পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খন্ড

শামসুদ্দিন আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা, সম্ভবত জুলাই আগস্ট মাসে বর্বর পাক সৈন্যের হাতে মৃত্যুবরণ করেন। জনাব শামসুল হক, চট্টগ্রামের এসপি; স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম দিকে চট্টগ্রামে তাকে পাক সৈন্যেরা হত্যা করে। শ্রী খগেন্দ্রনাথ সিংহ চট্টগ্রাম সিগনেট লাইব্রেরীর মালিক। এপ্রিল-মে মাসের দিকে তিনি পাক বাহিনীর ঘাতকদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন। জনাব আব্দুল খালেক, চট্টগ্রাম কোতোয়ালীর তরূণ ওসি, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। ইপিআর বাহিনী পশ্চাদপসারণ করলে তিনি চাচার বাসায় আশ্রয় নেন গ্রামে। সেখান থেকে ১৬ই এপ্রিল ধরে নিয়ে এসে অত্যাচারের মাধ্যমে তাঁকে ২২শে এপ্রিলের দিকে তাকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায়, আর কোন দিন ফিরে আসেননি। শামসুল আবেদীন, চট্টগ্রাম হাবিব ব্যাংক শাখার একজন অফিসার; তাঁকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল পাক বাহিনীর সৈন্যরা এপ্রিলমে মাসের দিকে। ফিরতে পারেননি। ডা. শফি, দন্তচিকিৎসক, মার্চ-এপ্রিলে পাক বাহিনীর জল্লাদেরা তার জীবন নির্বাপিত করে দেয় বন্দুকের গুলিতে।

 অবরুদ্ধকালে কুমিল্লা শহরে যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি পাক বাহিনীর হাতে নিহত হন তাদের মধ্যে সে সময় আমরা যাদের নাম সংগ্রহ করতে পেরেচিলাম তারা হলেনঃ

 শ্রী বীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ; মার্চ মাসে তাঁকে কুমিল্লা ক্যাণ্টমেণ্টে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শ্রী অতীন্দ্র ভদ্র, শহরের বিশিষ্ট আইন ব্যবসায়ী; একই সময়ে তাকেও ক্যাণ্টনমেণ্টে নিয়ে হত্যা করা হয়। শ্রী অসীম রায় কুমিল্লা ভিক্টরীয়া কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ল্যাব শিক্ষক, প্রবীণ রাজনীতিবিদ অতীন রায়ের পুত্র, একই সময়ে পাক বাহিনীর হাতে ধৃত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। শোনা গিয়েছে কুমিল্লার তৎকালীন পুলিশ সুপার ও ডিসি নিহত হন সে সময়ে।

 অন্যান্য অঞ্চলে নিহত বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গঃ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যারয়ের গনিত বিভাগের প্রধান, ১৬ই এপ্রিল তাঁকে সেনাবাহিনীর লোকজন ধরে নিয়ে যায়। আর ফিরে আসেননি। শ্রী সুখরঞ্জন সমাদ্দার, সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪ই এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীয় বাসভবন থেকে তাঁকে চিরকালের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় জনাব মামুন, ডিআইজি, রাজশাহী, ২৬শে মার্চ তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পরে পাক জল্লাদ বাহিনী তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জনাব নজরুল হক সরকার, রাজশাহী বারের এডভোকেট, জেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি, ২৫শে মার্চের পরে কোন এক সময় পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নিহত হন। লেঃ কঃ মঞ্জুরুর রহমান অধ্যক্ষ ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ’ ১৮ই এপ্রিল তাঁরিখে তাঁর কলেজের বাংলোর সামনে মাঠে তাকে বর্বর পাক বাহিনী হত্যা করে। জনাব হালিম খান, অধ্যাপক ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ; একই তারিখে একই স্থানে এই অধ্যাপককেও হত্যা করা হয়। এ সময় একই সাথে কলেজের কয়েকজন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে হত্যা করা হয়। জনাব মাশুকুর রহমান, গনিতজ্ঞ, চট্টগ্রামে একটি বীমা কোম্পানীর পদস্ত অফিসার ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনকালে যশোরের বাড়ীতে চলে যান’ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে সশস্ত্র সংগ্রামে শহীদ হন। জনাব আব্দুল জব্বার, বগুড়া শহরের এডভোকেট; ১৭ই মে তাঁকে পাক হানাদার বাহিনী তাঁর গ্রামের বাড়ীতে হত্যা করে। ডা.জিকরুল হক, সৈয়দপুর শহরবাসী, সংস্কৃতিবান, আওয়ামী লীগ সদস্য, এপ্রিল মাসে তাঁকে আরও কয়েকজন সহকর্মীর সাথে পাকহানাদার বাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসে বন্দী করে রাখে, ১২ই এপ্রিল এদের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। লেঃ মোহাম্মদ আনোয়ারুল আজীম, উত্তরবঙ্গস্থ গোলাপুর সুগার মিলের প্রশসিক, ৫ই মে ঐ মিলে দ্বিশতাধিক শ্রমিক ও কয়েকজন অফিসারসহ তাকেও পাক বাহিনীর বর্বর সদস্যরা হত্যা করে। ডা. শামসুদ্দিন, সিলেট মেডিকেল কলেজের প্রফেসরঃ ৯ই এপ্রিল আরও কয়েকজন হাসপাতাল কর্মীর সাথে তাঁকে পাক বাহিনীর ঘাতকরা হত্যা করে। এঁদের মধ্যে ছিলেন ডা. শ্যামলকান্তি লালা। ডা. লেঃ কঃ জিয়াউর রহমান, সিলেট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ্য, জুলাই সাসের শেষ দিকে পাক হানাদার বাহিনী তাঁকে তাঁর বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যায়, আর ফিরে আসেননি। ডা. লেঃ কঃ নুরুল আবসার মো: জাহাঙ্গীর; ৩০শে মার্চ ঢাকা ক্যাণ্টনমেণ্টের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়, আর ফিরে আসেসননি। খুব সম্ভব তাঁকে কুমিল্লা ক্যাণ্টনমেণ্টে হত্যা করা হয়। মোহাম্মদ