পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খন্ড

বিবিধ আঞ্চলিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে “লোকলোর” সংগ্রহের জন্য। এই লোকলোর সংগ্রহের কাজে মযহারুল ইসলামকে সাহায্য করেছিলেন অধ্যাপক সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়।

 এ সময় কোলকাতায় বিখ্যাত ভারতীয় ঐতিহাসিক ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার বাংলাদেশ তথ্যানুসন্ধান কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করেন। উক্ত কমিটির সম্পাদক ছিলেন শ্রী শৈবালকুমার গুপ্ত। মূলতঃ এই কমিটির উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দুকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে উক্ত দেশকে পুরোপুরি ইসলামী দেশ বানানো। তাঁর মুদ্রিত প্রশ্নাবলীর একটি প্রশ্ন ছিল “বাছিয়া হিন্দুদের নির্বিচারে হত্যা, গৃহদাহ ও লুণ্ঠনের পরিকল্পনা ছিল এমন অনুমান করিবার সংগত কারণ আছে কি? হিন্দু সম্পত্তি লুঠ হইয়া থাকিলে কাহারা করিয়াছে”? আমার সংগে সে সময় ডঃ রমেশ মজুমদারের যোগাযোগ হয় এবং আমি তাঁর এই তথ্যানুসন্ধান ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করি। সৌভাগ্যের বিষয় বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যারা চলে এসেছিলেন এমন সব হিন্দুরা ডঃমজুমদারের সাম্প্রদায়িক অনুসন্ধানের প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা অত্যাচার হয়ে ভারতে আশ্যয় নিয়েছে তারা হিন্দু ও নয়, মুসলমান ও নয়, তারা বাংলাদেশী এবং সকল বাংলাদেশী সম্মিলিত ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত। শেষ পর্যন্ত ডঃ রমেশ মজুমদার তাঁর সাম্প্রদায়িক অনুসন্ধান তৎপরতা বন্ধ করতে বাধ্য হন। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল যে ডঃ মজুমদারের লোকেরা ক্যাম্পে অবস্থানরত সাধারণ হিন্দুদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, তারা বুদ্ধিজীবীদের কাছে আসেননি এবং তারা সাধারণ হিন্দুরাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্য রেখেছিলেন।

 ২৩শে জুলাই আমি বাঙালোর শহরের গান্ধী স্মারক নিধির আমন্ত্রণক্রমে বাঙালোরে যাই এবং সেখানে চার দিন অবস্থান করি। বাঙালোর এবং মহীশুরে আমি বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর মোট দশটির মত বক্তৃতা করি। বাঙালোরে গান্ধী স্মারক নিধির প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ রিলিফ কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং তারা বাংলাদেশের জন্য কিছু অর্থ সাহায্য করেছিলেন।

 ১লা আগস্ট তারিখে ইন্দো-সোভিয়েত কালচারাল সোসাইটি বাংলাদেশের ওপর একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে আমি প্রধান অতিথি ছিলেন এবং ঔপন্যাসিক নরেন্দ্র নাথ মিত্র সভাপতি ছিলেন।

 ১৪ থেকে ১৬ই আগস্ট দিল্লীতে জয় প্রকাশ নারায়ণ বাংলাদেশর ওপর আন্তর্জাতিক সেমিনার আহ্বান করেন উক্ত সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার যর্থাথ বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণিত করা। উক্ত সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে ডঃ মল্লিকের নেতৃত্বে দশজন সদস্য দিল্লীতে এসেছিলেন। এদের মধ্যে আমি ছিলাম, ডঃ সারওয়ার মুর্শেদ ছিলেন, ডঃ স্বদেশ বোস, ডঃ মোতিলাল লাল, মিঃ ওসমান, জামাল, মিঃ সাদেক খান, মিঃ মওদুদ আহমদ, মিঃ আলমগীর কবীর ছিলেন।

 সেপ্টেম্বর মাসের ১১তারিখ বিখ্যাত আমেরিকান অর্থনীতিবিদ এবং ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত প্রফেসর গলব্রেইথ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরই অনুরোধক্রমে এই সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা হয়। সার্কাস এভিনিউতে বাংলাদেশ মিশনে সাক্ষাৎকারটি ঘটে। উক্ত অনুষ্ঠানে ডঃমল্লিক, ডঃ সারওয়ার মুর্শেদ, ডঃআনিসজ্জামান এবং আমি উপস্থিত ছিলাম। সম্ভবতঃ আরো কয়েকজন ছিলেন আমরা এখন তাঁদের নাম স্মরণ নেই। গলব্রেইথ সাহেব বাংলাদেশ থেকে আগত বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্রদের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা পেশ করেন। আমরা বিনয়ের সংগে তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখান করি। আমরা তাঁকে সবিনয়ে কিন্তু দৃঢ়তার সংগে জানাই আমাদের উদ্দেশ্য হচেছ স্বাধীনতাযুদ্ধে জয়লাভ করা এবং স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করা, আমাদের উদ্দেশ্য স্থায়ীভাবে বিদেশে পুনর্বাসন নয়। যখন গলব্রেইথ সাহেব আমাদের সামনে এ প্রস্তাব উপস্থিত করেছিলেন সে সময় আমেরিকার হারভারড বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ বিষয় একটি কমিটি