পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২০৮

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে উপযুক্ত করে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়, সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়াও এই ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।

 গ। হালকা অস্ত্রের প্রশিক্ষণ (Light Arms Training)

 এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ছিল, এই প্রশিক্ষণার্থী যুবকদেরকে পি,টি,করানো, ‘গ্রেনেড’ নিক্ষেপ, দেশের ভিতরে শত্রুদের যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘মাইন’ পোঁতা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ‘গেরিলা’সহ বিভিন্ন পর্যায়ের সংগ্রামী যুবক, সৈনিক, পুলিশ, আসনার ও অন্যান্য পর্যায়ের লোকদের সাথে গোপন এবং প্রয়োজনীয় যোগাযোগসহ তত্ত্ব এবং তথ্য সরবরাহের কাজে (রেকি এবং ওপি করা) সহযোগিতা করা ইত্যাদি।

 প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল একটা জনযুদ্ধ। সুতরাং এই জনযুদ্ধের প্রধান শক্তির উৎস ছিল দেশের আপামর সাধারণ মানুষ। যেহেতু আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা বিভিন্ন কারণে গেরিলা পদ্ধতির যুদ্ধকেই বেছে নিয়েছিলাম সুতরাং এই যুদ্ধে দেশের জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া জয়লাভ করা কোন অবস্থাতেই সম্ভবপর ছিল না। কারণ, জনতা হলো ‘পানি’ এবং গেরিলারা হলো ‘মাছ'। সুতরাং পানি দূষিত হলে যেমন মাছ বেঁচে থাকতে পারে না, তেমনি জনতার সহযোগিতা না পেলেও ‘গেরিলা’ পদ্ধতির জনযুদ্ধ কোনো অবস্থাতেই সাফল্যমণ্ডিত হয় না। আমাদের পরম সৌভাগ্য এই যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের সাধারণ মানুষ, যে কোন মূল্যের বিনিময়ে নিজেদের গেরিলারূপী দামাল ছেলেদেরকে আশ্রয়, প্রশ্রয়, খাদ্য ও বিভিন্নমুখী সহযোগিতা প্রদান করতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করেনি। সুতরাং দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সবচেয়ে বড় শক্তি ও সম্পদ ছিল এই দেশের সাধারণ মানুষ।

 ভিত্তি ফৌজ (V.F.) এবং যুব প্রশিক্ষণ

 দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়, দেশের ভিতর হতে লক্ষ লক্ষ ছাত্র যুবক ও কৃষকেরা যখন প্রয়োজনীয় অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে উপস্থিত হচ্ছিল, তখন বিভিন্ন যুক্তিসঙ্গত কারণেই শিবিরে অবস্থানকারী সব শ্রেণীর লোকদেরকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভবপর ছিল না। তাছাড়া বিদেশে থেকে যেমন এক বিপুলসংখ্যক অস্ত্র প্রার্থীর জন্য তাদের ইচ্ছানুযায়ী প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহ করা দুঃসাধ্য ছিল, তেমনি Arms without command and control-অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি এবং ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে, এইসব ধারণায় ভাবান্বিত হয়ে সবাইকে ‘অস্ত্র’ প্রশিক্ষণ না দেবারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।

 প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, যেহেতু আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রাথমিক পর্যায়ে গেরিলা পদ্ধতির ছিল সুতরাং কোন অবস্থাতেই Conventional Army-র সাথে সরাসরি মোকাবেলা করা যুদ্ধ-বিজ্ঞান সম্মত হতো না। দ্বিতীয়ত, একটি যুবককে হালকা (লাইট) এবং মাঝারি ধরনের অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে হলেও কমপক্ষে ৬ মাস সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু তৎকালীন পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী, সব যুবককে অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য এত সময় দেয়া আমাদের পক্ষে কোনো অবস্থাতেই সম্ভবপর ছিল না। তাছাড়া এখানে উল্লেখিত এইসব সমস্যা ব্যতীত তৎকালে অন্যান্য বহুবিধ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও আদর্শগত সমস্যা এবং কারণ ছিল, যার জন্যও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারী সব মানুষকে ‘অস্ত্র’ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা তৎকালীন নেতৃবৃন্দ এবং কর্মকর্তাগণ প্রয়োজন মনে করেননি। সুতরাং ‘অভ্যর্থনা শিবির’ হতে যে সমস্ত যুবককে ৪৫ দিনের প্রশিক্ষণের জন্য যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রিক্রুট করা হত, সে সব যুবকের মাঝ থেকে একমাত্র তাদেরকেই ‘সামরিক’ প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণ করা হতো যাদের শিক্ষাসহ শারীরিক, মানসিক ও প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক যোগ্যতা ছিল। এই পদ্ধতি ও ব্যবস্থার ফলে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর যে হাজার হাজার যুবকদের সরাসরি সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হতো না, সে সব