পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
৩৮

সহায়তায় প্রথম সীমান্ত অতিক্রম করি। প্রথমে রামগড় ও পরে উদয়পুর হয়ে আগরতলায় যাই। উল্লেখ্য যে, রামগড়ে আমরা মেজর জিয়া, ক্যাপ্টেন রফিকসহ কয়েকজন সামরিক অফিসার ও তদানীন্তন পার্বত্য চট্টগ্রমের ডি,সি জনাব তৌফিক ইমামের সঙ্গে আলোচনা করি। ঐ দিনই সন্ধ্যায় আগরতলা পৌঁছার পরপরই অমৃতবাজার পত্রিকার শ্রী অনিল বিশ্বাসের বাসভবনে বি বি সি ও ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিনিধিসহ অনেক সাংবাদিক আমাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন এবং আমাদের কথা টেপ করেন। সম্ভবত বাংলাদেশে গণহত্যা এবং সর্বাত্মক যুদ্ধ সম্পর্কে এটাই বহির্বিশ্বের প্রথম প্রচারিত বাণী। কারণ আমরা (আমি এবং মিজান চৌধুরী) যে সাক্ষাৎকার প্রদান করি তা শুনেই আমেরিকায় নিযুক্ত তদানীন্তন রাষ্ট্রদূত (মিনিস্টার ও পরে পররাষ্ট্র সচিব) জনাব এনায়েত করিম, তাঁর এক ভাগ্নে এবং অন্য একজনকে কলকাতায় কিড স্ট্রীটে সরাসরি আমাদের কাছে পাঠান। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে অন্ততঃ বাংলাদেশের দুইজন আওয়ামী লীগ নেতা জীবিত আছেন এবং তাদেরকে আগরতলা বা কলকাতায় পাওয়া যাবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নোয়খালী বোধ হয় একক ও অনন্যভাবে সরকারী কর্মচারী ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে unified command এর মাধ্যমে প্রায় এক মাস যুদ্ধ করে সমগ্র এলাকা হানাদারমুক্ত রেখেছিল। তারপর আমরা নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল ও ফরিদপুরের বেশকিছুসংখ্যক নির্বাচিত এম, পি ও এম, এন, এ আগরতলায় একত্রিত হই। এ সময়ে আমাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে আগরতলার মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য প্রধান লিয়াজোঁ নির্বাচিত করা হয়। সে সময় কর্নেল ওসমানী, লেঃ কর্নেল আব্দুর রব এম,এন,এ সহ কয়েকজন সামরিক অফিসারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর একটি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠনের তীব্র প্রয়োজনীয় অনুভব করি। আমরা আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ ব্যপারে একমত হই। ত্রিপুরার তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী শচীন বাবু এবং বিখ্যাত স্বদেশী নেতা কলকাতার ১৪নং ক্ষুদিরাম বোস লেনের শ্রী পান্নালাল দাসগুপ্ত আমাদের এই কাজে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করেন। অতঃপর ১০ই এপ্রিল জনাব ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি এবং (মেজর জেনারেল) আব্দুর রবকে ডেপুটি করে, বঙ্গবন্ধু মুজিবকে রাষ্ট্রপতি এবং নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, জনাব তজউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী করে একটি অস্থায়ী মন্ত্রিসভা ও সরকার গঠন করা হয়। অতঃপর শ্রী পান্নালাল দাসগুপ্ত আমাকে ও কয়েকজন এম, এন,এ ও এম,পিকে তাঁর কর্মস্থল ও পত্রিকা অফিস কলকাতার ১৪নং ক্ষুদিরাম বোস লেনে নিয়ে যান। ওখান থেকে আমরা বি.এস, এফ-এর হেড কোয়ার্টার ২/এ লর্ড সিনহা রোডে গিয়ে জনাব নজরুল ইসলম, তাজউদ্দিন, মনসুর আলীসহ বিপ্লবী সরকারের সব মন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাই। পরবর্তীকালে আমরা “তালায় অবস্থিত অন্দামান ফেরত বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ শ্রী অমর গাঙ্গুলী ও মণি গাঙ্গুলীর বাড়ীতে অবস্থান করে মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন বিষয়ে মতামত বিনিময় করি। কিছুদিন পর ওখান থেকে আমরা উত্তর কলকাতায় অবস্থিত ৩০নং মদন মোহন তালা স্ট্রীটে শ্রী শ্যামাপদ সাহা, শ্রী বাদল সেন, শ্রী অমল সেন প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে পরিচিত হই। পরবর্তীতে তাদের প্রেরণা ও সহায়তায় আমরা শিয়ালদহ সল্ট লেকসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত লক্ষ লক্ষ অসহায় বাস্তহারাকে দেখাশুনা করি। অতঃপর আমার ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টায় নড়াইলের তৎকালীন এম,পি, এ মিঃ শহীদ ও তদানীন্তন পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশনার জনাব হোসেন আলীর বিশেষ সহকারী মিঃ জাকির আহমদ-এর সহায়তায় আমি হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের পক্ষে Defect করার প্রস্তাব করি। তিনি প্রায় সব বাঙ্গালী কর্মচারীসহ Defect করতে রাজী হন। তবে তিনি সমস্ত কর্মচারীর নিরাপত্তা, ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য বিষয় আলোচনার জন্য সরাসরি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার জন্য একটি প্রস্তাব করেন। সে মতে আমি তাঁর পক্ষে এই প্রস্তাব নিয়ে ২/এ লর্ড সিনহা রোডে গিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করে একটি তৃতীয় স্থানে বৈঠকের ব্যবস্থা করি। ঐমতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে পার্ক সার্কাসের ৯নং এভিন্যুতে অবস্থিত পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার অফিস বাংলাদেশ মিশন হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইতিমধ্যে ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যানাথতলায় দেশী-বিদেশী প্রায় শতাধিক সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার-এর উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু মুজিবকে রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য তিনজনকে মন্ত্রী, জনাব ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি ও নয়জনকে সেক্টর কমাণ্ডার করে বিপ্লবী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। ঐ দিন রাতেই আমরা