পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
৩৭

পক্ষে সংগ্রাম করার শপথ গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে আকস্মিকভাবে ডেপুটি কমিশনার জনাব মনযুর উল করিম বঙ্গবন্ধু মুজিব কর্তৃক ঘোষিত একটি ইংরেজীতে টাইপ করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আমার হাতে দেন। সেটি ছিলঃ To the people of Bangladesh and also the world:

 Pakistan Armed Forces suddenly attacked the EPR Base at Peelkhana and Police Line at Rajarbag at .00 hrs. of 26-3-71, Killing lots of people, Fierce fighting is going on with the EPR and police forces in the streets of Dacca People are fighting gallantly with the enemy forces for the cause of freedom of Bangladesh Every sector of Bangladesh is asked to resist the enemy forces at any cost in every comer of Bangladesh.

 May Allah bless you and help you in your struggle for freedom

Joy Bangla
Sk. Mujibur Rahman

 এটি হুবহু বঙ্গবন্ধু ২৫শে মার্চের রাতে অয়ারলেস মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই সমবেত জনতা সর্বোচ্চ কণ্ঠে জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলে এবং আমার নেতৃত্বে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করে। ঐ মিছিলের শ্লোগান ছিল ‘ইয়াহিয়ার ঘোষণা মানি না।’ “বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর” ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মধ্যে সর্বস্তরের নাগরিক ও কর্মচারীগণ শুধু শপথ করেই ক্ষান্ত হননি তারা পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করে এবং আমার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। এমনকি রিজার্ভ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত অফিসার মিঃ খান অস্ত্রাগারের চাবি আমার হাতে অর্পণ করে বলেন যে, আজ থেকে আমরা আপনাদের হুকুমে পরিচালিত হবো এবং বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ অনুগত থাকবো। (From now onwards we are under your command”) ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে আমার নিকট কয়েকটি জরুরী টেলিগ্রাম আসে। জনাব মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী ও জনাব আখতারুজ্জামান চৌধুরী (বর্তমানে জেলা, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি) টেলিফোনে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে নিশ্চয়তার জন্য। যেহেতু আমি ই, পি, আরএর ওয়ারলেস-এর মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার কপি ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর সাথে সরাসরি আলোচনা করেছি এবং যেহেতু সে সময় ঢাকায় বঙ্গন্ধুর বাড়ীর ও অন্যান্য জরুরী টেলিফোন যোগাযোগ চট্টগ্রামের সাথে বিচ্ছিন্ন ছিল, সে জন্য আমাকে টেলিফোনে বারবার নিশ্চয়তা দিতে হয়েছিল। সকল সরকারী ও আধা সরকারী কর্মচারী সেদিনই আমাদেরকে তাদের এক দিনের বেতন দিয়ে যুদ্ধ তহবিলে চাঁদা প্রদান করেন। নোয়াখালী টাউন হলে আমরা কণ্ট্রোল রুম স্থাপন করি এবং মাইজদীর রৌশন বাণী সিনেমা হলে আমাদের খাদ্য ও সাহয্য সামগ্রী রাখার ব্যবস্থা করি। পুলিশ লাইন ও জিলা স্কুলে তৎক্ষণাৎ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়।

 নোয়াখালী সর্বস্তরের জনগণ পুলিশ, ই,পি, আর, আনসারসহ ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত সম্পূর্ণ নোয়াখালী জেলা হানাদারমুক্ত রাখে। এ সময়ে আমরা সামরিক পোশাকে বেলুনিয়া ও নোয়াখালী সীমান্তে অবস্থিত পাক বি, ও, পি, হতে আগত অস্ত্রশস্ত্রসহ হাজার হাজার ই,পি,আর ও আনসারকে সংগঠিত করি। ৪০/৫০ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে বন্দী অবস্থায় রাখি, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল, শিক্ষাকেন্দ্র ও রসদ সরবরাহের ব্যবস্থা করি। বেলুনিয়া বর্ডারে অবস্থিত পাক বি,ও,পি থেকে উদ্ধারকৃত মেশিনগানসহ অনেক অস্ত্রশস্ত্র, গোলা বারুদ আমাদের হস্তগত হয় যা আমরা পরে ২নম্বর সেক্টরে এবং নোয়াখালী, ফেণী, লক্ষীপুর ও বিশেষ করে শুভপুরের যুদ্ধে কাজে লাগাই।

 ২রা এপ্রিল চাঁদপুর থেকে মিজান চৌধুরী রায়পুর হয়ে নোয়াখালী আসেন। আমি, মিজান চৌধুরী এবং ফেনীর এম,এন,এ মরহুম খাজা আহমেদসহ ছোতাখোলা হয়ে ভারতীয় বি, এস,এফ এর মেজর প্রধান এর