পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
১৭

 সেপ্টেম্বর মাসে আমরা সাথিয়া থানা ও রাজাকার ঘাঁটি আক্রমণ করি। সেখানে ১২জন রাজাকার নিহত হয়। ১১ জনকে ধরে নিয়ে আসি এবং অনেক গোলাবারুদ উদ্ধার করি।

 অক্টোবর মাসে পাক-সেনারা দিঘলিয়া রতনপুরে আমাদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। ৩/৪ ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ চলার পর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে যে আমাদের আরো দুটি বাহিনী ছিল তাদেরকে খবর দেয়া হয়। সাথে সাথে তারা এসে তিনদিক থেকে ঘিরে পাক-বাহিনীকে আক্রমণ করে। এতে ২৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। যুদ্ধ শেষে আমরা ফরিদপুর চলে যাই।

 নভেম্বর মাসে আমরা গাঙ্গাহাটি ব্রীজে রাজাকারদের আক্রমণ করি। সেখানে আমাদের দু’জন যোদ্ধা আহত হয় এবং ছয়জন রাজাকার নিহত হয়। এরপর আমরা বোনাইনগর, ফরিদপুর এলাকাতে পোস্টার লাগিয়ে দিই। তাতে লিখা থাকে, উক্ত মাসের মধ্যে যদি রাজাকার হাতিয়ার নিয়ে আত্মসমর্পণ করে তাহলে তাদেরকে কিছু বলা হবে না। আর যারা আত্মসমর্পণ করবেন না তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।

 এই সংবাদ রাজাকরদের কানে পৌঁছার সাথে সাথে নভেম্বর মাসের মধ্যে ফরিদপুর থানার সমস্ত রাজাকার হাতিয়ার নিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে। তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।

 ১০/১২ডিসেম্বর আমরা বাঘাবাড়ী ঘাটে পাক-সেনাদেরকে আক্রমণ করি এবং আমাদের বিমান বাহিনী বিমান হতে তাদের উপর বোমা বর্ষণ করে। সেখানে পাকসেনাদের সাথে আমাদের ৪/৫ ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। এতে আমাদের একজন আহত হয়।

 সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আমরা গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিই। পার্শ্ববর্তী আরো মুক্তিযোদ্ধারা এসে যায়। পরদিন সকালে আমরা পাক-সেনা আক্রমণ করার জন্য বাঘাবাড়ী ঘাটে যাই। কিন্তু সেখানে কাউকে দেখতে পাইনি। জানা গেল তারা রাতে তাদের গাড়ী ও হাতিয়ারে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পাবনার দিকে চলে গেছে। আমরা বাঘাবাড়ী ঘাটে গিয়ে দেখতে পাই ১৫/২০টি গাড়ী পড়ে আছে এবং অস্ত্রশস্ত্রে আগুন জ্বলছে।

 আমরা শাজহাদপুর ফিরে এসে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি এবং বেসরকারী শাসন ব্যবস্থা চালু করি।

স্বাক্ষর/

মুকুল মিঞা

১৮-১১৭৩


আব্দুল করিম খন্দকার

 ১৯৭০সালের ডিসেম্বর মাসের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে জেনারেল ইয়াহিয়া এক পর্যায়ে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী বলেও অভিহিত করেন। সেই পরিস্থিতিতে মহাসমারোহে ২৩শে মার্চ প্রাজাতন্ত্র দিবস পালনের কর্মসূচী গৃহীত হয়। তখন আমি ঢাকায় পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত বাঙ্গালী অফিসারদের মধ্যে সবচাইতে সিনিয়র। সুতরাং সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর প্যারেড অধিনায়কত্ব করার দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়। আর প্রধানত সে কারণেই প্রজাতন্ত্র দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজনে আমাকে সমন্বয়ের কাজ করতে হয়েছিল। কর্মসূচী ছিল বিপুল। আর তার সাথে তাল মিলিয়ে ব্যস্ত প্রস্তুতি পর্ব।

 ফেব্রুয়ারী মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একদিন জোনাল আর্মী হেডকোয়ার্টারে (বর্তমান এয়ার হেডকোয়ার্টার) থেকে জনৈক কর্নেল আমাকে ফোন করে জানালেন যে, ২৩শে মার্চের পরিকল্পিত প্যারেড বাতিল করা হয়েছে। প্যারেড বাতিলের সিদ্ধান্তের আকস্মিকতায় বিস্মিত হলাম। প্রায় সাথে সাথেই ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার অফিস