পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৫৮

 বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা, গান ইত্যাদি। এবং প্রতিদিনই আরও আসছে। দু'চারটি পড়ে দেখলাম, সবাই আবেগপূর্ণ ভাষায় লেখা। এ কথা সত্য যে, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সকল বাংলা ভাষাভাষি বাঙ্গালীর মনকেই আবেগাপ্লুত করেছিল।

 এপ্রিলের শেষে এক সন্ধ্যায় আবার আমাদের মিশন প্রধান জনাব হোসেন আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। অনেক বিষয়ে আলাপ হলো। তাকে ঁবললাম ভারতের অন্যান্য অঞ্চল, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লীতে এবং ভারতের অন্যান্য অবাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকায় আমাদের নিজস্ব লোকজন নেই বললেই চলে। আর এসব এলাকাতে আমাদের বিপক্ষ পাকিস্তানীদের প্রচার চলছে। আমি দিল্লী থেকে এসব প্রচারণার পাল্টা জবাব এবং সর্বভারত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেসরকারীভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রচার চালাতে চাই। তিনি আমার সঙ্গে একমত হন এবং আমাকে কোলকাতা ও দিল্লী মিশনের সঙ্গে সংযোগ রাখতে বলেন।

 দেশ ছাড়ার সময় আমার সঙ্গে যে স্বল্প টাকা ছিল তা বদলিয়ে ভারতীয় ২৫০ টাকার মত পেয়েঠিলাম। কোলকাতায় ১৯শে থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত ষ্টেট গেষ্ট হাউজ থাকার সুযোগ হয়েছিল বলে থাকা বাবদ কোন ব্যয় হয়নি। তবে খাওয়া, যাতায়াত ব্যয়ে পুঁজি প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। পশ্চিম বাংলার বিধানসভার অধিবেশনের সময় এগিয়ে আসছিল বলে ষ্টেট গেস্ট হাউজ খালি করার সরকারী নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এ ভবনটি এম, এল,এ হোষ্টেল হিসেবেও ব্যবহৃত হত। এ পরিস্থিতিতে যুগান্তর-এর সাংবাদিক শ্রী পরেশ সাহা প্রাক্তন ঢাকা জেলাবসী পূর্ব রেলওয়েতে কর্মরত শ্রী তরুণ গুহের গোবড়া অঞ্চলের বাসায় আমার থাকাখাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিলেন। শ্রী গুহ আমার দিল্লী যাবার টিকেটের বন্দোবস্ত করে দিলেন এবং তাঁর মহল্লার তরুণদের সমিতি ‘আদর্শসংঘে’র সদস্যরা চাঁদা তুলে আমাকে ১০০ টাকা দেন। সাহিত্যিক শংকর-এর সুপারিশে উল্টোরথে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত একটি লেখা দিয়ে আরও ৫০ টাকা পাই। এভাবেই ৪ঠা মে ট্রেনযোগে দিল্লী রওয়ানা হয়ে পরদিন ৫ই মে দুপুরে দিল্লী পৌঁছি। দিল্লী ষ্টেশন থেকে শ্রী গুহের দেয়া ঠিকানায় তার ভাগ্নের বাসায় যাই। সেখানে থেকে যুগান্তরের দিল্লী অফিসে এবং তাদের পরামর্শমত পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডুর নেতৃত্বাধীন দিল্লীর মহিলাদের ‘বাংলাদেশ এ্যাসিসট্যান্স কমিটির অফিসে যাই। কমিটির সহায়তায় দিল্লীর জয়সিংহ রোডের ওয়াই, এম,সি,এ ট্যুরিস্ট হোষ্টেলে এক সপ্তাহের জন্য আমার থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত হয়।

 এখানে প্রথমেই দিল্লী, বোম্বাই ও মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত ইংরেজী দৈনিক ও অন্যন্য সাময়িকী কিনে প্রচারণার গতিপ্রকৃতি আঁচ করে নেই। IENS ভবনে অবস্থিত কোলকাতার যুগান্তর, Amrita Bazar Patrika, আনন্দবাজার পত্রিকা ও Hindustan Standard-এর ব্যুরোর কয়েক জনের সঙ্গে আলাপ করে বুঝতে পারি রাজধানীর পত্রপত্রিকাগুলো আমাদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল তবে প্রভাবশালী Hindustan Times-এর বিশেষ করে Letters column-এ বাংলাদেশ ও শেখ মুজব বিরোধী বিতর্ক চলছে। কয়েকদিনের পত্রিকা পড়ে আমার সে ধারণাই হয়ে ছিল। যেমন ৭ তারিখের পত্রিকায় থেকে তিন মুসলমান ভদ্রলোক লেখেনঃ

 “...the majority of Indian Muslims must not be expected to encourage those who are torch bearers of disruptive tendencies in Pakistan.........” শেখ মুজিবের কার্যকলাপের নিন্দা করে লেখা হয়। “........the responsibility of the carnage and bloodshed in East Bengal lies entirely on him” এ ছাড়া আরও অনেক যুক্তিতর্কের অবতারণা করা হয়।

 ৯ই মের সংখ্যায় Bangladesh and the Indian Press' নামে শিরোনামে প্রকাশিত ৩টি চিঠিতে লেখকেরা ভারতীয় প্রচার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গণহত্যার ফলাও প্রচারের জন্য ভারতীয় পত্রপত্রিকার নিন্দা করেন। তারা এ প্রচারকে অতিরঞ্জিত, নীতিবহির্ভূত বাড়াবাড়ি, পরোক্ষভাবে খোদ ভারতীয় অখণ্ডতারও প্রতিকূল বিধায় ভারতের বৃহত্তর স্বার্থের পরিপন্থী বলে আখ্যায়িত করেন। এসব চিঠিপত্র এ পত্রিকায় পূর্বে প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয় মন্তব্যের সমর্থনে লেখা হয়।