পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খন্ড

এছাড়া যেসব সংখ্যালঘু বিশিষ্ট নাগরিক পালিয়ে আসতে পরেনি তাদের ওপর নানাবিধ অত্যাচার করা হচ্ছে, তাদের কছে থেকে টাক আদায় করা হচ্ছে, জমিজমা বাড়ীঘর দখল করা হচ্ছে, জোর করে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টাও চলছে। বিভিন্ন সুত্র থেকে খবর পাওয়া গেল যে নিম্নলিখিত কয়েকজন ব্যক্তি বাধ্য হয়েছেন সপরিবারে মুসলমান নাম গ্রহণ করতেঃ

 শ্রী জয়ন্ত চক্রবর্তী, অধ্যাপক (পদার্থবিদ্যা), ময়মনসিংহ এ এম কলেজ, শ্রী রবীন্দ্র চক্রবর্তী অধ্যাপক, শিক্ষক-প্রশিক্ষণ কলেজ, ময়মনসিংহ, শ্রী পূর্ণ চন্দ্র দত্ত, প্রভাষক (মনস্তত্ব), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রী সুখেন্দু সোম, অধ্যাপক (গনিত), বরিশাল কলেজ, শ্রী নিত্যগোপাল, অধ্যাপক (বানিজ্য), নাসিরাবাদ কলেজ ময়মনসিংহ।

 খবর এল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দুজন শিক্ষ- জনাব মুজিবুর রহমান (গনিত) এবং জনাব সালেহ আহমেদ (সংখ্যাতত্ত্ব) কে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং মাসের পর মাস ধরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালান হচ্ছে।

 ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদরে ভূমিকাঃ ২৩শে এপিল (১৯৭১) পর্যন্ত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। সেদিন হানাদার বাহিনী রুখতে ছাত্র ও সৈনিকদর সাথে এগিয়ে এসেছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। উপাচার্য ডঃ কাজী ফজলুর রহমানের নতৃেত্বে তারা গড়ে তুলেছিলেন সংগ্রাম পরিষদ। এই পরিষদ একদিকে মেজর সফিউল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযোদ্ধে সহায়তা করেছে, অন্যদিকে অরক্ষিত অসহায় অবাঙ্গালী নাগরিকদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছ। সেদিন এই প্রতিরোধ যুদ্ধে ছাত্র ছাড়াও অরক্ষিত অবস্থায় অবাঙ্গালী নাগরিকদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছে। সেদিন এই প্রতিরোধ যুদ্ধে যেসব শিক্ষ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা হলেন ডঃ শামসুল ইসলাম, ডঃ আব্দুল ওয়াদুদ, মোস্তফা হামিদ হোসেন, ডঃ আব্দুল লতিফ মিঞা, জনাব শামসুদ্দিন খান; আর কর্মচারীদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ হোসেন, শরিয়তউল্লহ, চাঁন মিয়া, সৈয়দ নাজমুদ্দিন হোসেন। কিন্তু প্রতিরোধভেঙ্গে পড়ল- ২৩শে এপ্রিল পাক বাহিনী প্যবেশ করল ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। হানাদার বাহিনী যেসব শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও শরীরিকভাবে নির্যাতন করেছিল তাঁরা হলেনঃ ১। উপাচার্য ডঃ কাজী ফজলুর রহমান, ২। ডীন ডঃ শামসুল ইসলাম, ৩। ডঃ মুস্তফা হামিদ হোসেন, ৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক জনাব জাহিদুর রহিম, ৯। কর্মচরী জনাব জলিল ও মিঃ ডেভিড।

 আর অধিকৃত আমলে যেসব শিক্ষক ও কর্মচারী জল্লাদ বাহিনীর হাতে সেদিন নিহত হয়েছিলেন তাঁরা হলেনঃ

 জনাব আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া, শিক্ষক মুহাম্মদ আক্কাস আলী, ছাত্রাবাস কর্মচারী মধুসূদন, মৎস্য বিভাগের কর্মচারী, মুহাম্মদ নূরুল হক, ছাত্রাবাস কর্মচারী, গাজী ওয়াহিদুজ্জামান, কর্মচারী, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন ১৫ই নভেম্বর, মুহাম্মদ হাসান আলী, কীটতত্ত্ব বিভাগের ল্যাব অ্যাসিস্টেণ্ট, গিয়াসউদ্দিন, ছাত্রাবাস কর্মচারী।

 কিন্তু এতেও পিছপা হননি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। গোপন সহযোতিা ও প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন অবরুদ্ধ এলাকা থেকে। এর ফলে চাকরিচ্যুতির নির্দেশ আসে অনেক শিক্ষকের প্রতি। চাকরিচ্যুত হন। উপাচার্য স্বয়ং। শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক মোস্তফা হামিদ হোসেন (পদার্থবিদ্যা), জনাব আলী নেওয়াজ (বাংলা), জনাব শামসুজ্জামান খান (বাংলা), জনাব আব্দুরজ্জাক (বাংলা), আব্দুল বাকী (উদ্ভিবিদ্যা), আব্দুল হক (উদ্ভিদবিদ্যা), আব্দুল হালিম (কৃষি শিক্ষা), মুহাম্মদ হোসেন (পরীক্ষাসমুহের নিয়ন্ত্রক)।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের গ্রেপ্তারের সংবাদে বিচলিত হয়ে পড়লাম। ইণ্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (IRC) স্থানীয় প্রতিনিধি শ্রী তরুন মিত্র, আমেরিকান মহলের সাথে বেশ জানাশুনা তাঁর। তাঁর সাথে দেখা করে সহকর্মীদের নাম দিলাম। অনুরোধ করলাম আই সি-র কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ঢাকা কর্তৃপক্ষকে