তৎকালীন ফুলতলী বাংলা বাহিনী হেড কোয়ার্টার হতে বাংলা বাহিনীর জোয়ানগণ মীর শওকতের নেতৃত্বে রাত্রে কালুরঘাটে পৌঁছেন।

 এখানে মীর শওকত আক্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে জিয়ার সাথে পরামর্শ করেন এবং উভয়ই ফুলতলী হেড কোয়ার্টারে চলে যান। সেদিন নৌঘাঁটি আক্রমণ করা যায়নি। পরের দিন ২৯শে মার্চ সকালে ফুলতলী বাংলা