পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২০৫

জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার প্রভৃতি স্থানসমূহে একের পর এক দখল করে আমরা দখলকৃত বাংলাদেশে প্রবেশ করি এবং প্রতিটি জায়গায় বেসামরিক প্রশাসন গঠন করি।

 গোয়াইনঘাট এবং জৈন্তাপুর এলাকা খান সেনারা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করে এবং সদর থানার উত্তরাঞ্চলও বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২৬শে মার্চ খান সেনারা সিলেট শহরে ত্রিশজনেরও অধিক লোককে হত্যা করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কুতুবউদ্দিন, আবদুল মুসাবিবর, পঞ্চা বাবু ও পাচু সেন। নয় মাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো শেরপুরের যুদ্ধে ক্যাপ্টেন আজিজের সাহসিকতা। এই যুদ্ধে ক্যাপ্টেন আজিজ মাত্র কয়েকজন সৈন্য নিয়ে খান সেনাদের একটি বিরাট বাহিনীর সংগে দীর্ঘ সাত দিন ধরে প্রাণপণে যুদ্ধ করেন।

দেওয়ান ফরিদ গাজী
গণপরিষদ সদস্য
(সাবেক এম, এস, এ, সিলেট-৮)
২৪ জুন, ১৯৭৩।

দেবব্রত দত্ত গুপ্ত

 ১৯৭১ সনের ২৩শে মার্চ পর্যন্ত আমি নোয়াখালীর চৌমুহনী কলেজে অধ্যাপনা করেছি ২৩ শে মার্চ সন্ধ্যায় আমি তৎকালীন কিছু স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছ হতে জরুরী নির্দেশ পেয়ে কুমিল্লা শহরে চলে আসি এবং ২৫শে মার্চ স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরেই, শহর ছেড়ে কুমিল্লার মুরাদনগর থানার চুড়লিয়া গ্রামে চলে যাই। গ্রামে স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনমত গঠন ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাজ শেষ করে ১৫ই এপ্রিল '৭১ কুমিল্লার গ্রামাঞ্চলের বেশ কিছুসংখ্যক যুবক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বুড়িচং থানার নাইঘর নয়নপুর হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বক্সনগরে গিয়ে পৌঁছি। তারপর বক্সনগর হতে সোনামুড়া হয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলাতে যাই এবং সেখানে যুদ্ধকালীন বাংলাদেশ মিশন ও প্রশাসনিক দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করি। সে সময় বাংলাদেশ সরকারের পূর্বাঞ্চলীয় বেসামরিক প্রশাসনিক দপ্তর ছিল আগরতলা কৃষ্ণনগর এলাকায় কয়েকটি বাড়ীতে। অবশ্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তখন আগরতলা শহরের ‘কুঞ্জবন’ এলাকায় এবং ছাত্র নেতৃবৃন্দের অধিকাংশই অবস্থান করতেন আগরতলার গোলবাজারের “শ্রীধর ভিলায়”।

 যেহেতু আমি অধ্যাপনা জীবনে বাংলাদেশের ভাষা-সংস্কৃতি, জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত ছিলাম সুতরাং তৎকালীন স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক ও অন্যান্য পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আমাকে ডঃ হাবিবুর রহমানসহ পূর্বাঞ্চলের যুব প্রশিক্ষণ, সমন্বয় সাধন এবং পরিচালনার দায়িত্বের সাথে জড়িত থাকতে অনুরোধ করেন। আমিও এই ধরনের একটি পবিত্র সুযোগের সন্ধানেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। সুতরাং সুযোগ যখন এল, তখন এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে সানন্দে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লুম। সময়টা ছিল তখন ১৫ই মে, ১৯৭১ইং।

 ১৯৭১ সনের মার্চ মাসে, দেশের ভিতরে স্বাধীনতা সংগ্রাম তীব্র হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, কৃষক, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের আবাল বৃদ্ধ বনিতা নির্বিশেষে, হাজার হাজার মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্যে এবং বেঁচে থাকার তাগিদে, সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল দিয়ে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবেশ করতে আরম্ভ করে। বাংলাদেশের মানচিত্রের দিকে তাকালে এটা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যায় যে, ভৌগলিক দিক দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশের সীমান্তের অবস্থান অত্যন্ত সন্নিকটবর্তী এবং সহজগম্য। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ও