পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৩১

সোনালী ব্যাংকের সমস্ত টাকা নিয়ে যাবার দায়িত্ব দেন। ভারতীয় ডেমোলিশন পার্টির এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ব্যাংকের স্ট্রং রুমের দরজা খুলতে গেলে সমস্ত রুম বিধ্বস্ত হয়। ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৫লাখ ৩ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এখান থেকে প্রায় ২কোটি টাকা আগরতলা ৯১ নং বিএসএফ হেডকোয়ার্টারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি এম আর সিদ্দিকী ও কর্নেল রবের মাধ্যমে মজিব নগর সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়। এ অভিযানে ইলিয়াস সাহেব ছাড়াও মানিক চৌধুরী ও মেজর জামান অংশগ্রহণ করেন।

 ২৮ শে এপ্রিল মৌলভী বাজার শহর পাকবাহিনীর কবলে চলে যায়। ২৯ শে এপ্রিল আমরা শ্রীমঙ্গল হতে কয়েক হাজার ব্যারেল পেট্রল, ৩০লাখ সিগারেট, কয়েক হাজার মণ চাউল, ২৫০টি ট্রাক্টর, ৩০০টি ট্রাক, ২০০ জীপ ও মটরকার বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে নিয়ে যেতে সক্ষম হই।

 আমি ভারতের কৈলাশ্বরে অবস্থান কালে শরণার্থীদের ক্যাম্পে পৌঁছিয়ে দেয়া এবং মুক্তিফৌজে ভর্তি করার ব্যবস্থা করি। মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ যোগানোর জন্য কৈলাশ্বর মুক্তিফৌজ হতে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আমি,মোজফ্ফর সাহেব ও সুবেদার চৌধুরী মাঝে মাঝে পাক বাহিনীর ক্যাম্প গুলোতে আক্রমণ করতাম। কৈলাশ্বরে ভগবানগরের যুব ক্যাম্প আমি স্থাপন করি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করি।

 সেপ্টেম্বর মাসে চাতলাপুর হতে মুক্তিফৌজের ক্যাম্প টিলা বাজারে স্থাপিত হয়। তখন আমাদের ৪ নং সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল সি আর দত্ত এবং উক্ত সেক্টরের রাজনৈতিক লিয়াঁজো ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী। আমাকে কৈলাশ্বর ও ধরমনগরের রাজনৈতিক লিয়াঁজো অফিসার নিয়োগ করা হয়। ইতিমধ্যে চীফ অব স্টাফ কর্নেল রবকে চেয়াম্যান এবং ডক্টর হাসানকে প্রশাসনিক অফিসার নিয়োগ করে হবিগঞ্জ জোনাল কাউন্সিল গঠন করা হয়। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিহারের চাকুলিয়া ক্যাম্পে ২২ জন যুবককে আমার নেতৃত্বে ট্রেনিং এর জন্য প্রেরণ করা হয়। তাদের ট্রেনিং শেষে কলকাতা হয়ে কৈলাশ্বরে পাঠিয়ে দেই। এ সময় আমি, মোজাফফর আহমেদ, মেজর জেনারেল কে বি কেশব রাও-এর সাথে বিভিন্ন যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা করি। আমি প্রত্যক্ষভাবে মেরলীচড়া পাক ক্যাম্প, আলীনগর পাক ক্যাম্প, চাতলাপুর বি ও পি ইত্যাদি ক্যাম্পে বিভিন্ন সময় আক্রমণ করি।

 ২রা ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে সমশেরনগর (কমলগঞ্জ থানা) আক্রমণ করে। ভীষণ যুদ্ধ হয় এবং এ যুদ্ধে মেজর গুরুমসহ বেশ কয়েকজন মিত্রসৈন্যা ও মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৩রা ডিসেম্বর সকালে তুয়াবুর রহীম, এমপিসহ আমি চাতলাপুর বিওপি ও সমশেরনগর স্কুলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। এসময় ভারতের মুক্তিছড়া থেকে মেজর আনোয়ারুজ্জামানের নেতৃত্বে ৩টি বেঙ্গল রেজিমেণ্টের কোম্পানি কমলাগঞ্জ থানা হেডকোয়ার্টারে পাঠানো হয়। তাদের আমি ২০ জন গাইড সংগ্রহ করে দেই। ৪ঠা ডিসেম্বর বিকেলে সিএনসি স্পেশাল ব্যাচ ও মুক্তিযোদ্ধাসহ আমরা কড়াইয়াহাড়ি মুক্তিযোদ্ধার প্রধান ক্যাম্পে এসে যোগ দেই। ৫ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সৈয়দ মহসীন আলীর নেতৃত্বাধীন এক কোম্পানী মুক্তিবাহিনী যেগি দেয় এবং মুন্সিবাজার (কমলাগঞ্জ থানা) পাক বাহনীর অবস্থানের ওপর হানা দেয়। যুদ্ধে পাক বাহিনীর পতন ঘটে এবং পাক বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৬ই ডিসেম্বর রাজনগরের তেরকপাশা স্কুলে এক সমাবেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি।৭ ই মুক্তিফৌজের কোম্পানীকে রাজনগর থানার বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। ৯ ই ডিসেম্বর মৌলভীবাজার আসি। ঐদিন মৌলভীবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উঠানো হয়। তুয়াবুর রহীমকে মৌলভীবাজারের প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০শে ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সরকারী বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। একটি মাইন বিস্ফোরণের ফলে ক্যাম্পের কমাণ্ডার সোলায়মানসহ ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আমি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই।

 মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুলাউড়া থানার শরীফপুর ইউনিয়নের দশ হাজার লোকের বসতিপূর্ণ অঞ্চল মুক্ত ছিল এবং এ অঞ্চলে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রশাসন চালানো হয়েছিল। প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন তুয়াবুর রহীম