পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩০

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খন্ড

 সমিতি গোপনে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টাতে ও সহযোগিতা করছে। যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপক লতিফ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সহায়ক সমিতি যে অর্থ সংগ্রহ করে তা অস্ত্র সংগ্রহের কার্যে ব্যয় করার উদ্দেশ্যে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। এই উদ্দেশ্যে ঐ সংগঠনের একজন প্রতিনিধি কোলকাতায় আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। আমরা মুক্তিবহিনীর প্রতিনিধির সাথে তার যোগাযোগ ঘটিয়ে দেই এবং স্থির হয় যে, বাংলাদেশ সররকারের আমেরিকায় প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করে এ ব্যাপারে সঠিক কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ সরাসরি সহায়তা প্রদানের জন্য ওয়ার্ল্ড ইউনিভর্সিটির ভারতীয় জাতীয় কমিটির কার্যকরী সম্পাদক শ্রী ভি এন থিয়াগ রাজন আমদের সাথে যোগাযোগড় ঘটিয়ে দেই। তিনি এ ব্যাপারে সর্বাত্মক ও কার্যকরী সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

 উপরিল্লিখিত কর্মতৎপরতা ও প্রচেষ্টায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক সমিতি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যারয় ও কলেজ শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ সংগ্রাম সহায়ক সমিতি, ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর বাংলাদেশ, শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু পরিচালিত বাংরাদেশ এইড কমিটি আমাদের সর্বত্মক সহযোগিতা প্রদান করে।

 শিবির কর্মাধ্যক্ষদের অনুরোধে শিক্ষ সমিতি মুক্তিযুদ্ধে আদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু স্কুল ও কলেজের শিক্ষ কে আমরা প্রেরণ করি। নিযুক্ত শিক্ষকগণ নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া মাঝে মাঝেই সমিতির প্রতিনিধিরা বিভিন্ন রণাঙ্গন পরিদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের কাজ ও করেছেন। এ ব্যাপারে অধ্যাপক আব্দুল হাকিমের নাম শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ্য। আমি নিজেও সমিতির সম্পাদক হিসেবে সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা শিবির পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করছি। একদিনের ঘটনা আমার বেশ মনে পড়ে। শিবিরটি মুর্শিদাবাদের লালগোলা সীমান্তে। আমরা ক’জন কিছু ঔষধ ও অন্যান্য বেসামরিক উপকরণ সরবরাহ করতে গিয়েছিলাম। দিনটি ছিল ২২শে নভেম্বর। শিবিরে শোকের ছায়া। রাজশাহীর নবাবগঞ্জ থেকে তিন মাইল দূরে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। আমরা হারিয়েছি ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আর বামাদের বাহিনী ২৫টি বাঙ্কার ধ্বংশ করেছে ও অসংখ্য পাক সৈন্যকে হত্যা করেছে, আর ১২জন রাজাকারকে ধরা হয়েছে। বন্দী রাজাকারদের দেখলাম। এর দিন কায়ক আগে নায়েক কাসেম শাস্তি কমিটির চেয়ারম্যানসহ দু’জন রাজাকারকে গ্রেফতার করে। ক্যাপ্টেন গিয়াস এই সেক্টরে যুদ্ধ পরিচালনা করছিলেন। নায়েক কাসেম ঐ দিনের বাঙ্কারে অবস্থিত পাক বাহিনীর একজন মেজর ও ক্যাপ্টেনকে ধরতে গিয়ে নিহত হন। এছাড়া ঐ দিনের যুদ্ধে আমাদের পক্ষে আর যারা শাহাদাত্ররণ করেছিলেন তারা হলেন- মোহর আলী (ইপিআর), জিল্লুর রহমান (মুজাহিদ), আব্দুল হক (ছাত্র) এবং আরও দুজন ছাত্র। বেশ ক'জন আহত হয়েছেন। আমরা আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করলাম। একজন ছাড়া আরও মৃতদেহ নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। আমরা অভিবাদন জানালাম সেই বীর শহীদদের।

 মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও প্রচণা কাজের সাংগঠনিক দিকের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ড. বেলায়েত হোসেন এ কাজের সাংগঠনিক দিকের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

 সরাসরি মুক্তিযুদ্ধেও বেশ কিছু শিক্ষক যোগ দিয়েছিলেন। সে সময় আমরা যাদের নাম সংগ্রহ করেছলাম তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম মনে পড়ছে। অধ্যাপক আব্দুল মান্নান (কর্মাষ, ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়), নূরুন্নবী (ফার্মেসী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মোয়াজ্জেম হোসেন (বাগেরহাট কলেজ), আবু বকর সিদ্দিক (আয়ুব ক্যাডেট কলেজ, রাজশাহী), হামিদুল হক (কচুয়া হাই স্কুল)। আবং অধ্যাপক হান্নান প্রমুখ। এদের মধ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন ও জনাব আবু বকর সিদ্দিকী শাহাদাত্বরণ করেছিলেন আমরা সে সময় সংবাদ পেয়েছিলাম।