পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8|| বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড থেকে ২৫ ফুট উচু দেয়াল তোলা হয়েছে। ঢাকা রেডিওকে বর্তমানে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর ঢাকার রাস্তায় কেউ হাঁটে না। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত শহরের রাস্তায় কেবল পাকিস্তানী সৈন্য, পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ও কুকুর ছাড়া আর কেউ চলাচল করে না। মানুষ সেখানে পাকিস্তানী সৈন্যদের অত্যাচার এতই ভীবসন্ত্রস্ত যে কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না। বিদেশীদের সঙ্গে কথা বলতে তারা ভীষণ ভয় পায়। কারণ আজও প্রতিদিন শহরে ধরপাকড় চলছে। কখন কোন মুহুর্তে সেখানে কার জীবনে মৃত্যু নেমে আসবে না কেউ জানে না। প্রায় প্রতিরাতেই বোমা বিস্ফোরণ ও খণ্ড লড়াইয়ের শব্দ শোনা যায়। গোটা শহরটা এখন বদ্ধভূমিতে পরিণত। বিশ্বব্যাঙ্ক প্রতিনিধি বলেনঃ এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে সেখানে থেকে কাজ করা আমার পক্ষে যুক্তিগতভাবে, নীতিগতভাবে কিংবা নৈতিকতার দিক থেকে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন , পাকিস্তানে আমি আর কোনদিন ফিরে যাবো না। বাংলাদেশ থেকে হানাদার পাকিস্তানীরা বিতাড়িত হলে আমি বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করতে যাবো। আমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে কাজ করবো। দীর্ঘ ছ'বছর থাকার পর আমি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসেছি। তাদের সঙ্গে আমার হৃদয়ের বন্ধন অনেক গভীর। ৫ অক্টোবর, ১৯৭১ ...বৃটিশ কমন্সসভার অত্যন্ত প্রভাবশালী সদস্য মিঃ ফ্রেভ ইভান্স বলেছেনঃ বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। জাতিগতভাবে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ভাষা ও সামাজিকতার দিক থেকে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন, সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র- সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি জাতি। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের এই স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও বাঁচার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যেই বাঙালীরা আজ হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। তারা আজ যে লড়াই করছে তা হলো এ দেশকে মুক্ত করার লড়াই- শত্রমুক্তির লড়াই। দেশকে শত্রমুক্ত করার জন্য সাড়ে সাত কোটি বাঙালী যে যুদ্ধ করছে তা তাদের বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। আর এই অধিকার প্রকৃতপক্ষে মানুষের জন্মগত অধিকার। বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, লুণ্ঠন ও নারী-নির্যাতনের ফলে যে দুই লক্ষাধিক শরণার্থী সীমান্তের ওপারে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে তাদের অবস্থা নিজের চোখে দেখে যাবার জন্যে এবং কি নারকীয় নির্যাতনের ফলে তারা তাদের সাতপুরুষের ভিটেমাটি ফেলে উদ্বাস্তু শিবিরে দিন কাটাচ্ছে তা জানার জন্যে বৃটিশ কমন্সসভার বিশিষ্ট সদস্য মিঃ ফ্রেড ইভান্স লণ্ডন থেকে পশ্চিম বাংলায় গিয়েছিলেন। একাধিক শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতায় ফিরে গিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের ব্যাপারে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের অসহনীয় নিস্ক্রিয়তার সমালোচনা করে তিনি বলেনঃ বাংলাদেশ সমস্যার সমাধানে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেরই এগিয়ে আসা উচিত। মিঃ ফ্রেড ইভান্স বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তৃতায় বৃটিশ সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেনঃ অবিলম্বে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান না হলে এশিয়ার এই অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হবে। অবিলম্বে এর সমাধান করতেই হবে। মিঃ ফ্রেড ইভান্স বলেনঃ বাংলাদেশের মূল সমস্যা মানবিক চেতনা ও মানবাধিকারের সমস্যা। তিনি বলেনঃ একজন গণতন্ত্রী হিসাবে বুলেটের বদলে ব্যালটের মাধ্যমেই যে কোন সমস্যার সমাধানে আমি পক্ষপাতী। বাংলাদেশ সঙ্কটের শুরুতে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী সকল মানুষের এবং সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মতো আমিও এটাই আশা করেছিলাম কিন্তু পাকিস্তানী সামরিক শক্তি সে সম্ভাবনাকে গোঁয়ারের মতো গুড়িয়ে দিয়েছে। মিঃ ফ্রেড ইভান্স বলেনঃ আমরা বৃটেনবাসী ১৯৩৯ সালে ফ্যাসিষ্ট জার্মানীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে