পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
৬৫

সৈন্যের বিরুদ্ধে অবরোধ সৃষ্টি করছে। সেখানে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি। এসব খবর শুনে আমরা দু’জন আশান্বিত হই।

 শাহ ফরিদ আমাকে চিনল কিনা বুঝলাম না। ঢাকার পরিস্থিতি তাকে জানাই। আমি বললাম, আমরা আওয়ামী লীগ হাই কম্যাণ্ডের পক্ষ থেকে এই এলাকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে এসেছি। পরে শাহ ফরিদ পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।

 রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের পুলিশ ও বিডিআরদের কুষ্টিয়ার মুক্তিসংগ্রামীদের সাথে মিলিত হবার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি। আরো কিছুক্ষণ এগিয়ে রিক্সা ছেড়ে দেই। স্থানীয় একটি বাসে অন্যান্য কয়েকজন যাত্রীর সাথে আমরাও উঠি। কিছুদূর যেয়ে বাসটি আর যেতে পরলো না। এখন আমার সাথে অনেক যাত্রী। কামারখালী পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।

 সামনে নদী পার হতে হবে। একটি মাত্র খেয়া নৌকা। যাত্রী বেশি। নদীর স্রোত অত্যন্ত প্রবল। নৌকা প্রায় ডুবে যাওয়ার অবস্থা। অনেক কষ্টে নদী পার হলাম। আকাশে চাঁদ ঝলমল করছে। হাঁটতে আমাদের বেশ সুবিধা হলো। এখান থেকে মাগুরা ৮ মাইল। আমাদের সাথে আরো অনেকে রয়েছে। তারা ঢাকা থেকে এসেছে। এদের মধ্যে কিছু ছাত্র-যুবকও রয়েছে। আমরা এদের মধ্যে অচেনা রয়ে গেছি, যেমনি ছিলাম সারা পথে। ঘনিষ্ঠ কর্মী ছাড়া কারো কাছে নিজেদের পরিচয় দেইনি।

 সন্ধ্যাবেলা কামারখালী ঘাটে রেডিও শুনি। রেডিওর কাছে বহু লোক ভিড় করে। বেতারে টুকরো টুকরো খবর প্রচার করা হয়। ‘মুক্তিবাহিনীর গুলিতে টিক্কা খান আহত,’ পাক বাহিনী পালিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি। বেতারে সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানানো হয়।

 মাগুরা খালের ওপর কাঠের পুলটি পুড়তে দেখলাম। শত্রুদের গতিরোধ করার জন্য নিজেরাই পুল পোড়াচ্ছে। টর্চের আলোতে ওপারে সঙ্গীন দেখা গেল। বললাম, আমরা বন্ধু। পার হবার জন্য একটি মাত্র ছোট নৌকা ছিল। দুই জনের বেশী নৌকায় ওঠা যায় না। আমরা দুইজন সকলের শেষে পার হই।

 ওপারে গেলে সকলের দেহই তল্লাশি করা হলো। আমার পর তাজউদ্দিন ভাই-এর পালা। মুখের দিকে তাকিয়েই তাকে জড়িয়ে ধরলো। নেতাকে চিনতে পেরেছে। তাজউদ্দিন ভাইও তাকে জড়িয়ে ধরেন।

 রাত তখন অনেক। একটি রিক্সাওয়ালাকে বাড়ী থেকে ডেকে আনা হলো। আমরা দু’জনে রিক্সায় আর সে হেঁটে চলে। অনেক রাতে আমরা আওয়ামী লীঘ নেতা সোহরাব হোসেনের বাড়ি পৌঁছি। সোহরাব ভাই-এর স্ত্রী রাতের বেলা আমাদের জন্য রান্না করেন। খেতে খেতে ভোর হয়ে গেল।

 সোহরাব হোসেন এখান থেকে সংগ্রাম পরিচালনা করছেন। মাগুরার মহকুমা প্রশাসক কামাল সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। স্থানীয় কর্মীরা তার ভূয়সী প্রসংসা করলেন।

 সিদ্দিকী আমার পূর্ব পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অন্যান্য কয়েকজনের সাথে সিদ্দিকীকেও বহিস্কার করা হয়েছিল। আমি তার পক্ষে মামলার কৌঁসুলি ছিলাম। পরবর্তীকালে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালেও সিদ্দিকী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

 আমরা দু’জন ও সোহরাব ভাই জীপযোগে জেলা বোর্ডের রাস্তা দিয়ে ঝিনাইদহ পৌঁছি। সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আজিজের বাসায় উঠি। আমরা সেখানে পৌঁছে এসডিপিও মাহবুবউদ্দিনকে খবর পাঠাই। মুক্তিযুদ্ধকালে মাহবুবের ভূমিকা ছিল স্বর্ণোজ্জ্বল। পরে তিনি ঢাকার পুলিশ সুপার হন।

 মাহবুব ঝিনাইদহে কণ্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। আমাদের দেখে খুবই উৎফুল্ল হলো। এই কণ্ট্রোল রুম থেকে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। যশোর সেনানিবানের