বাহিনীর হেড কোয়ার্টারে গেলাম। মীর শওকত ও মেজর জিয়াউর রহমানকে সেখানে পাওয়া গেল না। জানতে পারলাম এক কোম্পানী সৈন্য নিয়ে তাঁরা কক্সবাজার চলে গেছেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
৩০শে মার্চ পাকবাহিনী কালুরঘাট রেডিও ট্রান্সমিটার সেণ্টার লক্ষ্য করে বিমান হামলা করে। সেখানে সুবেদার ছাবেদ আলী তাঁর প্লাটুন নিয়ে অবস্থান করছিলেন। বিমান হামলার পর শহরের বাংলা বাহিনীর জোয়ানগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম শহরে ই, পি আর প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে। চকবাজারে ক্যাপ্টেন হারুন, ও লেঃ শমসের মবিন চৌধুরী তাঁদের প্লাটুন নিয়ে যুদ্ধ করেন। শমসের মবিন ও ক্যাপ্টেন হারুন চকবাজার ও কালুরঘাট যুদ্ধে আহত হন। অবশ্য পাকবাহিনী শমসের মবিনকে ধরে ফেলে। এভাবে পর পর কালুরঘাট, নয়াপাড়া, কাপ্তাই পাকবাহিনীর কবলে চলে যায়। কিন্তু রামগড়, বাগানবাড়ী, খাগড়াছড়ি, চিকন ছড়া আমাদের দখলে ছিল। ২রা মে পাক-বাহিনীর তীব্র আক্রমণে রামগড়ও পাকবাহিনীর কবলে চলে যায়। বাংলা বাহিনীর সকল জোয়ান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুমে আশ্রয় নেয়। কয়েকদিনের মধ্যে হরিণা নামক স্থানে জোয়ানদের জন্য শিবির স্থাপন করা হয়। এখানে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়। জুন মাসে হরিণা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ক্যাম্প প্রধানের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত আমি উক্ত শিবিরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। তাছাড়া পূর্বাঞ্চলীয় বেসামরিক বিষয়াদি এবং সামরিক বাহিনীর লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবেও নিজ দায়িত্ব পালন করি।
ওয়াহিদুল হক
১৯৭১ সালের আন্দোলন হঠাৎ করে হয়নি। এর পেছনে সংগ্রাম ও চেতনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাসের সাথে সবাই পরিচিত। তবে আমার বিশ্বাস যে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন এই চেতনা প্রবাহের ধারাকে এগিয়ে নিয়েছে সবচেয়ে বেশী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা সবসময়ে এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে। নিজেদের বৃত্তে এই আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকেনি এবং এর চরিত্রও কেবলমাত্র কলা-ক্রিয়ার মধ্যে সীমিত ছিল না।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্রশতবার্ষিকী উপলক্ষে যেসব সভা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তার মূল সুর ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা। স্বাভাবিক কারনেই পাকিস্তান সরকার এর বিরোধিতা করে। কিন্তু যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা এই উৎসাহ উদ্যাপনে সৃষ্টি হয় তা থামিয়ে রাখার মত শক্তি কারও ছিল না। এই উদযাপনের সরাসরি ফসল হচ্ছে ‘ছায়ানট’ যা পরে আমাদের গভীরতম বিশ্বাস ও মূল্যবোধ প্রসারের অন্যতম কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। অতএব বাঙালীদের রাজনীতি সব সময় তার সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করেছে। হয়ত বা অন্য যে কোন দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের চেয়েও।
১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর খবর আসে যে মহাপ্রলয় হয়েছে তখন প্রথমে খুব একটা কাউকে নাড়া দেয়নি। ঐ সময় আমরা কয়েকজন খবরের ভাষা বুঝি যে ওখানটায় একটা কিছু ঘটেছে। তাড়াহুড়ো করে ‘দুর্যোগ নিরোধ কমিটি’ গঠন করে নগ্ন পদযাত্রা শুরু করি রাস্তায় “ভিক্ষা দাওগো পুরবাসী” গানটা গেয়ে। আমরা তখনকার দিনেই প্রায় ৫০ হাজার টাকা উঠাই। এর মধ্যে দুর্যোগের ব্যাপকতার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্যোগবাসীদের সাহায্য করার জন্য আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতেই কাজ করতাম। জায়গার নাম ছিল চর কাজল