পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
৫০

 Referring to friendship of Bangladesh with India she said that it should be left to the people of Bangladesh to decide after the independence. As far as she was concerned her only expectation was that a democracy would be functioning in a neighboring country.

 এরপর আমি অস্ত্র পঠানোর জন্য আমাদের অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে কথা উঠাই। আমি বলি যে, আমরা টাকা সংগ্রহ করলেও অস্ত্র কিনতে পারছি না। ভারত যদি কিনে পাঠাবার ব্যবস্থা করে তবে আমরা টাকাটা তাদের হাতে দিতে পারি। মিসেস গান্ধী তখন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমরা কত টাকা সংগ্রহ করেছি। আমি উত্তর দিই প্রায় চার লক্ষ পাউণ্ড। তিনি বলেন যে, একটি মুক্তিযুদ্ধে যে পরিমান অস্ত্রের দরকার সে পরিমান অস্ত্র এই টাকায় কেনা সম্ভব নয়। এছাড়া অনির্ধারিতভাবে অস্ত্র পৌঁছালে তা বিরোধী শক্তির হাতেও পড়তে পারে। মুজিব নগর সরকারের সাথে তিনি যোগাযোগ করছেন এবং তাদের মাধ্যমে অস্ত্র বিতরণ করছেন। বিচ্ছিন্নভাবে অস্ত্র পৌঁছালে আইনগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তিনি আমাকে বলেন যে, এই বৈদেশিক মুদ্রা পরবর্তীকালে একটি স্বাধীন দেশের জন্য খুবই প্রয়োজনে আসবে। আমি তাঁকে জানাই যে, বৃটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর আমাকে বলেছে, একজন বিচারক হিসেবে নিশ্চয়ই অস্ত্র পাঠাবার সাথে জড়িত হবো না এই আশ্বাস তারা পাকিস্তান সরকারকে দিয়েছেন। এটি একধরনের চাপ। অতএব কোন কিছু করতে হলে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমেই করতে হবে। আমার এই কথা শুনে মিসেস গান্ধী উঠে পাশের কক্ষে যান এবং পাশের কক্ষ থেকে ভারতীয় হাইকমিশনারকে নিয়ে আসেন। তিনি হাইকমিশনারকে বলেন যে, বিচারপতি চৌধুরী যা পাঠাতে চান, অস্ত্রই হোক বা অন্য কিছু হোক, তিনি যেন তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ আন্দোলনের শুভ কামনা করে আমাদের সাক্ষাৎকারের ইতি টানেন।

 কয়েকদিন পরেই মুজিবনগর সরকারের তরফ থেকে টেলিগ্রাম আসে যে, আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে আমাকে নিউইয়র্ক যেতে হবে। ষোলজন সদস্যের একটি দল নির্বাচিত হয়। এঁরা হলেন (১) আব্দুস সামাদ আজাদ (২) ফণিভূষন মজুমদার (৩) এম,আর সিদ্দিকী (4) সৈয়দ আব্দুস সুলতান (৫) ডঃ মফিজ চৌধুরী (৬) প্রফেসার মোজাফ্ফর আহমেদ (৭) ফকির শাহবুদ্দীন (৮) এ্যাডভোকেট সিরাজুল হক (৯) ডঃ এ, আর, মল্লিক (১০) খুররম খান পন্নী (১১) এস, এ, করিম (১২) আব্দুল মুহিত (১৩) রেহমান সোবহান (১৪) মাহমুদ আলী (১৫) আবুল ফাতহ।

 আমরা বেলমন প্লাজা নামে একটি সাধারণ হোটেলে আমাদের অফিস স্থাপন করি এবং বিভিন্ন সদস্যদের সাথে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য প্রচার করতে থাকি। আমার বিশ্বাস প্রায় সবগুলো দেশের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। এছাড়া আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের প্রচার কাজ চালাতে থাকি। আমি হারভার্ড, এম,আই, টি, ইয়েল, কলাম্বিয়া, নিউইয়র্ক সিটি এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষকদের কাছে বক্তৃতা করি। শত শত শিক্ষক ও ছাত্রদের সমাবেশে বক্তৃতা করি। প্রতিটি শ্রোতা ছিলেন আমাদের পক্ষে। এসময় আমাকে সাহায্য করতেন কাজী রেজাউল হাসান। তিনি ইঞ্জিনিয়ার। তিনি অনেকগুলি ওয়াকিটকি পাঠান মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য করার জন্য। আমরা হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি হিসেবে বোষ্টনে ছিলাম। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান ইথিয়েল ডি সোলাপুল একটি ভোজসভার আয়োজন করেন যেখানে প্রায় ২৫জন অধ্যাপক উপস্থিত ছিলেন। এই অধ্যাপকগণ ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী যেহেতু আমেরিকান ষ্টেইট ডিপার্টমেণ্টের পরামর্শদাতা হিসেবে সকলেই কার্যরত ছিলেন। তাঁরা নিজেরাও আগ্রহী ছিলেন যেহেতু সরাসরিভাবে বাংলাদেশের অবস্থা জানার এটি একটি সুযোগ ছিল। হারভার্ড ল-স্কুলে আমি একটি বক্তৃতা দিই। আমি বলি যে, বাংলাদেশ স্বাধীন, কেবলমাত্র স্বীকৃতির অপেক্ষাই রয়েছে। এম,আই, টি অডিটোরিয়ামে আমি প্রায় দেড় ঘণ্টা বক্তৃতা দিই এবং আমাদের পক্ষে তুমুল জনমতের লক্ষণ দেখতে পাই। আমি বারবার বলি যে, আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। কিন্তু আমার জন্মভূমির উপর যা ঘটছে তারপর আমার পক্ষে চুপ করে থাকা সম্ভব নয়। একটি আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন জাতি হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় ছিল না। আমার পক্ষে একটি বড় সুবিধা ছিল যে, আমি যখন বাংলাদেশের পক্ষে আমার আনুগত্য