পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৫

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খন্ড

ইসমাইল মিয়া, রংপুর শহরবাসী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সদস্য, ৩০শে মে আরও কয়েকজন পরিবারের সদস্যদের সাথে তিনি পাক বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত হন। এছাড়া এপ্রিল মাসে শহরের ১১ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে একত্রে বেধে হত্যা করে নরপিশাচেরা। জনাব মশিউর রহমান, যশোরের বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা; ৪ঠা এপ্রিল তিনি পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। বেশ কিছুদিন তাঁকে যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টে অমানুষিক অত্যাচারের পর সম্ভবত ২৮/২৯ এপ্রিল নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যশোর শহরের পলিটেকনিক স্কুলের প্রিন্সিপালকে ৬/৭ই এপ্রিল হত্যা করে। একই সাথে তাঁর বন্ধু ডঃ ওবায়দুল হককেও গুলি করে মারে পাক জল্লাদরা। জেলা জজ সাহেবের নাজির; তাঁকে একই সময়ে পথিমধ্যে পাক বাহিনীর সৈন্যরা হত্যা করে। জনাব আহসানুল্লাহ, খেজুরা গ্রাম, সম্ভ্রান্ত কৃষক, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ঐ গ্রামে প্রবেশ করে পাক সৈন্যরা সস্ত্রীক আহসানুল্লাহকে হত্যা করে এবং তাঁর বাড়ী লুট করে। যশোরের কসবা এলাকায় পোষ্টাল সুপারিনটেণ্ডণ্টের পুত্রসহ সাতজনকে একই সাথে গুলি করে মারে পাক সৈন্যরা এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে। জনাব এ করিম, সাব ইন্সপেক্টর অব পুলিশ, যশোহর; এপ্রিল মাসে তাঁকে কোর্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই সময়ে জনৈক বৃদ্ধ উকিলকেও নিহত করে পাক সেনারা। বসন্ত কুমার দাস, সাবজজ, যশোর; ১লা মে তারিখে আরও ১১ জন ব্যাক্তির সাথে পাক বাহিনীর জনৈক ক্যাপ্টেন তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া যশোর শহরের আরও ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যা করে এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে। জনাব আহসান আলী, জামালপুরবাসী, ন্যাপ নেতা ও সাংবাদিক, ২৮শে জুলাই মাসে পাক বাহিনীর কুখ্যাত অনুচর আলবদরের হাতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন। অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন, বাগেরহাট পিসি কলেজের অর্থনীতি অধ্যাপক, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২৮শে অক্টোবর নিহত হন পাক বাহিনীর অনুচরদের গুলিতে। অধ্যাপক ফজলুল হক, গণিতের অধ্যাপক, রাজশাহী সরকারী মহাবিদ্যালয়, ২৫শে এপ্রিল তাঁর নওগাঁর বাসভবনে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে মৃত্যুবরণ করেন। জল্লাদেরা একই সাথে তাঁর মা, বোন ও ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জনাব আব্দুল কাইয়ুম মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; নভেম্বর মাসে তাঁকে পাক হানাদার বাহিনীর নরপশুরা বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, দর্শনের অধ্যাপক, কুষ্টিয়া কলেজ; ২৮শে জুন তারিখে তাঁকে পাকিস্তানী সৈন্যরা গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আর কোনোদেন ফিরে আসেননি। জনাব মহসীন আলী দেওয়ান, বগুড়া-শেরপুর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ্য ৩রা জুন বগুড়ার বাসভবন থেকে বর্বর পাক সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, আর ফেরেননি। শ্রী সুমঙ্গল কুণ্ডু, দিনাজপুর বারের এডভোকেট, ৯/১০ই এপ্রিল দিনাজপুর শহরে আরও কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের সাথে তাঁকে পাক বাহিনীর অনুচরেরা নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়া দিনাজপুর শহরের আশেপাশে অনেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং অসংখ্য নারীপুরুষকে মেশিনগানের গুলিতে সারিবদ্ধভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের সর্বত্র হাজার হাজার লোক ঐ সময় পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনীর গুলির শিকার হয়েছেন, বহু নারী নির্যাতিতা ও ধর্ষিতা হয়েছেন। এই হিসাব হয়তো আর কোনাদিদনই পাওয়া যাবে না।

 বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কর্ম তৎপরতা: “বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি” একাত্তরের মে মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালযের দ্বারভাঙ্গা বিল্ডিং এ সর্বস্তরের দেশত্যাগী শিক্ষদের সমাবেশে গঠিত হয়। সে সভায় একটি কার্যকরী সংসদও নির্বাচিত হয়। সভাপতিঃ ডঃ এ আর মল্লিক, উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। কার্যকরী সভাপতিঃ জনাব কামারুজ্জামান, ঢাকা জুবিলি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সংসদ সদস্য। সহসভাপতি: ড. ফারুক খলিল, অধ্যাপক গণিত বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যক্ষ দেওয়ান আহমেদ। সম্পাদক: ড. আনিসুজ্জামান, রীডার বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পরে জুলাই মাস থেকে ড. অজয় রায়, রীডার, পদার্থবিদ্যা বিভাগ, ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়, সহসম্পাদকঃ জনাব গোলাম মুর্শিদ, শ্রী রাম বিহারী ঘোষ ও জনাব এস এম আনোয়ারুজ্জামান। কোষাধ্যক্ষ: ড. খান সারওয়ার মুর্শেদ, অধ্যাপক ইংরেজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সদস্য ১২ জন।

 এই সমিতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলঃ (১) মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি হিসেবে সর্বস্তরের শিক্ষক সমাজকে সংগঠিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যে নিয়োজিত করা। (২) ভারতবর্ষসহ দেশবিদেশে মুক্তিযুদ্ধের