পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

78 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ২১ আগষ্ট, ১৯৭১ ... আজ বাংলাদেশ সমস্যা একটি গুরুতর আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানী শাসক চক্র শত প্রচেষ্টাতেও বাংলাদেশের ঘটনাবলীকে মৃত পাকিস্তানের পচা গলিত লাশের তলায় ঢাকা দিয়ে রাখতে পারেনি। বিশ্বের সকল চিন্তাশীল, বুদ্ধিজীবী, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবর্গের কাছেও এই তথ্যটি আজ অজানা নয়। আর ঠিক এই কারণেই মার্কিন সিনেটের আরও একজন প্রভাবশালী সদস্য রিপাবলিকান দলের মিঃ চার্লস পার্সি মন্তব্য করলেনঃ পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে। আর কোন অবস্থাতেই দ্বিখণ্ডিত পাকিস্তানে জোড়া লাগানো সম্ভব নয়। রিপাবলিকান সিনেটর পার্সি সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তান সফরে এসেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা নিজের চোখে দেখে গেছেন। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিম বঙ্গের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোর তিনি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি ভারতীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি পাকিস্তানের জঙ্গী সরকারের হোমড়া-চোমড়াদের সঙ্গেও কথা বলে দেখেছেন এবং দেখেশুনেই তিনি বলেছেনঃ এখন আর যাই হোক, একথা কল্পনাও করা যায় না যে পাকিস্তান আবার বেঁচে উঠবে। আগের অবস্থা ফিরে আসবে এ কথা চিন্তা করাও অসম্ভব। পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক বাঙালীর মনোভাব একই রকম। বাঙালীদের কাছে পাকিস্তানীরা বিদেশী হানাদার ছাড়া আর কিছুই নয়। সিনেটর চার্লস পার্সি বলেনঃ বাঙালী জাতি আজ যে ইস্পাতকঠিন সংকল্প নিয়ে লড়াই করবে তা একটি বিরাট ও মহৎ সংকল্প। আমি আশা করি পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর নায়করা এটা উপলব্ধি করবে এবং ই উপলব্ধির উপরেই তাদের বাঁচা-মরা নির্ভর করছে। সিনেটর চার্লস পার্সি বলেনঃ আমি পাকিস্তানী সামরিক সরকারের নেতাদের এ কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসনে তারা যদি আর এক পা অগ্রসর হয় তাহলে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। তারা যদি তথাকথিত বিচারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণদণ্ড দেয় তাহলে পৃথিবীর কেউ-ই তাদের ক্ষমা করবে না। ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ ... বাংলাদেশ পরিস্থিতির এই ক্রমাবনতিতে পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষ আজ দারুণ উদ্বিগ্ন। বিশ্বজনতার এই উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল উথান্টের সাম্প্রতিক একটি বিবৃতিতে। গত ১৯শে সেপ্টেম্বরে এক বিবৃতিতে তিনি বিশ্বের রাষ্ট্রবর্গের প্রতি এক দারুণ হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেনঃ বাংলাদেশের ঘটনাবলী বর্তমানে যেভাবে জটিল হয়ে পড়ছে সেখানকার পরিস্থিতি বর্তমানে যেভাবে দ্রুত অবনতির দিকে গড়িয়ে চলেছে এবং এর ফলে প্রতিনিয়ত যেভাবে জটিল থেকে জটিলতর সমস্যাদির উদ্ভব ঘটছে তাতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর পক্ষে দারুণ উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে।... তিনি বলেনঃ বাংলাদেশ পরিস্থিতি এখন এত দ্রুত অবনতির দিকে এগিয়ে চলেছে যে, এ ব্যাপারে বিলম্ব হলে যে কোন রকমের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে এবং তা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সীমার মধ্যে সীমিত থাকবে না। তিনি বলেনঃ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর পক্ষে এটা দারুণ এক উদ্বেগের ব্যাপার। বাংলাদেশের মূল সমস্যার সমাধান আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে অবিলম্বে এগিয়ে আসবে হবে। সেক্রেটারী জেনারেল উথান্ট বলেনঃ গত ১৯৭০ সালের নভেম্বরের সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ প্রাণহানি ঘটেছে। তারপর সেখানে শুরু হয়েছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযান এবং তাতেও লক্ষ