পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৫৭

 ১৮ ও ১৯ তারিখ দু’দিন ষ্টেট গেষ্ট হাউসে থাকার পর সেখানে অবস্থানরত গণপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা জনাব অধ্যাপক ইউসুফ আলীর সুপারিশে আমাকে আরও ৭ দিনের জন্য গেষ্ট হাউজে থাকতে দেয়া হয়।

 ১৯শে এপ্রিল কোলকাতার দৈনিক ‘যুগান্তর’ ‘জবাসস’ সম্পর্কিত এবং মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত দেশের বাইরে ‘জবাসস’ প্রাচারিত প্রতম সংবাদটি ছাপা হয়। এতে উত্তরাঞ্জলের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং অবিলম্বে সাহয্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। ঐ দিনই ভারতের সর্ববৃহৎ সংবাদ সংস্থা পিটিআই- এর কোলকাতা ব্যুরোর ম্যানেজার শ্রী সুধীর চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করি এবং বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক হিসেবে বিশ্বের লেখক এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত জোদার করার আহ্বান জায়য়ে বিবৃতি দেই। পিটিআই তোদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এটি প্রচার করে। প রদিন ২০শে এপ্রিল প্রায় সব গুলো দৈনিকের প্রথম পাতায় এ বিবৃতিটি ছাপা হয়েছে দেখতে পাই। ২১শে এপ্রিল পিটিআই-এর মাধ্যমে প্রচারিত আরেকটি বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্দের জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব বিবেকের প্রতি আহ্বান জানাই। এতে বাঙ্গালী মুসলমান নিধনযজ্ঞে পাকিস্তানী বর্বরদের সাহর্য না করার জন্য আরসিডি জোটভুক্ত ইরান ও তুরস্কের মুসলমান বাইদের প্রতিও আহান জানাই। এতে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের জন্যও আবেদন জানানো হয়। এটিও ২২শে এপ্রিল দৈনিক পত্রিকাগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়। এরপরে ভারতের অপর সংবাদ সংস্থা উইএআই-এর কোলকাতা ব্যুরোর ম্যানেজার শ্রী ইউআর কালকুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব সম্পর্কিত আমরা 'জয়বাংলা'র বিশেষ সংখ্যার রির্পোর্টির উদ্ধৃতি দিয়ে ২৫শে এপ্রিল উইএনআই দুটি রিপোর্ট প্রচার করে। ২৬ এপ্রিল এ রিপোর্ট বিভিন্ন দৈনিকের প্রথম পাতায় ছাপা হয়। যুগান্তরের হেডিং ছিল ‘বীরের এ রক্ত স্রোত', Statesman -এর Student forced Pak Army Column to Retreat; দিল্লীর Times of India-এর Many a Heroic Saga from Bangladesh ইত্যাদি।

 এর আগে ১৯শে এপ্রিল আকাশবাণী, কোলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। ২১শে এপ্রিলের সংবাদ পরিক্রমায় ‘জয় বাংলা’ সম্পর্কে এবং আমার প্রদত্ত বিবৃতিগুলোর উল্লেখ করা হয়।

 এ সময়ের মধ্যেই কোলকাতার সব প্রথম শ্রেনীর পত্রিকা যথা- আনন্দবাজার পত্রিকা, Hindustan standard, যুগান্তর, Amrita Bazar Patrika Statesman, সাপ্তাহিক দেশ, অমৃত ইত্যাদির সাংবাদিকসহ কোলকাতা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী ও সদস্যদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়। এভাবেই ভারতীয় তথা বিশ্ব প্রচারমাধ্যমের সঙ্গে কোন প্রকার সরকারী সাহায্য বা আনুকূল্য ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও অরাজনৈতিক প্রচেষ্টায় ভারতে প্রবেশের এক সপ্তাহের মধ্যেই একটা কার্যকর যোগসূত্র প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হই।

 কোলকাতায় অবস্থানকালে সাংবাদিক ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। কোলকাতা সফররত সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণের সঙ্গেও ২৮শে এপ্রিল সাক্ষাত করি এবং আমাদের মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করি। শ্রী নারায়ণ তাঁর এই সফরকালে বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন। এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, শ্রী নারায়ণ এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন সর্বোদয় ও গান্ধী আদর্শবাদী আন্দোলনের ভারতব্যাপী শত শত প্রতিষ্ঠানের শাখাউপশাখাগুলো বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে বেসরকারী পর্যায়ে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছে। শ্রী নারায়ণ ভারতে এবং ভারতের বাইরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন এবং ব্যাপক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন। এ সময়ে প্রায় প্রত্যেকদিনই প্রবীণ সাংবাদিক শ্রী দক্ষিণারঞ্জন বসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম। তিনি আমাকে বাংলাদেশের এক তরুণ সাংবাদিক হিসেবে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। একদিন সে তাঁর অফিসে তাঁর টেবিলের ওপর রক্ষিত রাশি রাশি কাগজপত্র দেখিয়ে আমাকে বললেন, “দেখ রহমত” এসবই যুগান্তর এবং অমৃতের পাঠকদের কাছ থেকে পাওয়া তোমাদের