২। কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ অঞ্চল। এখানে গেরিলা ফৌজের সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ হাজার।
৩। টাংগাইলে প্রথম দিকে গেরিলা নেতা কাদের সিদ্দিকীর সাথে ভুল বোঝাবুঝি হলেও পরে মতৈক্যের ভিত্তিতে আমাদের প্রায় পাঁচ হাজার যোদ্ধা অংশ নেন। কাদের সিদ্দিকী দলীয় সংকীর্ণতায় থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কর্মীরা তার নেতৃত্বে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৪। খুলনা জেলার সাতক্ষীরায় সৈয়দ কামেল বখতের নেতৃত্বে প্রায় ২ হাজার সদস্যের গেরিলা ফৌজ গড়ে ওঠে। এখানে যুদ্ধের একপর্যায়ে মুজিব বলে কথিত একদল লোকের হাতে বীরযোদ্ধা কামেল মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া বাগেরহাট সদর, বিষ্ণুপুর, রঘুনাথপুর প্রভৃতি এলাকায় গেরিলা ফৌজের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার। এই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর সংখ্যা খুব কম ছিল।
৫। রাজশাহী জেলার আত্রাই অঞ্চলে আফতাব মোল্লার নেতৃত্বে প্রায় দু’হাজার সদস্যের গেরিলা ফৌজ গড়ে ওঠে। সেখানে আমাদের গেরিলারা স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্য এক বামপন্থী নেতা অহিদুর রহমানের সাথে তাদের সংঘাত হয়।
৬। ফরিদপুরের বোয়ালমারী এবং মাদারীপুরের একটি অঞ্চলে মিয়া সাদেকুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকশত সদস্যের গেরিলা ফৌজ গড়ে উঠেছিল।
৭। চট্টগ্রাম শহর ও রাইজান এলাকায় শামসুল আলমের নেতৃত্বে কয়েকশত সদস্যের গেরিলা ফৌজ গড়ে ওঠে। এখানে মুক্তিবাহিনী বা নিয়মিত সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়নি। এখানে আমাদের যোদ্ধারা প্রধানতঃ চট্টগ্রাম শহর এলাকায় গেরিলা তৎপরতা পরিচালনা করেছিলেন।
৮। নোয়াখালীর ফেনী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল কয়েকশত সদস্যের এক গেরিলা ফৌজ।
আগেই বলেছি: কেবল সেই সব অঞ্চলেই গেরিলা ফৌজ গঠিত হয়েছিল যেখানে সরকারী মুক্তিবাহিনী (বেংগল রেজিমেণ্ট, ইপিআরসহ) ছিল না কিংবা থাকলেও সংকীর্ণতার কারণে আমাদের কর্মীরা ওতে যোগ দিতে পারেনি। দেশের অন্য সকল এলাকায় কর্মীরা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে অধিনায়কের নির্দেশে যুদ্ধ করেছেন—কোনো প্রকার দলীয় বিভেদাত্মক কার্যকলাপ তারা চালাননি। সেই প্রেক্ষিতে যুদ্ধশেষে হিসেব অনুযায়ী সারা দেশে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আমাদের সংগঠনের কর্মীদের সংখ্যা সব মিলিয়ে ছিল প্রায় ত্রিশ হাজার। দেশের অভ্যন্তরে একমাত্র শিবপুর এলাকায় আমাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। প্রশিক্ষণের ব্যাপারে যুদ্ধকালে যে ক’জন সামরিক অফিসার আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন তাঁরা হলেন: মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর আবুল মঞ্জুর, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর এম এ জলিল। এরাঁ ছাড়াও মেজর হায়দার, ক্যাপ্টেন মাহবুব, ক্যাপ্টেন এনাম, ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নাম উল্লেখযোগ্য। এঁদের সহযোগিতা ছাড়া আমদের কর্মীদের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ কঠিন হয়ে পড়তো। প্রশিক্ষণের সাথে সাথে তাঁরা অস্ত্রের ব্যবস্থাও করতেন। মেজর জিয়ার জেড ফোর্সে আগস্টের দিক থেকে আমাদের প্রায় এক হাজার যোদ্ধা অংশ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া যুদ্ধের শেষ দিকে আমরা দুটি প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলেছিলাম: একটি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম সংলগ্ন সীমান্তের ওপারে এবং অন্যটি কিশোরগঞ্জ সংলগ্ন সীমান্তবর্তী এলাকায়।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যুদ্ধকালে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় কমিটির পক্ষে সরাসরি নেতৃত্ব বা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব ছিল না, ফলে যেখানে কমিটির যে সংগঠন বেশী শক্তিশালী ছিল সেখানে অন্য সংগঠনের সদস্যরা তার অধীনে মিলিতভাবে যুদ্ধ করতো। সংগঠন হিসেবে আমাদের কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটি নিজেদের মধ্যে মোটামুটি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে পারতো। যেখানে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি সেখানে পূর্বঘোষিত নির্দেশানুযায়ী কর্মীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আমাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধের কোনো পর্যায়েই সংকীর্ণতাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়নি। জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল স্রোতধারার সাথে আমরা মিশে