পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৬১

মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেই। এছাড়া অল ইণ্ডিয়া পঞ্চায়েত পরিষদ-এর সেক্রেটারী শ্রী জি এল পুরীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় তার পরিষদও আমাদের সংগ্রাম সমর্থন করেছিল।

 দিল্লীতে অবস্থানকালে আমাদের কুটনৈতিক প্রতিনিধি পাকিস্তান হাইকশিনের দলত্যাগী সাবেক দ্বিতীয় সচিব জনাব কে এম শাহাবুদ্দিন-এর সঙ্গেও আমি যোগাযোগ রক্ষা করেছি। জুন মাসের মাঝামঝি খবর প্রচারিত হয়, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে নতুন সমরাস্ত্রের চালান পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থবিরোধী এ আক্রমণের প্রতিবাদ করা হয়। দিল্লীতে ঐ সময়ে মাত্র কয়েকজন খাস বাংলাদেশী ছিলাম। সে কারণে অন্যান্য বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী সমর্থকদের সহায়তায় ২৫শে জুন, ১৯৭১ মার্কিন দূতাবাসের সম্মুখে এক বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। দিল্লীর সাংবাদিক বন্ধুদের সহায়তায় দেশী-বিদেশী সংবাদ সংস্থা এবং টেলিভিশন প্রতিনিধিদের দ্বারা এ মিছিলের খবর বিশ্বব্যাপী প্রচারের ব্যবস্থা হয়। দূতাবাসের গেটে রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধির কাছে জনাব শাহাবুদ্দীন প্রতিবাদলিপি অর্পণ করেন। ভারতের সকল প্রধান প্রধান দৈনিকে এ বিক্ষোভের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

 দিল্লীতে আমার কাজ-কর্মের বিস্তারিত রিপোর্ট কোলকাতা মিশনে জনাব হোসেন আলীর কাছে পাঠাতাম। জুনের শেষে দিল্লী থেকে কোলকাতা ফিরে এসে জনাব হোসেন আলী, প্রেস অ্যাটাশে জনাব মসকুদ আলী ও অন্যান্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। কোলকাতা ফেরার পর আকশবাণীর কোলকাতা কেন্দ্র থেকে ৩রা জুলাই “জানেন ওদের মতলবটা কি” শীর্ষক আমার একটি ১০ মিনিটের কথিকা পূর্বাঞ্চলীয় শ্রোতাদের অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয় এবং পরে পুনঃপ্রচারিত হয়। এতে আমি বিভিন্ন সূত্রে থেকে প্রাপ্ত বঙ্গালীদেরকে জাতিগতভাবে পংগু করার পাকিস্তানী চক্রান্ত সম্পর্কে শ্রোতাদের অবহিত করে হুঁশিয়ার থাকবার অনুরোধ জানাই। এর পরে আমি যশোর সীমান্ত এলাকায় যাই এবং নানা প্রকার খবরাখবর সংগ্রহ করি। এছাড়া নওগাঁ এলাকার লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বালুরঘাটে যাই। সেখানে নওগাঁর এম এস এ জনাব বায়তুল্লাহ ও অন্যান্যরা ছিলেন। ঐ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের অন্যতম সংগঠক নওগাঁর জনাব এম এ জলিলের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় স্থাপিত কয়েকটি ক্যাম্প ঘুরে দেখি এবং খবরাখবর সংগ্রহ করি।

 কোলকাতায় এ যাত্রা অবস্থানকালে আমি গান্ধী শান্তি পরিষদের কোলকাতা কেন্দ্রের আতিথ্য লাভ করি। এ প্রতিষ্ঠানও সীমান্ত এলাকার শরণার্থী শিবিরগুলোতে ‘অক্সফাম’-এর সহযোগিতায় নানা রকম ত্রাণকার্য চালচ্ছিল। এ সময়ে ভারতের কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরক্তি সচিব এবং সরকারী ত্রাণ তৎপরতার সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত কর্নেল পি, এস, লুথরার সঙ্গেও তাঁর কোলকাতার দপ্তরে পরিচয় হয়। ত্রাণ তৎপরতার ব্যাপকতা সম্পর্কে তাঁর কাছেই একটি ভাল ধারণা পাই।

 জুলাইর শেষে উত্তর ভারতের বেনারস শহরের শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বাথীন Gandhian Institute of Studies এর বাংলাদেশ বিষয়ক কাজকর্মে যোগ দেবার জন্য দিল্লীতে থাকাকালীন যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক দাশগুপ্তের আমন্ত্রণ অনুযায়ী বেনারস যাই। কনসালট্যাণ্ট অন ভাংলাদেশ অ্যাফেয়ার্স হিসেবে প্রাথমিকভাবে তিন মাসেন জন্য ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত থাকি। আমাকে ৫০০ টাকা সম্মানী (Honorarium) দেয়া হয়। এ ফেলোশীপটি তিন মাস পর আবার এক বৎসরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল তবে বাড়তি সময়ের মধ্যে মাত্র দু'মাস কাটবার পরেই দেশে ফিরে আসি। ইনষ্টিটিউট-এর অবৈতনিক পরিচালক ও সর্বোদয় নেতা শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণের উদ্যোগে ১৮ থেকে ২০শে সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী “International Conference on Bangladesh” দিল্লীতে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হয়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ সমর্থক প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা যোগ দেন। এ কনফারেন্সে ব্যবহারের জন্য নানা রকম ওয়ার্কিং পেপার ইষ্টিটিউট থেকে তৈরী করা হয়। আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ব পত্রপত্রিকার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে “Genocide in Bangladesh” “Bangladesh in world Press" শিরোনামে দুটি পুস্তিকা প্রস্তুত করি এবং অন্যান্য ওয়ার্কিং পেপার তৈরীতেও অন্যদের সাহায্য করি। এ পুস্তিকা দুটি এবং ওয়ার্কিং পেপারগুলো ঐ কনফারেন্সে বিতরণ করা হয়।