পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৫১

 বাংলাদেশ সহায়ক সমিতি আমার বায়োডাটা পাঠিয়েছিল পাতিয়ালা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাতে আমার ঠিকানা ছিল আগরতলার। জুনের শেষের দিকে আমি কলকাতায় আগরতলা থেকে পুনঃপ্রেরিত পাতিয়ালা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চিঠি পাই। বিভাগীয় প্রধান ঐ চিঠিতে আমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগ দেবার আহ্বান জানান। তিনি আরো জানান যে, এজন্য তারা আমাকে এক হাজার রুপী মাসিক বেতন দিতে পারবেন। এই প্রস্তাব আমি সানন্দে গ্রহণ করি এবং জুলাই মাসের ১ তারিখে পাতিয়ালা রওয়ানা হই। এর পর থেকে আমি বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার দিন পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম।

 পাতিয়ালায় অবস্থানকালে আমি রেডিও মারফত মুক্তিযুদ্ধের খবর ও পরিস্থিতি সম্পর্কোবহিত থেকেছি। সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিয়ে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। দেশ স্বাধীন হলে বর্তমান নেতৃত্ব সরকার পরিচালনায় সমর্থ হবেন কিনা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক এরূপ নানা সংশয় বিদ্যমান ছিল স্থানীয় লোকদের মধ্যে। পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা একটা ব্যাপক প্রোপাগাণ্ডা হিসেবে অনেকে মনে করতো। শরণার্থীদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ধারণা ছিল। আমি তাদের যথাসাধ্য বোঝাতে চেষ্টা করেছি। আমি এই ভাবে তাদের ধারণা পরিবর্তনের প্রয়াস পেয়েছি যে, আমরা শিক্ষকরা রাজনীতির সঙ্গে কখনো সরাসরি জড়িত ছিলাম না, তবে কেন আমাদেরকে এভাবে খালি হাতে দেশত্যাগ করতে হলো?

 পাতিয়ালায় থাকাকালে ভারতের দূরবর্তী এলাকাসমূহে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে জনমত গঠনের আরো কয়েকটি প্রক্রিয়া আমি প্রত্যক্ষ করি। যেমন-সিনেমা হলগুলোতে বাংলাদেশে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, শরণার্থীদের অন্তহীন দুর্ভোগ ও দুর্দশা সম্বলিত সংবাদচিত্র প্রদর্শনী, বাংলাদেশ সম্পর্কে নেয়া বিভিন্নজনের সাক্ষাৎকারের ছবি ও ক্যাপশন প্রদর্শনী ইত্যাদি। এমনকি ইতিপূর্বে আগরতলা প্রবাসকালে ভারতীয় সংবাদপত্র আমার যেসব বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার নিয়েছিল তার কিছু কিছু পাতিয়ালায়তেও প্রদর্শিত হয় বলে আমি জানতে পারি।

 ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হবার পর আমি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করি এবং ২৫ ডিসেম্বর তারিখে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছি।

মোহাম্মদ শামসুল হক
(উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
জুন, ১৯৮৪।


মোহাম্মদ হুমায়ুন খালিদ

 মেঘালয়ের তুরাতে এফ জে সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং সেণ্টারে দীর্ঘ আট মাস মোটিভেশনের দায়িত্বে ছিলাম। এই কয়মাসে প্রায় ১৬ হাজার মুক্তিবাহিনীর সদস্য আমার হাত দিয়ে শপথ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ঢোকে। আমি নিজেও দীর্ঘ চার মাস গেরিলা ট্রেনিং গ্রহণ করি। টাঙ্গাইলের গেরিলা নেতা কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে সর্বপ্রথম আমার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হয়। মুক্তিবাহিনীর ছেলেদের ট্রেনিং গ্রহণ করার পর টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহের ভাল ভাল ছেলেদের সরাসরি কাদের সিদ্দিকীর নিকট পাঠিয়ে দেই।

 কাদের সিদ্দিকীর জন্য কিছু (উচ্চমানের) অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে আমি ভারতীয় উক্ত সেক্টরের বিগ্রেডিয়ার সাচ্চু সিংহের সঙ্গে দেনদরবার করি। এই খবর পাক বাহিনী পায়। ফলে আমার স্ত্রী-পুত্রপরিবারকে বন্দী করে তাদেরকে কঠোর ইণ্টারগেশন করে। অবশ্য অন্য কোন অত্যাচার না করে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। আমি এই খবর ভারতে থেকে পাই। আরো জানতে পারি যে পাক সেনারা আমার পালক পুত্র (কলেজের ছাত্র) সোহরাব হোসেনকে বন্দী করে টাঙ্গাইল জেলে রেখেছে।