পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৪৮

থাকে। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক অধিকৃত অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ করার জন্য পশ্চিম বাংলা সীমান্তে যুবশিবির খোলার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রাথকি অবস্থায় এই যুবশিবিরগুলো স্থানীয় ভারতীয় জনগণের আর্থিক সাহায্যপুষ্ট ছিল। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার যুবশিবিরগুলো আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করে। যুবশিবিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক ট্রেনিং-এর পর তাদের উচ্চতর ট্রেনিং-এর জন্য ভারতের অভ্যন্তরে পাঠানো হত।

 দুধকুমার নদীর পূর্বতীরস্থ নাগেশ্বরী এবং ভুরঙ্গামারী থানার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল হানাদারকবল মুক্ত ছিল। এই সমস্ত অঞ্চলের জনগণের সাহায্যের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়েছি। মুক্তাঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তার জন্য নাগেশ্বরী থানার সুবলপাড় বন্দরে এবং মাদারগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট ছোট ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছিল। পশ্চিম বাংলার কুচবিহার জেলা শহর উত্তরাঞ্চলের সাবেক গণপরিষদ সদস্যবৃন্দের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সরকারের Northern Zone অফিস হবার পরপরই মুক্তাঞ্চলে চিকিৎসা ও ঔষধপত্রের তীব্র অভাব জরুরী ভিত্তিতে মিটানো হয়। মুক্তাঞ্চলের সোনাহাটে প্রধান মেডিকেল কেন্দ্র স্থাপন করে সেখান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে উক্ত মেডিকেল কেন্দ্র খোলা হয়। বাংলাদেশ সরকারের কুচবিহারস্থ Northern Zone Medical Centre থেকে মুক্তাঞ্চলে ঔষধপত্র সরবরাহ করার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আসাম প্রদেশে ৮২তম ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারে যোগাযোগ করে সেখান থেকে ঔষধপত্র লাভ করেছি এবং উক্ত অঞ্চলের জনগণকে বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। মুক্তাঞ্চলে খাদ্য সংকট দেখা দিলে আমি তা অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে Dorthern Zone-এর সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক গণপরিষদ সদস্য জনাব মতিয়র রহমানকে মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করতে আহ্বান জানাই। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তিনি '৭১ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সোনাহাটে এক বিরাট গণসমাবেশে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। স্থানীয় কর্মীদের সহায়তায় উক্ত টাকা বিতরণ করা হয়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশ সরকারের Northern Zonc-এর প্রচার বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করা হয়েছিল। মুক্তাঞ্চালের জাতীয় ঐক্য অক্ষুন্ন রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আমরা সাধ্যমত চালিয়েছিলাম।

 বাংলাদেশের সাবেক ই,পি,আর বাহিনীর ক্যাপ্টেন নওয়াজেদ-এর অধীনস্থ সাহেবগঞ্জ ঘাঁটির গেরিলা যোদ্ধা এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আসাম সীমান্তের সোনাহাট ঘাঁটির গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যদের এক যৌথ অভিযানের পর ১৭ই নভেম্বর ভূরঙ্গামারী মুক্ত হয়। এর পরই অত্র থানার আন্ধারীঝাড় বাজার থেকে পাক বাহিনী তাদের গোলন্দাজ বাহিনী সরিয়ে পিছু হটে গেলে ভূরুঙ্গামারী থানা শত্রুমুক্ত হয়। এই এলাকা মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে আশ্রিত জনগণ বিধ্বস্ত ভূরঙ্গামারীতে দলে দলে প্রবেশ করতে থাকে। মাতৃভূমিতে পা দিয়েই জনগণের আনন্দ-উল্লাস আমাদেরকে অভিভূত করে। ডিসেম্বরে সারা বাংলাদেশের মুক্তির সাথে সাথে জনগণ এক অভূতপূর্ব আনন্দে উল্লসিত হয়েছে। দীর্ঘ পঁচিশ বছরের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে জনগণ বাঙ্গালী জাতির এক ঐতিহাসিক বিজয় বলে মনে করেছে।

শামসুল হক চৌধুরী
গণপরিষদ সদস্য, (সাবেক এম,পি,এ)
রংপুর-১২
১৭মে, ১৯৭৩।


অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হক

 স্বাধীনতা যুদ্ধ আরম্ভ হবার প্রাক্কালে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলাম। সত্তরের নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে পাক সামরিক জান্তার ক্রিয়াকলাপ অনেকের মত আমার