পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
৫১

প্রকাশ করি তখন আমি ছিলাম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অতএব তারা আমাকে সেইভাবে সম্মান দেখায়।

 নিউইয়র্কে ফিরে এসে আবার লবিং-এ আমরা ব্যস্ত হই। এ সময় বাংলাদেশ সীমান্তে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে মিত্র বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতির জন্য প্রচার চালায়। আমরা বাধা দেই। আমরা বলি একটি নির্যাতিত জাতি যখন জয়লাভ করতে যাচ্ছে তখন বিরতি অসম্ভব। কিন্তু আজ যখন দেশ শত্রুমুক্ত হতে যাচ্ছে তখন যুদ্ধবিরতির প্রশ্ন ওঠে কেন? আমি নিউইয়র্কের জাতিসংঘের দফতরে রয়টার অফিসে বেশীরভাগ সময় থাকতাম। যেহেতু অবস্থা সম্পর্কিত শেষ খবর ওখানেই পাওয়া যেতো। এমন সময় ১৬ই ডিসেম্বর টেলেক্স দেখলাম, খবর এল যে, নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেছে। ঢাকা মুক্ত। বাংলাদেশ স্বাধীন। এই খবর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল। আমি ধীর চিত্তে, শান্ত মনে এই সংবাদ গ্রহণ করলাম এবং পরম করুণাময় আল্লাহর হাজার শুকরিয়া আদায় করলাম।

—আবু সাঈদ চৌধুরী
ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৪।


ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম

 ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদে এবং ১৭ই ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন আনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ উভয় পরিষদে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন একটি দলের পক্ষে এত বেশী আসন লাভ করার নজির ইতিপূর্বে আর দেখা যায়নি। নির্বাচনে বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগের ৬ দফার পক্ষে সম্পূর্ণভাবে তাদের রায় ঘোষণা করেন।

 নির্বাচনের পর ’৭১ সালের ৩রা জানুয়ারী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের কেউ বেঈমানী করলে জ্যান্ত কবর দেবেন। জনসভার প্রারম্ভে বঙ্গবন্ধু নবনির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের শপথ গ্রহণ করান। এই ধরনের গণশপথ পৃথিবীর ইতিহাসে ব্যতিক্রমী ঘটনা। এর কিছুদিন পর নির্বাচনপূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শাসনতন্ত্র রচনার জন্য আওয়ামী লীগ সংসদীয় দল একটি সাব-কমিটি গঠন করে। দলের নির্দেশ অনুযায়ী সাব-কমিটি শাসনতন্ত্র রচনার কাজ শুরু করে। ২৭শে ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার উদ্দেশ্যে এক বিরাট প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় আসেন। নির্বাচনের পর পর ভূট্টো ৬ দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র রচনার বিরোধিতা শুরু করেন। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসার জন্য আলোচনার দরজা বঙ্গবন্ধু খোলা রাখেন। ভুট্টো ও তার প্রতিনিধিদলের সাথে সর্বপ্রকার যোগযোগ রক্ষার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের হুইপ হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমার ওপর অর্পণ করেন। ভূট্টো ও তার প্রতিনিধিদলকে যথেষ্ট সম্মান ও সৌজন্য দেখানো হয়। ভুট্টো বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কয়েক দফা বৈঠকে মিলিত হন। আমাদের দলের কয়েকজন নেতা এবং ভুট্টোর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা একদিন নৌপথে লঞ্চের মধ্যে এক বৈঠকে মিলিত হন।

 ভুট্টোর কয়েকজন বিশিষ্ট সহকারীর সাথে আমার আলোচনা হয়। এদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় সহকারী ব্যারিষ্টার কামাল আছফার আমার সার্কিট হউস রোডের বাসভবনে আমার সাথে দেখা করেন। ভুট্টোর দলের নেতাদের সাথে আলোচনার পর একটা জিনিস বুঝতে পারি। তারা ইতিমধ্যেই ধরে নিয়েছে যে, বাংলাদেশ স্বধীন হয়ে যাবে। ভুট্টো ও তার সহযোগীদের অনমনীয় মনোভাব থেকে এটা সুস্পষ্ট বুঝা গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আলোচনার পূর্বে ও পরে ভুট্টোকে ইণ্টারকণ্টিনেণ্টাল হোটেল থেকে আনা-নেয়ার দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। এক দিন আলোচনার পর ভুট্টোকে নিয়ে গাড়ীতে করে যখন হোটেলে যাচ্ছিলাম, তখন তাকে ভীষণ গম্ভীর দেখি। আমি গাড়ীতেই ভুট্টোকে বলি আমাদের এমন একটি শাসনতন্ত্র রচনা করা উচিত যাতে বাংলাদেশের এবং পশ্চিম